পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8のQ זgוצול শুভ ফল হইত। দেশের লোককে তাহারা কেবলই জ্বলন্ত উদ্দীপনায় শাক্যসিংহ ব্যাস বাল্মীকি ও ভীষ্মাৰ্জ্জুনের দোহাই দিয়া গবর্মেন্টের কাছে ভিক্ষা চাহিতে বলিতেছেন। তাহার চেয়ে সেই উদ্দীপনাশক্তি ব্যয় করিয়া তাহাদিগকে উপার্জন করিতে বলুন-না কেন? আমরা কি নিজের । সমস্ত কর্তব্য কাজ সারিয়া বসিয়া আছি যে, এখন কেবল গবর্মেন্টকে তাহার কর্তব্য স্মরণ করাইয়া দিলেই হইল। সত্য বটে পরাধীন জাতি নিজের সমস্ত হিত নিজে সাধন করিতে পারে না, কিন্তু যতখানি পারে ততখানি সাধন করাই তাহার প্রথম কর্তব্য, গবর্মেন্টের কাছে ভিক্ষা : চাওয়া বা গবর্মেন্টকে পরামর্শ দিতে যাওয়া পরে হইতে পারে, বা তাহার আনুষঙ্গিক স্বরাপে হইতে পারে। গবর্মেন্টের কাছ হইতে আজ আমাদিগকে ভিক্ষা চাহিতে হইতেছে কেন? এ প্রশ্নের উত্তর দিবার আগে আর-একটা প্রশ্ন উঠে। ভিক্ষা কে চায়? যাহার অধিকার নাই সেই চায়; স্বত্বাভাবে অর্থাভাবে এবং কোনো কোনো সময়ে বলের অভাবে যে তণ্ডুল মুষ্টিতে আমার অধিকার নাই সেই তণ্ডুল মুষ্টির জন্য আমাকে ভিক্ষা মাগিতে হয়। আমরা গবর্মেন্টের কাছে ভিক্ষা মাগিতেছি কেন? এখনও আমাদের অধিকার জন্মে নাই বলিয়া, অধিকার বিশেষের জন্য আমরা প্ৰস্তুত হইতে পারি নাই বলিয়া। যখন কেবল দুই-চারি জন নয়, আমরা সমস্ত জাতি অধিকার বিশেষের জন্য প্ৰস্তুত হইব, তখন কি আমরা ভিক্ষা চাহিব, তখন আমরা দাবি করিব, গবর্মেন্টকে দিতেই হইবে। আজ গবর্মেন্ট আমাদিগকে স্বায়ত্তশাসন দিয়াছেন, কিন্তু ভিক্ষার মতো দিয়াছেন, অনুগ্রহের মতো দিয়াছেন, যেন পরীক্ষা করিয়া দেখিবার জন্য দিয়াছেন, এ বিষয়ে যেন নানা সংশয় আছে, নানা বিবেচনার বিষয় আছে, কাল যদি দেখা যায়। এ প্ৰণালী ভালো খাটিল না, তবে কালই হয়তো ইহা বন্ধ করিতে হইবে। কিন্তু যদি আমরা সমস্ত জাতি এই স্বায়ত্তশাসন প্ৰণালীর জন্য আগে প্ৰস্তুত হইতে পারিতাম, তবে এ অধিকার আমরা অসংকোচে গ্ৰহণ করিতাম ও গবর্মেন্টকে অবিচারে দিতে হইত। এইরূপ প্ৰস্তুত হইবার উপায় কী? তাহার এক উত্তর আছে বিদ্যাশিক্ষার প্রচার। আজ যে ভাবগুলি কেবল গুটি দুই-তিন মাত্র লোক জানে, সেই ভাব সাধারণে যাহাতে প্রচার হয় তাহারই চেষ্টা করা, এমন করা, যাহাতে দেশের গায়ে গাঁয়ে, পাড়ায় পাড়ায়, নিদেন গুটিকতক করিয়া শিক্ষিত লোক পাওয়া যায়, এবং তাহদের দ্বারা অশিক্ষিতদের মধ্যেও কতকটা শিক্ষার প্রভাব ব্যাপ্ত হয়। কেবল ইংরাজি লিখিলে কিংবা ইংরাজিতে বক্তৃতা দিলে এটি হয় না! ইংরাজিতে যাহা শিখিয়াছ তাহা বাংলায় প্রকাশ করো, বাংলা সাহিত্য উন্নতি লাভ করুক ও অবশেষে বঙ্গবিদ্যালয়ে দেশ ছাইয়া সেই সমুদয় শিক্ষা বাংলায় ব্যাপ্ত হইয়া পড়ুক। ইংরাজিতে শিক্ষা কখনোই দেশের সর্বত্র ছড়াইতে পরিবে না। তোমরা দুটি-চারটি লোক ভয়ে ভয়ে ও কী কথা কহিতেছ, সমস্ত জাতিকে একবার দাবি করিতে শিখাও কিন্তু সে কেবল বিদ্যালয় স্থাপনের দ্বারা হইবে, Political agitation-এর দ্বারা হইবে না। তোমরা স্থির করিয়াছ যে, গবর্মেন্ট যখন একটা কলেজ উঠাইতে চাহিবে বা বিদ্যাশিক্ষা বিলাতে লোক পঠাইয়া, পার্ল্যামেন্টে দরখাস্ত করিয়া, ইংরাজিতে কঁাদিয়া কাটিয়া গবর্মেন্টকে বলিবে, “ওগো গবর্মেন্ট, এ কলেজ উঠাইয়ো না।” যদি গবর্মেন্ট শুনিল তো ভালো, নহিলে সমস্ত ব্যর্থ হইল। তাহার চেয়ে তোমরা নিজেই একটা কলেজ করো-না কেন ? গবর্মেন্টের কিন্তু গবর্মেন্ট কলেজের চেয়ে সেখানে একটি শিক্ষা বেশি পাইবে, তাহার নাম আত্মনির্ভর। কেবলমাত্র পরকে কাজ করিতে অনুরোধ করিবার জন্য তোমরা যে টাকাটা সঞ্চয় করিতেছি, সেই টাকায় নিজে কাজ করিলেই ভালো হয়, এই আমার কথার মর্ম। : যথার্থ দেশোপিকার ব্ৰত অতি গুরুতর ব্ৰত, সে কাজ অতি কঠিন কাজ- তাহাতে সদ্য সদ্য ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু নিশ্চয়ই ফল পাওয়া যায়। তাহাতে ছোটো ছোটো কাজে হাত দিতে