পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধর্ম/দৰ্শন ASSId অবিরোধী। কর্ম হইতে কর্ম, অনুরাগ হইতে অনুরাগেই লইয়া যায়। এইজন্য শংকরাচার্য বলেন ‘অবিরোধিতয়া কর্ম নাবিদ্যাং বিনিবর্তয়েৎ ।” কিন্তু চন্দ্ৰনাথবাবু যে লয়তত্ত্বের অবতারণা করিয়াছেন, সে লয় প্ৰাপ্তির পক্ষে কর্মসোপান “একান্ত আবশ্যক।’ তাহার কারণ, চন্দ্ৰনাথবাবু ব্ৰহ্মাকে মুখে বলেন নিগুণ, ভাবে বলেন। সগুণ; মুখে বলেন লয়, কিন্তু তাহার অর্থ করেন সম্প্রসারণ। ་༥ আবার বলেন, লয়তত্ত্ববাদীরা “যে জগৎকে অসৎ ও মায়া বলিয়াছেন সে কেবল ব্ৰহ্মোর তুলনায়। নহিলে বলে দেখি কেন তঁাহারা এই অসৎটাকে এত ভয় করিয়া গিয়াছেন।” অর্থাৎ চন্দ্রনাথবাবুর মতে জগৎটা প্রকৃতপক্ষে অসৎ নহে। শঙ্করাচার্য বলিয়াছেন, শুক্তিকাকে যেমন রাজত বলিয়া ভ্ৰম হইয়া থাকে। মোহমুদগরের নিম্নলিখিত শ্লোকটি সকলেরই নিকট সুপরিচিত অষ্টকুলাচল সপ্ত সমুদ্রা ব্ৰহ্মপুরন্দরদিনকররুদ্রাঃ, न् उ९ न्छ्रं नां२ (ब्लोंद: তদপি কিমৰ্থং ক্রিয়াতে শোকঃ । । তাহা ছাড়া, “তুলনায় মিথ্যা’ বলিলে বিশেষ কিছুই বুঝায় না। মিথ্যা মাত্রেই তুলনায় মিথ্যা। মিথ্যার যদি স্বতন্ত্র অস্তিত্ব থাকিত, তবে তো সে সত্যই হইত। অতঃপর সগুণ নিগুণ লইয়া তর্ক। ] লয়তত্ত্ববাদীরা ব্ৰহ্মাকে নিগুণ, নিস্ক্রিয়, নিত্য, নির্বিকল্প, নিরঞ্জন, নির্বিকার, নিরাকার, নিত্য, মুক্ত ও নির্মল বলিয়া থাকেন। এইজন্য ব্ৰহ্মাত্ব লাভের জন্য র্তাহারা উপদেশ দিয়া থাকেন‘ঔদাসীন্যমভীষ্মস্যতাং ||” অর্থাৎ অনুরাগ ছাড়িয়া ঔদাসীন্য অবলম্বন করিলে ব্রহ্মের অনুরূপ হওয়া यीश ! O এদিকে আবার অন্যমতাবলম্বীরা ঈশ্বরকে ভক্তবৎসল বলেন। সে ঈশ্বর উদাসীন নহেন, কারণ তিনি পাপীর প্রতি ভীষণ ও পুণ্যাত্মার প্রতি প্ৰসন্ন। তিনি দৈত্যকে দালন করেন ও প্ৰহাদকে রক্ষা করেন। তিনি নানা অবতার রূপ ধারণ করিয়া পৃথিবীকে নানা বিপদ হইতে উদ্ধার করেন। কেবল যদি তিনি চিদানন্দময় হন, কেবল যদি তাহার। আপনাতেই আপনার আনন্দ হয়, তাহার যদি আর কোনো গুণ, আর কোনো স্বরূপ না থাকে এবং তঁহার নিকট তিনি ছাড়া আর কিছুই স্থান না পায় (যথা- জ্ঞাতৃজ্ঞানজ্ঞেয়ভেদঃ পরাত্মনি ন বিদ্যতে। চিদানন্দৈকরূপত্বাব্দীপ্যতে দুষ্মণ হি) তবে ঈশ্বর কন্দ্র, ঈশ্বর দয়াময়,ঈশ্বর সৃষ্টিকর্তা, ঈশ্বর ভক্তবৎসল, এ সমস্ত কথাই থ্যা। কিন্তু চন্দ্রনাথবাবু জগৎকে ঈশ্বরের সৃষ্টিকৌশল” “ভগবানের লীলা’ বলিতে কুষ্ঠিত হন না। এবং ব্যাখ্যা করিবার সময় বলেন, যদি ইহা তঁহার লীলাই না হইবে, যদি তাহার সৃষ্টিই না হইবে, যদি নিতান্ত মায়া এবং অসৎ হইবে, তবে ইহাকে পণ্ডিতেরা কেন এত ভয় করিতে বলিয়া গিয়াছেন? আমার জিজ্ঞাস্য এই যে, ইহা যদি ভগবানের লীলা হয়, সৃষ্টি হয়, তবেই বা ইহাকে ভয় করিতে হইবে কেন; তাহার লীলা কি দানবের লীলা? তাহার সৃষ্টি কি শয়তানের সৃষ্টি? জগৎ যদি তাহার ইচ্ছা হয়, তবে সে ইচ্ছা কি মঙ্গল ইচ্ছা নহে? অতএব, যদি বল জগৎ তাহার ইচ্ছা নহে জগৎ সত্য নহে, তবেই বুঝিতে পারি মিথ্যা। জগৎকে অতিক্রম করিবার জন্য সাধনা কর্তব্য, কিন্তু যদি বল জগৎ তাহার লীলা অর্থাৎ তাহার ইচ্ছা, তবে সে ইচ্ছাকে অবিশ্বাস করিলে তঁাহার প্রতি অবিশ্বাস করা হয়। যাহারা প্রথমোক্ত মতাবলম্বী, তাহারা জগৎ হইতে জগৎবাসীদের মন ফিরাইবার জন্য ক্রমাগত বিভীষিকা দেখাইয়া থাকেন। জগতের যে অংশ হীন তাহারই প্রতি তাহারা ক্ৰমাগত দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া থাকেন। এমন-কি, সৌন্দর্যকে কদৰ্য বীভৎসভাবে আঁকিতেও চেষ্টা করেন। তাহারা বলেন, সংসারে প্রেম কপটতামাত্র; যে পর্যন্ত ধনোেপার্জনে শক্তি থাকে, পরিজনগণ সেই