পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 Nq, রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী তুমি নিঃসম্বল ? যে আজ তিনদিন ধরিয়া কেবল শুষ্ক ইক্ষুমুল জলে ভিজাইয়া অল্প অল্প চর্বণ করিতেছে, তাহাকেও কি তুমি সাহায্য করিতে পার না? তুমি হয়তো মনে মনে বলিতেছ- ‘এত শত ধনী আছে তাহারাই যদি দুঃখীদের সাহায্য না করিল তো আমরা আর কী করবি!” এমন কথা বলিয়ো না। যে নিষ্ঠুর সে আপনাকে আপনি বঞ্চিত করিতেছে। যে পাষাণ কোনো বেদনাই অনুভব করে না সে নিজের জড়ত্বসুখ লইয়া স্বচ্ছন্দে থাকুক, তাই বলিয়া তাহার দেখাদেখি আপনাকে পাষাণ করিয়ো না! বিলাসসুখ প্রতিদিবসের অন্নপানের ন্যায় যাহার অভ্যাস হইয়াছে যে নিজের সামান্য অনাবশ্যক সুখকে পরের অত্যাবশ্যক অভাবের চেয়ে গুরুতর জ্ঞান করে, সে দুঃখীর মুখের দিকে চায় নাই বলিয়া সকলেই যদি দুঃখীর প্রতি বিমুখ হয়, তবে তো মানবসমাজ রাক্ষসপুরী হইয়া উঠে। হৃদয়হীন বিলাসের ক্ৰোড়ে যে নিদ্রিত আছে, মহেশ্বরের বজ্ঞশব্দে যদি একদিন সে জাগিয়া উঠে। তবেই তাহার চেতনা হইবে, নতুবা দুঃখী-অনাথের ক্ৰন্দন। ধবনিতে তাহার নিদ্ৰা ভঙ্গ হইবে না। তত্ত্বকৌমুদী জ্যৈষ্ঠ ১২৯২ व्लाठिंद्र प्छेश्रद्ध व्लाठिं সম্পাদক মহাশয় আপনি ব্যায়ামচৰ্চা সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছেন সে বিষয়ে কাহারও দ্বিরুক্তি করিবার সম্ভাবনা নাই, ক্ষুদ্রবুদ্ধিবশত আমার মনে দু-একটা প্রশ্নোদয় হইয়াছে। সংশয় দূর করিয়া দিবেন। আপনি যুরোপীয় ও আমেরিকানদের সঙ্গে আমাদের যে তুলনা করিয়াছেন সে তুলনা ভালো খাটে না। আমাদের ব্যায়ামচৰ্চা কর্তব্যবোধে করিতে হইবে, যুরোপীয়দের ব্যায়ামচৰ্চায় স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সে অনেকটা জলবায়ুর গুণে। শীতের হাত এড়াইবার প্রধান উপায় ব্যায়ামচৰ্চা। গ্ৰীষ্মের হাত এড়াইবার প্রধান উপায় যথাসাধ্য বিরাম। তবে যে ইংরাজেরা এ দেশে আসিয়াও ব্যায়াম ভুলেন না। তাহার কারণ আজীবন ও পুরুষানুক্রমিক সংস্কার। আমরাও বোধ করি বিলাতে গেলে আমাদের জড়তা সম্পূর্ণ পরিহার করিতে পারি না। দ্বিতীয় কথা- দেখিতে হইবে আমার কী খাই ও যুরোপীয়রা কী খায়। যুরোপীয়েরা যে মদ মাংস খায় তাহার প্রবল উত্তেজনায় তাহাদের একদণ্ড স্থির থাকিতে দেয় না। আমরা ডাল ভাত খাইয়া অত্যন্ত স্নিগ্ধ থাকি, চোখে ঘুম আসে। তবে কি খাদ্য পরিবর্তন করিতে হইবে? সে কি সহজ কথা! আর য়ুরোপীয়দের খাদ্য আমাদের দেশে খাটে কি না খাটে তাই বা কে বলিবে। কেবল সে কথা নহে। এত টাকা কোথায়! পেট ভরিয়া ডাল ভাত তাই জোটে না। নুনের ট্যাক্সের দায়ে অনেক গরীব শুধু ভাত খাইয়া মরে, নুনও জোটে না। এদেশে সকলে মিলিয়া যে মাংস খাইতে আরম্ভ করিবে সে সম্ভাবনাও অত্যন্ত বিরল। ছাত্রেরা যে খেলাধুলা আমোদ প্ৰমোদ ভুলিয়া ঘরে বসিয়া বিদেশী ব্যাকরণের শুষ্ক সূত্র, বীজগণিতের কঠিন আঁটি ও জ্যামিতির তীব্রু ত্রিকোণ চতুষ্কোণ গিলিতে থাকে, তাহার অবশ্যই একটা কারণ আছে। জ্যামিতি বীজগণিতের প্রেমে পড়িয়া তাহারা কিছু নিতান্তই আত্মহত্যা করিতে বসে নাই। আসল কথা এই যে, আমরা নিতান্ত গরীব, আমরা যে কত গরীব সম্পাদক মহাশয়ের বোধ করি তাহ ধারণা নাই। সম্পাদক মহাশয় বোধ করি ঠিক কল্পনা করিতে পারেন। না যে তঁহার বালকের” দুটাকা মূল্য দিবার সময় আমাদিগকে কত ভাবিতে হয়। আমি যে কাগজখানায় লিখিতেছি তাহাতে তাহারা জুতাও মোড়েন না। যে কলামটায় লিখিতেছি তাহা তঁহাদের কান চুলকাইবারও অযোগ্য। আমাদের সবুর করিবার সময় নাই। বিদ্যাটাকে আফিসের ভাতের মতো গিলিতে হয়। পান তামাক খাইবারও সময় থাকে না। সম্পাদক বলিবেন তাহাতে