পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য Sbrd একদিন এইখানে আসিবে কি ভাবি, যেইখানে একদিন মুগ্ধ নেত্ৰ মোর উজ্বল সে নেত্ৰ-’পরে রহিত চাহিয়া! হয়তো নয়ন তার আপনা। আপনি খুজিয়া খুজিয়া মোরে চারি দিক পানে আমার কবর সেই পাইবে দেখিতে! হয়তো একটি তার বিষাদ-নিশ্বাস জাগাইবে মোর ”পরে স্বর্গের করুণা! এখনো সে মনে পড়ে— যবে পুষ্প বন বসস্তের সমীরণে হইয়া বিনত সুরভিকুসুমরাশি করিত বর্ষণ, তখন রক্তিম-মেঘে হইয়া আবৃত বসিতেন প্রকৃতির উপহার মাঝে। কতু বা বসনে তঁর কভু বা কুস্তলে প্রকৃতি কুসুম-গুচ্ছ দিত সাজুইয়া। চারি দিকে তীর, কভু তটিনী-সলিলে— কীভূ বা তৃণের পরে পড়িত ঝরিয়া পুষ্প বন হতে কত পুষ্প রাশি রাশি! ‘প্ৰেম হেথা করিয়াছে সাম্রাজ্য বিস্তার!” পূর্বেই বলিয়াছি, পিত্রার্কার মনে মনে বিশ্বাস ছিল, বা এক-একবার বিশ্বাস হইত। যে লরা তঁহাকে ভালোবাসে। অনেক কবিতাতেই তাহার এই বিশ্বাস প্রকাশ পাইত। অনুরাগের নেত্র অনুরাগের কাহিনী যেমন পড়িতে পারে, যুক্তিকে তাহার নিকট অনেক সময় পরাস্ত মানিতে হয়। লরার দৃঢ় দৃষ্টির মধ্যে হয়তো পিত্রার্ক গুপ্তপ্রেমের আভা দেখিতে পাইয়াছিলেন, যুক্তি এখন তাহা অনুধাবন করিতে পারিতেছে না, হয়তো তখনাে পারিত না। এক সময়ে পিত্রার্ক যখন দূর-দেশে ভ্ৰমণ করিবার জন্য যাইতেছিলেন, তখন লারাকে দেখিয়া তিনি কহিতেছেন- । সুকোমল স্নান ভাব কপোলে তঁহার t ঢাকিল সে হাসি তীর, ক্ষুদ্র মেঘ যথা! প্ৰেম হেন উথলিল হৃদয়ে আমার আঁখি কৈল প্ৰাণপণ কহিবারে কথা! তখন জানিনু আমি স্বরগ-আলয়ে কী করিয়া কথা হয় আত্মায় আত্মায়; আমি ছাড়া আর কেহ দেখে নি গো তাঁয়! নীরবে আমারে যেন কহিল সে এসে, ‘কে গো হায় বিশ্বাসী এ বন্ধুরে আমার লইয়া যেতেছে ডাকি এত দূর-দেশে?”