পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8やや রবীন্দ্র-রচনাবলী করিয়া স্ত্রীলোক জয়ী হয়। কেবল স্বামী পুত্র পরিবারের নহে, সমস্ত পুরুষের প্রেম আকর্ষণ করিয়া। তবে সমাজে একটি সমগ্ৰ শ্ৰীলোক উদ্ভিন্ন হইতে পারে। সেই স্ত্রীলোককে আমরা ভালোবাসি, কিন্তু আংশিক অসম্পূর্ণ শ্ৰীলোককে মাতা দেবী সম্বোধন করিয়া দূরে চলিয়া যাই। Browning-gs In a Balucomy নামক নাট্যকাব্যে রাজী দুঃখ করিতেছেন যে, কেবলমাত্র রানী হইয়া শ্ৰীলোকের সম্পূর্ণতা নাই সুখ নাই; যদি একজন সামান্যতম প্রজা সমস্ত রাজসম্মান উপেক্ষা করিয়া তাহাকে ভালোবাসে তাহা হইলেও যেন তাহার শ্ৰী-প্রকৃতি কতকটা চরিতার্থ হয়। শ্ৰীলোক কেবল মাতা ও দেবী হইতে চাহে না, পুরুষের হৃদয় অধিকার করিয়া। তবে তাহারা পূর্ণতা লাভ করে। Sv/SS/Strtrb नांब्रियात्रिक न्यूडिलिनि श्रृंखक নব্যবঙ্গের আন্দোলন আজকাল গবর্নমেন্টের কর্তব্য সম্বন্ধে আমাদের মধ্যে যে-সকল আন্দোলন চলিতেছে তাহা দেখিয়া আশা ও আনন্দ জন্মে। কিন্তু যেখানে ভালোবাসা বেশি সেখানে আশঙ্কাও বেশি। স্বজাতির উন্নতি যদি বাস্তবিক প্রিয় এবং ঈলিত হয় তবে ভাবনার কারণ সম্বন্ধে দুই চক্ষু মুদ্রিত করিয়া অন্ধভাবে কেবল আনন্দ করিয়া বেড়ানো স্বাভাবিক নহে। যাহারা স্বজাতিবৎসল, তাহদের কি মাঝে মাঝে সর্বদাই এরাপ আশঙ্কা উদয় হয় না, এই যে সমস্ত কাণ্ডকারখানা দেখিতেছি, এ কি সত্য না স্বপ্ন ? যদি একান্ত অমূলক হয় তবে আগেভাগে তাড়াতাড়ি আনন্দ করিয়া বেড়ানো পরিণামে দ্বিগুণ লজ্জা ও বিষাদের কারণ হইবে। ন্যাশনাল শব্দটা যখন বাংলা দেশে প্রথম প্রচার হয় তখনকার কথা মনে পড়ে। একদিন প্ৰাতঃকালে উঠিয়া হঠাৎ দেখা গেল, চারি দিকে ন্যাশনাল পেপার, ন্যাশনাল মেলা, ন্যাশনাল সং (song), ন্যাশনাল থিয়েটার- ন্যাশনাল কুজাঝটিকায় দশ দিক আচ্ছন্ন। হঠাৎ এরূপ ঘটিবার কারণ ছিল। প্রথম ইংরাজি শিখিয়া বাঙালি যুবকেরা বিকট বিজাতীয় হইয়া উঠিয়াছিলেন। গোরু খাওয়া তাহারা নৈতিক কর্তব্যস্বরাপ জ্ঞান করিতেন এবং প্রাচীন হিন্দুজাতিকে গবাদি চতুস্পদের সহিত একশ্রেণীভুক্ত বলিয়া তাহদের ভ্ৰম জন্মিত। ইতিমধ্যে মহাত্মা রামমোহন রায়- প্রচারিত ব্ৰাহ্মধর্ম দেশে অল্পে অল্পে মূল বিস্তার করিতে লাগিল। আমাদের দেশে যে বিশুদ্ধ একেশ্বরবাদ বহু প্ৰাচীনকালে প্রচলিত ছিল এই জ্ঞানই স্বদেশীয় প্রাচীনকালের প্রতি শ্রদ্ধা আকর্ষণের মূল কারণ হইল। এমন সময়ে যুরোপেও সংস্কৃত ভাষার আদিমতী, আমাদের প্রাচীন দর্শনের গভীরতা, শকুন্তলা প্রভৃতি সংস্কৃত কাব্যের মাধুর্য প্রভৃতি সম্বন্ধে আলোচনা উপস্থিত হইল। তখন হিন্দুসভ্যতার কাহিনী বিলাত হইতে জাহাজে চড়িয়া হিন্দুস্থানে আসিয়া পৌঁছিল। য়ুরোপীয় পণ্ডিতগণ পুথি খুলিয়া অনুসন্ধান করিতে বসিয়া গেলেন, আমরা পুঁথি বন্ধ করিয়া ঢোল লইয়া ন্যাশনাল বোল বাজাইতে বাজাইতে ভারি খুশি হইয়া বেড়াইতে লাগিলাম। তাহারা বিশুদ্ধ জ্ঞানস্পাহার বশবর্তী হইয়া সমস্ত স্বাভাবিক বাধা অতিক্রম করিয়া দুরূহ দূম্প্রাপ্য দুর্বোিধ সংস্কৃত শাস্ত্ৰ হইতে ইতিহাস উদ্ধার করিতে লাগিলেন, আর আমরা তখন হইতে এ পর্যন্ত ঐতিহাসিক পদ্ধতি অনুসারে আমাদের শাস্ত্ৰলোড়নের পরিশ্রম স্বীকার করিলাম নুমাির উপরিভাগ হইতে অহংকার রস শোষণ করিয়া গইয়া বিপরীত মাত্রায় কী? উঠিলাম। যে জাতি স্বদেশের প্রাচীনকােল লইয়া বহুদিন হইতে অবিশ্রাম অহংকার করিয়া আসিতেছে অথচ স্বদেশের প্রাচীনকালের যথার্থ অবস্থা সম্বন্ধে জানিবার জন্য তিলমাত্র শ্রম স্বীকার করিতে