পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8oS זטואול উল্টা কথাটা বলিতেন, আমরা হয়তো ঠিক ইহার উল্টা আচরণ করতাম। যাহাঁই হউক, ইহা দেখা যাইতেছে, নব্যদিগের হৃদয়ে এমন একটি ভাব প্রবেশ করিয়াছে, যাহার প্রভাবে কথায় কথায় অকাতরে তাহারা দেশীয় প্রথা ত্যাগ করিতে পারেন, তাহার প্রতি একটু দরদ থাকিলে যতটা সাবধানে যতটা বিবেচনা করিয়া কাজ করা যাইত, ততটা করা হয় না। একটা লম্বাচোড়া মত শুনিবামাত্রই অমনি তড়িঘড়ি এক-একটা দিশি প্রথাকে নির্বাসন করিতে যাওয়ার ভাবটাই ভালো নহে। প্ৰথম পক্ষ। আচ্ছা, যদি পূর্বোক্ত সংস্কারকগণ কন্যার উপরে পিতার বা স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার বাস্তবিকই স্বীকার না করেন, তবে কেন তাহারা, কন্যা যতদিন অবিবাহিত থাকে ততদিন তাহকে তাহার পিতার পদবী দেন ও বিবাহিত হইলে কেন তাহাকে তাহার স্বামীর পদবীতে ডাকেন ? যথা, অবিবাহিত কন্যার নাম কমলমণি ঘোষ, বিবাহিত কন্যার নাম কমলমণি নদী। তাহার নিজের নামের স্থায়িত্ব নাই কেন? সে কি একটা জড় পদার্থ, তাহার কি এতটুকু স্বাতন্ত্র্য নাই যে যখন যাহাঁদের ঘরে যাইবে তখনই তাহদের নাম গ্রহণ করিবে? 嗜 দ্বিতীয় পক্ষ। লেখিকা কী অর্থে “স্বাতন্ত্র্য’ শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন তাহা ঠিক বুঝা গেল না। স্ত্রীলোক বংশের পদবী গ্ৰহণ করিতে স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যের যে কী খর্বত হয় তাহাও বুঝিতে পারি না। পুরুষরা তো বংশের উপাধি গ্রহণ করেন, সেইজন্য কি তাহাদের স্বাতন্ত্র্য বিন্দুমাত্র কমিয়াছে? তৃতীয় পক্ষ। এ কেমনতরো খাপছাড়া উত্তর হইল কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। পদবী গ্ৰহণে তো স্বাতন্ত্র্যের খর্বত হয় না, কিন্তু পদবী পরিবর্তনে হয়। যত দিন স্ত্রী ঘোষ-পিতার অধীনে আছে ততদিন সে ঘোষ, আর, যখন সে বোস-স্বামীর বাড়িতে গেল তখনই সে বোস হইল, ইহাকে ‘প্রকৃতিস্থা’ লোকে স্বাতন্ত্র্যের অভাব বলে না তো কী বলে? বিবাহের পর স্ত্রীর অনুসারে স্বামীর নামেরও পরিবর্তন হয় না কেন ? স্বামীরা কর্তা বলিয়া। যাহা হউক, স্ত্রী স্বাতন্ত্র্য ভালো কি মন্দ সে কথা হইতেছে না, কথাটা এই যে যাহারা স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যের পাছে একটুখানি খর্বতা হয় বলিয়া করিতে পারেন? প্রথম পক্ষ। তবে, যদি বল পরিচয়ের সুবিধার জন্য স্ত্রীলোকদের নামের সহিত পদবী গ্রহণ বক্তব্য এই যে, ঘোষ বা বোস বলিলে আমাদের দেশে পরিচয়ের বিশেষ কী এমন সুবিধা হইল ? আমাদের দেশের ঘোষ বোস প্রভৃতি উপাধি পরিবার-বিশেষের নাম নহে, বিস্তুত শ্রেণীবিশেষের উপাধি, সুতরাং ইহাতে ব্যক্তিবিশেষগত পরিচয়ের কোনো সুবিধা হইল না। দ্বিতীয় পক্ষ। পরিচয়ের সুবিধার জন্যই যে এই প্রথা প্রচলিত হইয়াছে সে কথা লেখিকা কোথা হইতে সংগ্ৰহ করিলেন? আমি তো মনে করি, দেবী ও দাসীর প্রভেদ উঠাইয়া দিবার জন্যই এই প্রথা অবলম্বন করিতে হইয়াছে। এককালে শূদ্রেরা দাসত্ব করিত, তাই বলিয়া যখন দাসত্ব করে না। তখনও যে নামের সহিত সেই দাসত্বের স্মৃতি যত্নপূর্বক পুষিয়া রাখিতে হইবে এমন কোনো কথা নাই। দ্বিতীয়ত, এখন জাতিভেদ উঠিয়া গিয়া অসবর্ণ বিবাহ হইতেছে; একজন ব্রাহ্মণকন্যা শূদ্ৰপত্নী হইলে তিনি আপনাকে দেবী বলিবেন, না দাসী বলিবেন? এরাপ অবস্থায় তিনি কী করবেন ? ) তৃতীয় পক্ষ। স্ত্রীলোকের নামের সম্বন্ধে শ্ৰীমতী অনামিকা একটি ভুল বুঝিয়াছেন দেখিতেছি। দেবী জ্ঞানদানন্দিনী শ্ৰীলোকদিগের নামের শেষে দেবী দাসী যোগ করা লইয়া কিছুই বলেন নাই, সে বিষয়ে তাহার কী মত তাহা জানিও না। তিনি কেবল বলিয়াছেন স্ত্রীলোকদের নামের সহিত বংশের পদবী যোগ করা, কানেও খারাপ শুনায় বটে আবার তাহতে পরিচয়েরও কোনো সুবিধা হয় না। সুতরাং, এ প্রথাটি ভালো নয়। শ্ৰীমতী- যে বলিতেছেন নামের সঙ্গে দেবী দাসীর প্ৰভেদ থকা ভালো নয়, সে বিষয়ে আমারও তাঁহার সহিত কোনো বিবাদ নাই, কিন্তু শ্ৰীলোকের Y A i SVA