পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩০৪ – রবীন্দ্ররচনাবলী ছন্দোরচনার যে নিগুঢ় রহস্য তাহা প্রতিভাসম্পন্ন ভাস্করই জানেন এবং হ্মাত্রে-রচিত মূর্তির মধ্যে ve বেশবিন্যাস এবং উদ্যতলঘুসুন্দর ভঙ্গিটির মধ্য হইতে সেই বিচিত্র অথচ সরল সংগীতটি নীরবে উধৰ্ব্বদেশে ধবনিত হইয়া উঠিতেছে, যেমন করিয়া একটি শুত্ৰ বিকচ রজনীগন্ধা আপন উদ্যত বৃন্তটির উপর ঈষৎ-হেলিত সরল ভঙ্গিতে দাঁড়াইয়া স্তবন্ধনিশীথের নক্ষত্ৰলোকমধ্যে পরিপূর্ণতার একটি রাগিণী প্রেরণ করে। পূর্বেই বলিয়াছিলাম সমালোচনা করিতে গেলে কতকটা ভাবোচ্ছাস প্রকাশ হইবে মাত্র, তাহাতে কোনো পাঠকের কিছুমাত্র লাভ হইবে কিনা সন্দেহ। মূর্তিটির রচয়িতা শ্ৰীযুক্ত গণপতি কাশীনাথ হ্মাত্রের জীবন-সম্বন্ধে তাহার পত্রে যে বিবরণ পাওয়া গিয়াছে তাহা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। সংক্ষিপ্ত হইবারই কথা। তঁহার বয়স বাইশ মাত্র। তিনি জাতিতে সোমবংশী ক্ষত্ৰিয়। ক্ষাত্ৰে দেশী ভাষা শিক্ষার পর ইংরাজি অল্পই অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। ছবি আঁকা শিখিতে অত্যন্ত আকাঙ্ক্ষা বোধ করাতে অন্য-সকল পড়া ছাড়িয়া ক্ষাত্রে বোম্বাই শিল্পবিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি সকল পরীক্ষাতেই ভালোরাপে উত্তীর্ণ হইয়া বারংবার পারিতোষিক প্রাপ্ত হন। বোম্বাই শিল্পপ্রদর্শনীতে মধ্যে মধ্যে মূর্তি প্ৰদৰ্শন করাইয়া ক্ষাত্রে অনেকগুলি রৌপ্যপদক লাভ করিয়াছেন। ‘মন্দিরাভিমুখে’ নামক মূর্তি রচনা করিয়া হ্মাত্রে বরোদার মহারাজার নিকট হইতে ২০০ টাকা পুরস্কার প্রাপ্ত হন; এই মূর্তিটি বোম্বাই শিল্পবিদ্যালয় ১২০০ টাকায় ক্রয় করিয়া চিত্রশালায় রক্ষা করিয়াছেন। এরূপ মূর্তির কীরূপ মূল্য হওয়া উচিত তাহা আমাদের পক্ষে বলা অসাধ্য, কিন্তু মাত্রে ইহাকে যৎকিঞ্চিৎ বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন এবং সম্ভবত ইহা যৎকিঞ্চিৎই হইবে। ” তরুণ শিল্পী আমাদের দেশে ভাস্কর্য প্রভৃতি কলাবিদ্যার আদর নাই বলিয়া আক্ষেপ করিয়াছেন। ভারতবর্ষে সেরাপ আক্ষেপ করিবার বিষয় অনেক আছে। অতএব এ সম্বন্ধে আমরা তাহাকে কোনোপ্রকার সান্তুনা দিতে পারি না। যখন আমাদের দেশে গুণী বাড়িবে এবং ধনীও বাড়িতে থাকিবে তখন ধনের দ্বারা গুণের আদর পরিমিত হইতে পরিবে। আপাতত আধাপেটা খাইয়া আধা-উৎসাহ পাইয়া এমন-কি, গুণহীন অযোগ্যব্যক্তিদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিদ্বেষ-কুশাগ্রের দ্বারা বিদ্ধ হইয়া আপনার কাজ করিয়া যাইতে হইবে। যেখানে সকল অবস্থাই অনুকুল, সেখানে বড়ো হইয়া বিশেষ গৌরব নাই। আধুনিক যুরোপেও অনেক বড়ো বড়ো চিত্ৰলেখক ও ভাস্করকে বহুকাল অনাদর ও অনাহারের মধ্যে কাজ করিতে হইয়াছে, ভাগ্যের সেই প্রতিকূলতাও বশীভূত শত্রুর ন্যায় প্রতিভাকে বহুতর বহুমূল্য উপহার প্রদান করিয়াছে। । * দুই-একজন পার্সি ভদ্রলোক কাজ দিয়া স্মাত্রেকে সাহায্য করিতেছেন। স্মাত্রে আশা করেন বঙ্গভূমিও এরূপ সাহায্যদানে কৃপণতা করিবেন না। প্ৰদীপ৷ ζοξ. Σε ο ά