পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नाट्टा 80G. বুড়া যুরোপীয় সাহিত্যের টাকার থলি দেখিয়া হিংসা করিয়া এই কথা বলা হইয়া থাকে। কিন্তু আমাদের এ বয়েসের এ কথা নহে। বই লিখিয়া টাকা নাই হইল! যে না লিখিয়া থাকিতে পরিবে: না সেই লিখিবে, যাহার টাকা না হইলে চলে না। সে লিখেবে না। উপবাস ও দারিদ্র্যের মধ্যে সাহিত্যর মূল পত্তন, ইহা কি অন্য দেশেও দেখা যায় না! বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করিয়া কি কুবেরের ভাণ্ডার লুঠ করিয়াছিলেন? যদি তাহার কুবের ভাণ্ডার থাকিত রামায়ণ রচনার প্রতিবন্ধক দূর করিতে তিনি সমস্ত ব্যয় করিতে পারিতেন। প্রখর বিজ্ঞতার প্রভাবে মনুষ্যপ্রকৃতির প্রতি অত্যন্ত অবিশ্বাস না থাকিলে কেহ মনে করিতে পারে না যে উদরের মধ্যেই সাহিত্যের মূল হৃদয়ের মধ্যে নহে। লেখার উদ্দেশ্য মহৎ না হইলে লেখা মহৎ হইবে না। যেমন করিয়াই দেখি, সংকীর্ণতা মঙ্গলের কারণ নহে। জীবনের আদর্শকে সীমাবদ্ধ করিয়া কখনােই জাতির উন্নতি হইবে না। উদারতা নহিলে কখনোই মহত্ত্বের স্মৃর্তি হইবে না। মুখশ্ৰীতে যে একটি দীপ্তির বিভাস হয়, হৃদয়ের মধ্যে যে একটি প্রতিভার বিকাশ হয়, সমস্ত জীবন যে সংসার তরঙ্গের মধ্যে অটল আচলের ন্যায় মাথা তুলিয়া জাগিয়া থাকে, সে কেবল একটি ধ্রুব বিপুল উদারতাকে আশ্রয় করিয়া। সংকোচের মধ্যে গেলেই রোগে জীৰ্ণ, শোকে শীর্ণ, ভয়ে ভীত, দাসত্বে নতশির, অপমানে নিরুপায় হইয়া থাকিতে হয়, চোখ তুলিয়া চাহিতে পারা যায় না, মুখ দিয়া কথা বাহির হয় না, কাপুরুষতার সমস্ত লক্ষণ প্রকাশ পায়। তখন মিথ্যাচারণ, কপটতা, তোষামোদ জীবনের সম্বল হইয়া পড়ে। অসামান্য প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিরা কাপুরুষতার আশ্রয়স্থল এই হীন মিথ্যাকে সবলে সমূলে উৎপাটন না করিয়া যদি তাহার বীজ গোপনে বপন বলুন, পরম সত্যবাদী বলিয়া আমাদিগকে উপহাস করুন, sentimental বলিয়া আমাদিগকে অবজ্ঞাই করুন, বা শ্ৰীকৃষ্ণের দোহাই দিন, এ মিথ্যাকে আমরা কখনোই ঘরে থাকিতে দিব না, ইহাকে আমরা বিসর্জন দিয়া আসিব। সুবিধাই হউক লাভই হউক, আত্মাহিতই হউক লোকহিতই হউক, মিথ্যা বলিব না, মিথ্যাচরণ করিব না, সত্যের ভান করিব না, আত্মপ্ৰবঞ্চনা করিব নাসত্যকে আশ্রয় করিয়া মহত্ত্বে উন্নত হইয়া সরল ভাবে দাঁড়াইয়া ঝড় সহ্য করিব সেও ভালো, তবু মিথ্যায় সংকুচিত হইয়া সুবিধার গর্তর মধ্যে প্রবেশ করিয়া নিরাপদ সুখ অনুভব করিবার অভিলাষে আত্মার কবর রচনা করিব না। डालटी उ5श38 & २३ আমি গত অগ্রহায়ণ মাসের ভারতীতে ‘পুরাতন কথা’ নামক একটি প্রবন্ধ লিখি, তাহার উত্তরে শ্ৰদ্ধাস্পদ শ্ৰীযুক্ত বাবু বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্ত মাসের প্রচারে ‘আদি ব্রাহ্মসমাজ ও নব হিন্দু সম্প্রদােয়’ নামক একটি প্রবন্ধ প্ৰকাশ করিয়াছেন। তাহা পাঠ করিয়া জানিলাম যে, বঙ্কিমবাবুর কতগুলি কথা আমি ভুল বুঝিয়াছিলাম। অতিশয় আনন্দের বিষয়। কিন্তু পাছে কেহ আমার প্রতি সাধারণ করেন এইজনা কেন যে ভুল বুলিছিলাম সংক্ষেপে তাহার কারণ লিখিতে প্রবৃত্ত আমার প্রবন্ধের প্রসঙ্গক্রমে বঙ্কিমবাবু আনুষঙ্গিক যে-সকল কথার উল্লেখ করিয়াছেন সুষুম্ন আমার যাহা বক্তব্য তার পরে বলব। আপাতত প্রধান আলােচ্য বিষয়ের অবতারণা করা «Wሖ t বঙ্কিমবাবু বলেন, ‘রবীন্দ্রবাবু “সত্য” এবং “মিথ্যা।” এই দুইটি শব্দ ইংরাজি অর্থে ব্যবহার করিয়াছেন। সেই অর্থেই আমার ব্যবহৃত “সতী” “মিথ্যা” বুঝিয়াছেন। তাহার কাছে সত্য