পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Str झील-दूष्मादी থাকেন, উপস্থিত ব্যক্তিদিগের আর কোনো উপকার না হউক অত্যন্ত মজা বোধ হয়। মজার বেশি হইলেই অন্ধকার দেখিতে হয়, মজার কম হইলেই মন টেকে না, যেমন করিয়া হউক মজাটুকু চাই-ই। যতই গভীর হউক ও যতই পবিত্র হউক-না কেন, জীবনের সমুদয় অনুষ্ঠানই একটি মিটিং, গোটাকতক হাততালি ও খবরের কাগজের প্রেরিত পত্রে পরিণত করিতে হইবেনহিলে মজা হইল না। গভীরভাবে অপ্ৰতিহত প্রভাবে আপনার কােজ আপনি করিব, আপনার উদ্দেশ্যের মহত্ত্বে আপনি পরিপূর্ণ হইয়া তাহারই সাধনায় অবিশ্রাম নিযুক্ত থাকিব, সুদূর লক্ষ্যে প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া দক্ষিণে বামে কোনো দিকে দৃকপাতমাত্র না করিয়া সিধা রাস্তা ধরিয়া চলিব; চটক লাগাইতে করতালি জগাইতে চেচাইয়া ভূত ভাগাইতে নিতান্তই ঘূণা, বোধ করিব, কোথাকার কোন গোরা কী বলে না-বলে তাহার প্রতি কিছুমাত্ৰ মনোযোগ করিব না। এমন ভাব আমাদের মধ্যে কোথায়! কেবলই হৈ হৈ কারিয়া বেড়াইব ও মনে করিব কী-যেন একটা হইতেছে! মনে করিতেছি, ঠিক এইরকম বিলাতে হইয়া থাকে, ঠিক এইরকম পার্লামেন্টে হয়, এবং আমাদের এই আওয়াজের চোটে গবর্মেন্টের তক্তপোশের নীচে ভূমিকম্প হইতেছে। আমরা গবর্মেন্টের কাছে ভিক্ষা করিতেছি, অথচ সেইসঙ্গে ভান করিতেছি যেন বড়ো বীরত্ব করিতেছি, সুতরাং চোখ রাঙাইয়া ভিক্ষা করি ও ঘরে আসিয়া ভাত খাইতে খাইতে মনে করি। হ্যাম্পডেন ও ক্রমোয়েলগণ ঠিক এইরূপ করিয়াছিলেন; আহারটা বেশ তৃপ্তিপূর্বক হয়। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, চোখ-রাঙনি ও বুক ফুলানির যতই ভান কর-না-কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ভিক্ষাবৃত্তিকে আমাদের উন্নতির একমাত্র বা প্ৰধানতম উপায় বলিয়া গণ্য করিব, ততক্ষণ পৰ্যন্ত আমাদের যথার্থ উন্নতি ও স্থায়ী মঙ্গল কখনোই হইবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমার অলক্ষ্য ও অদৃশ্যভাবে পিছনের দিকেই অগ্রসর হইতে থাকিব। গবর্মেন্ট যতই আমাদিগকে এক-একটি করিয়া অধিকার ও প্ৰসাদ দান করিতেছেন, ততই দৃশ্যত লাভ হইতেছে বটে, কিন্তু অদৃশ্যে যে লোকসানটা হইতেছে তাহার হিসাব রাখে কে? ততই যে গবর্মেন্টের উপর নির্ভর বাড়িতেছে। ততই যে উধৰ্ব কণ্ঠে বলিতেছি। “জয় ভিক্ষাবৃত্তির জয়’- ততই যে আমাদের প্রকৃত জাতিগত ভাবের অবনতি হইতেছে। বিশ্বাস হইতেছে চাহিলেই পাওয়া যায়, জাতির যথার্থ উদ্যম বেকার হইয়া পড়িতেছে, কণ্ঠস্বরটাই কেবল অহংকারে ফুলিয়া উঠিতেছে ও হাত-পাগুলো পক্ষাঘাতে জীর্ণ হইতেছে। পবর্মেন্ট যে মাঝে মাবে আমাদের আশাভঙ্গ কািরয়া দেন, আমাদের প্রার্থনা বিফল করিয়া দেন, তাহাতে আমাদের মহা উপকার হয়, আমাদের সহসা চৈতন্য হয় যে, পরের উপরে যতখানা নির্ভর করে ততখানাঃ অস্থির, এবং নিজের উপর যতটুকু নির্ভর করে, ততটুকুই ধ্রুব! এ সময়ে, এই লঘুচিত্ততার নাট্যোৎসবের সময়ে আমাদিগকে যথার্থ মনুষ্যত্ব ও পৌরুষ শিখাইবে কে? অতিশয় সহজসাধ ভান দেশহিতৈষিত হইতে ফিরাইয়া লইয়া যথার্থ গুরুতর কঠোব কর্তব্য সাধনে কে প্রবৃত্ব করাইবে! সাহেবদিগের বাহবাধ্বনির ঘোরতর কুহক হইতে কে মুক্ত করিবে! সে কি এই ভা সাহিত্য! এই ফটাকা আওয়াজ! সকলেই একতানে ওই একই কথা বলিতেছ। কেন? সকলে একবাক্যে কেন বলিতেছ। ভিক্ষা চাও, ভিক্ষা চাও! কেহ কি হািদয়ের কথা বলিতে জানে না কেবলই কি প্রতিধ্বনির প্রতিধ্বনি উঠাইতে হইবে! যতবড়ো গুরুতর কথাই হউক-না-কে দেশের যতই হিত বা অহিতের কারণ হউক-না-কেন, কথাটা লইয়া কি কেবল একটা রবারে গোলার মতো মুখে মুখে লোফালুফি করিয়া বেড়াইতে হইবে! এ কি কেবল খেলা! এ f তামাশা, আর কিছুই নয়। হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করিবার নাই, বিবেচনা করিবার নাইগুলিডাণ্ডা খেলানো ছাড়া তাহার। আর কোনো ফলাফল নাই! যথার্থ হাদয়বান লোক যদি থাকে। তাহারা একবার একবাক্যে বলুন- যে, যথার্থ কর্তব্য কার্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করিয়া পরে মুখাপেক্ষা না করিয়া পরের প্রশংসাপেক্ষা না করিয়া গভীরভাবে আমরা নিজের কাজ নি.ে করিব, সবই যে ফাঁকি, সবই যে তামাশা, সবই যে কণ্ঠস্থ, তাহা নয়- কর্তব্য যতই সামা হউক-না-কেন, তাহার গভীৰ্য আছে, তাহার মহিমা আছে, তাহার সহিত ছেলেখেলা করি