পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ֆԵՀ রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী কিন্তু এই পদে তিনি দুই মাস কাল মাত্র ছিলেন। ইতিমধ্যে রাজ্যে র্তাহার এত শক্ৰ হইয়াছিল যে শীঘ্রই তঁাহাকে তাহার জন্মভূমি ফ্লোরেন্স নগরী হইতে জন্মের মতো নির্বাসিত হইতে হইল। এই নগরে প্রবেশাধিকার পাইবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু কিছুতেই কৃতকার্য হইতে পারেন নাই। অবশেষে যখন তাহার কবিত্বের খ্যাতি চারি দিকে ব্যাপ্ত হইলতখন ফ্লোরেন্সবাসীরা তাহাকে অনুতপ্ত বেশে দোষ স্বীকার করিতে করিতে নগরে প্রবেশ করিতে অনুমতি দিয়াছিল, কিন্তু তিনি তাহাতে সম্মত হইলেন না। চিরজন্ম নির্বাসনে পরপ্রত্যাশী হইয়া তাঁহাকে কালযাপন করিতে হইয়াছিল। এইরূপে যখন বিয়াত্ৰিচেকে লইয়া হৃদয়ে তাহার ঝটিকা চলিতেছিল, তখন বাহিরের রাজ-বিপ্লব ঝটিকায় তিনি যে উদাসীন ছিলেন তাহা নহে। অনেক । দিন রাজ্য সম্বন্ধে মগ্ন থাকিয়া বিয়াত্ৰিচের উদেশে যোগ্যতার কবিতা লিখিতে পারেন নাই। কিন্তু কোনো বিশেষ সময়ে সহসা তাহার খ্যাতি মান যশের দুরাশা ছুটিয়া গেল ও মহাকাব্য এইরূপে আরম্ভ করিলেন জীবনের মধ্যপথে দেখিানু সহসা, ভ্ৰমিতেছি। ঘোর বনে পথ হারাইয়াসে যে কী ভীষণ অতি দারুণ গহনস্মৃতি তার ভয়ে মোরে করে অভিভূত। সে ভয়ের চেয়ে মৃত্যু নহে ভয়ানক! জীবনের মধ্য পথে, অর্থাৎ যখন তিনি তাহার পয়ত্ৰিশ বৎসর বয়সে পৌঁছিয়াছেন- তিনি এই কাব্য লিখিতে আরম্ভ করেন। ভীষণ অরণ্য আর কিছুই নহে- সে র্তাহার রাজ্য-শাসন-কাৰ্য, খ্যাতি-প্ৰতিপত্তির নিমিত্ত সংগ্রাম। অর্ধ অজ্ঞানের মতো হইয়া যখন তিনি এই বনে ভ্ৰমণ করিতেছেন এমন সময়ে একটি চিতাবাঘ দেখিতে পাইলেন এবং এইরূপ পৰ্যায়ক্রমে একটি সিংহ ও ক্ষুধাতুরা এক নেকড়িয়া ব্যাস্ত্রী দেখিতে পাইলেন। এ সমস্তই রূপক মাত্র, চিতাব্র্যাঘ্ৰ সুখতৃষা, সিংহ দুরাশা ও নেকড়িয়া ব্যাস্ত্রী লোভ। এইরূপে এই সকল রিপুদিগের দ্বারা ভীত হইয়া অরণ্যে ভ্ৰমণ করিতেছিলেন, হেনকালে সহসা দেখিানু এক জন । বহুদিন মৌন রহি ক্ষীণ স্বর তার“জীবিত বা মৃত আত্মা যে হও-না কেন সে অরণ্য মাঝে যাবে হেরিনু তাহারে! ইনি আর কেহ নহেন- কবি বজিলের প্ৰেতাত্মা। তিনি দান্তেকে স্বৰ্গ ও নরক প্ৰদৰ্শন করাইতে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইবেন বলিয়া প্ৰস্তাব করিলেন। কিন্তু দান্তে ভয় প্রকাশ মহাছায়া কহিলেন “মিথ্যা আশঙ্কায় হৃদয় হয়েছে তব বৃথা অভিভূত- । পশু যথা ভয় পায় সন্ধ্যার অাঁধারে হেরিয়া অলীক ছায়া- তেমনি মানুষ মহান সংকল্প হতে হয় গো বিরত বৃথা ভয়ে। এ আশঙ্কা করিবারে দূরকহি তোরে কোথা হতে এলেম হেথায়প্ৰথমে কাহার কথা করিয়া শ্রবণ তোরে দয়া হল মোর, কহি তোরে তাহা! পরলোকে থাকে যারা সংশয় আধারে