পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भांछ 8SR) আবশ্যকমতো দুই-একটা মিথ্যা কথা বলে ও সেই সামান্য উপায়ে সহজে কাৰ্যসাধন করিয়া লয় VK Practical (MK5 || এই যদি কথাটা হয়, তবে বাঙালিদিগকে ইহার জন্য অধিক সাধনা করিতে হইবে না। সাবধানী ভীরু লোকের স্বভাবই এইরূপ। এই স্বভাব্যবশতই বাঙালিরা বিস্তর কাজে লাগে, কিন্তু কোনো কাজ করিতে পারে না। চাকরি করিতে পারে। কিন্তু কাজ চালাইতে পারে না। উল্লিখিত শ্রেণীর practical লোক ও প্রেমিক লোক এক নয়। Practical লোক দেখে ফল কী- প্রেমিক তাহা দেখে না, এই নিমিত্ত সেই ফল পায়। জ্ঞানকে যে ভালোবাসিয়া চৰ্চা করিয়াছে সেই জ্ঞানের ফল পাইয়াছে; হিসাব করিয়া যে চর্চা করে তাহার ভরসা এত কম যে, যে-শাখা গ্রে জ্ঞানের ফল সেখানে সে উঠিতে পারে না, সে অতি সাবধান-সহকারে হাতটি মাত্র বাড়াইয়া ফল পাইতে চায়- কিন্তু ইহারা প্রায়ই বেঁটে লোক হয়- সুতরাং “প্ৰাংগুলভ্যে ফলে লোভাদুদবাহুরবি বামনঃ’ হইয়া পড়ে। বিশ্বাসহীনেরাই সাবধানী হয়, সংকুচিত হয়, বিজ্ঞ হয়, আর বিশ্বাসীরাই সাহসিক হয়, উদার হয়, উৎসাহী হয়। এইজন্য বয়স হইলে সংসারের উপর হইতে বিশ্বাস হ্রাস হইলে পর। তবে সাবধানিতা বিজ্ঞতা আসিয়া পড়ে। এই অবিশ্বাসের আধিক্য হেতু অধিক বয়সে কেহ একটা নূতন কাজে হাত দিতে পারে না, ভয় হয় পাছে কাৰ্য সিদ্ধ না হয়- এই ভয় হয় না বলিয়া অল্প বয়সে অনেক কাৰ্য হইয়া উঠে, এবং হয়তো অনেক কার্য অসিদ্ধও হয়। আমি সাবধানিতা বিজ্ঞতার নিন্দা করি না, তাহার আবশ্যকও হয়তো আছে। কিন্তু যেখানে সকলেই বিজ্ঞ। সেখানে উপায় কী! তাহা ছাড়া বিজ্ঞতার সময় অসময় আছে। বারোমেসে বিজ্ঞতা কেবল বঙ্গদেশেই দেখিতে পাওয়া যায়, আর কোথাও দেখা যায় না। শিশু যদি সাবধানী হইয়াই জন্মিত। তবে সে চিরকাল শিশুই থাকিয়া যাইত, সে আর মানুষ হইয়া বাড়িয়া উঠিতে পারিত না। কালক্ৰমে জ্ঞানার্জনশক্তির অশক্ত ডানা হইতে পালক ঝরিয়া যায়- তখন সে ব্যক্তি কোটরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া শাবকদিগকে ডানা ছটিয়া ফেলিতে বলে, ডানার প্রতি বিশ্বাস তাহার একেবারে চলিয়া যায়। এই ডানা যাহাদের শক্ত আছে তাহারাই নিৰ্ভয়ে উড়িয়া চলিয়া যায়, তাহদের বিচরণের ক্ষেত্র প্রশস্ত, তাহাদিগকেই জরাগ্রস্তাগণ sentinental বলিয়া থাকেনআর এই ডানার পালক খসাইয়া যাহারা বদনমণ্ডল গোলাকার করিয়া বসিয়া থাকে, এক পা এক পা করিয়া চলে, ধূলির মধ্যে খুঁটিয়া খুঁটিয়া খায়, চাণক্যেরা তাহাদিগকে বিজ্ঞ বলিয়া থাকেন। মানুষের প্রধান বল আধ্যাত্মিক বল। মানুষের প্রধান মনুষ্যত্ব আধ্যাত্মিকতা। শারীরিকতা বা মানসিকতা দেশ কাল পাত্ৰ আশ্রয় করিয়া থাকে। কিন্তু আধ্যাত্মিকতা অনস্তকে আশ্রয় করিয়া থাকে। অনন্ত দেশ ও অনন্ত কালের সহিত আমাদের যে যোগ আছে, আমরা যে বিচ্ছিন্ন স্বতন্ত্র ক্ষুদ্র নহি, ইহাই অনুভব করা আধ্যাত্মিকতার একটি লক্ষণ। যে মহাপুরুষ এইরূপ অনুভব করেন, তিনি সংসারের কাজে গোজামিলন দিতে পারেন না। তিনি সামান্য সুবিধা অসুবিধাকে তুচ্ছ জ্ঞান করেন। তিনি আপনার জীবনের আদর্শকে লইয়া ছেলেখেলা করিতে পারেন না- কর্তব্যের সহস্ৰ জায়গায় ফুটা করিয়া পালাইবার পথ নির্মাণ করেন না। তিনি জানেন অনন্তকে ফাঁকি দেওয়া চলে না। সত্যই আছে, অনম্ভকাল আছে, অনন্তকাল থাকিবে, মিথ্যা আমার সৃষ্টি-- আমি চোখ বুজিয়া সত্যের আলোক নিকট রুদ্ধ করিতে পারি, কিন্তু সত্যকে মিথ্যা করিতে পারি না। অর্থাৎ, ফাকি আমাকে দিতে পারি। কিন্তু সত্যকে দিতে পারি না। মানুষ পশুদের ন্যায় নিজে নিজের একমাত্ৰ সহায় নহে। মানুষ মানুষের সহায়। কিন্তু তাহাতেও তাহার চলে না। অনন্তের সহায়তা না পাইলে সে তাহার মনুষ্যত্বের সকল কাৰ্য সাধন । যাইতে পারে, স্বত্বরক্ষা করিতে হইলে পরস্পরের সহায়তার আবশ্যক, আর প্রকৃতরােপ আত্মরক্ষা করিতে হইলে অনন্তের সহায়তা আবশাক করে। বলিষ্ঠ নিভীক স্বাধীন উদার আত্মা সুবিধা,