পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8\ኃbr ख़दीक्ष-दूष्माती সবসুদ্ধ দাঁড়াইতেছে এই সমাজ বা ধর্ম সম্বন্ধে হাত দিবার বিষয় আমাদের কিছুই নাই। যাই । আছে সর্বাপেক্ষা ভালোই আছে এখন কেবল গবর্নমেন্ট আমাদের ডালা খুলিয়া দিলেই হয়। ] মাঝে একবার দিনকতক সমাজ সংস্কারের ধুয়া উঠিয়াছিল। শিক্ষিত যুবকেরা সকলেই জাতিভেদ বাল্যবিবাহ প্রভৃতির অপকারিতা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ নিঃসন্দিগ্ধ ছিল। কিন্তু তথাপি কেবল দুই-চাবি ঘর উৎপীড়িত সমাজবহির্ভূত ব্ৰাহ্ম পরিবার ছাড়া আর সর্বত্রই সমাজনিয়ম পূর্ববৎ সমােনই ছিল। জড়তা এবং কর্তব্যের সংগ্রামে জড়তাই জয়লাভ করিল, অবশেষে কালক্রমে তাহার সহিত অহংকার আসিয়া যোগ দিল। মাঝে যে ঈষৎ চাঞ্চল্য উপস্থিত হইয়াছিল তাহা দূর হইয়া বাঙালি ঠাণ্ডা হইয়া বসিল। তাকিয়া ঠেসান দিয়া বসাকে যখন আবার কর্তব্য বলিয়া স্থির করি তখন । যেমন নিরানুতাপ আরাম ও নিঃস্বপ্ন নিদ্রার সুযোগ এমন অন্য সময়ে নহে। আমরা প্রাচীন । দেশাচারকে স্ফীত তাকিয়ার মতো বানাইয়া লইয়া পশ্চাতের দিকে সমস্ত স্থূল শরীরটিকে হেলন । দিয়া রাখিয়াছি- সম্মুখে অগ্রসর হওয়াই একটা গুরুতর অন্যায় বলিয়া জ্ঞান করিতেছি— কেবল মাঝে মাঝে পাশ ফিরিয়া গবর্নমেন্টকে ডাকিয়া বলিতেছি, “বাবা, এই খাটসুদ্ধ তাকিয়াসুদ্ধ তুলিয়া তোমাদের বিলাতের বানানো একটা কলের গাড়িতে তুলিয়া দাও আমি ভেঁা হইয়া উন্নতির টমিনসে গিয়া পৌঁছিব।” নব্যবঙ্গেরা প্ৰথম অবস্থায় গোরু খাইত এবং মনে করিত, এই সহজ উপায়ে ইংরাজ হইতে পরিবে। দ্বিতীয় অবস্থায় আবিষ্কার করিল পূর্বপুরুষেরাও গোরু খাইতেন। অতএব তাহারা যুরোপীয় অপেক্ষা সভ্যতায় নূ্যন ছিলেন না, সুতরাং আমরা ইংরাজের চেয়ে কম নহি। সম্প্রতি তৃতীয় অবস্থায় গোবর খাইতে আরম্ভ করিয়াছে এবং মনে মনে ইংরাজকে ছাড়াইয়া উঠিয়াছে। বৈজ্ঞানিক যুক্তির সহিত প্রমাণ হইয়া গেছে, গোরুর চেয়ে গোবরে ঢের বেশি আধ্যাত্মিকতা আছে; সমস্ত মাথাটার মধ্যে কিছুই নাই থাকুক শুদ্ধ পশ্চাদিকে টিকিটুকুর ডগায় আধ্যাত্মিকতা গলায় ফাস লাগাইয়া বুলিতে থাকে। পূর্বে যখন দেশে বড়ো বড়ো বনেদি টিকির ছিল তখন সে । ছিল ভালো। আজকাল শিক্ষিত লোকদের মাথার পিছনে যে ক্ষুদ্রকায় হঠাৎ-টিকির প্রাদুর্ভাব হইয়াছে তাহা হইতে কেবল একটা অনাবশ্যক অস্বাভাবিক কৃত্রিম দাম্ভিকতা উৎপন্ন হইতেছে। যদি কোনো দুঃসাহসিক ব্যক্তি এমন কথা বলেন যে, কেবল গবর্নমেন্টকে ডাকাডাকি না। করিয়া আমাদের নিজের হাতেও কিছু কাজ করা আবশ্যক তাহা হইলে সে কথাটা তাড়াতাড়ি চাপা দিতে ইচ্ছা করে। তাহার প্রধান কারণ আমার এই মনে হয় যে, কী কী উপায়ে আমাদের দেশের অভাববিশেষ নিরাকৃত হইতে পারে তাহা নির্ধারণ করা আমাদের উদ্দেশ্য নহে— কম । কাজ করিয়া বেশি করিতেছি দেখানেই উদ্দেশ্য। তা ছাড়া আমাদের যে কিছু দোষ আছে, " আমাদের যে কোনো বিষয়ে চেষ্টা করিয়া যোগ্য হওয়া আবশ্যক। এ কথা আমরা সহ্য করিতে পারি না। মনে হয় ওরকম কথা Patriotic নহে। মনে হয় ও কথা সত্য হইলেও বলা উচিত নহে, কারণ তাহা হইলে গবর্নমেন্ট সচেতন হইয়া উঠিবে। অতএব নিদেন Policy-র জন্য বলা আবশ্যক আমাদের যাহা হইবার তাহা বেবাক হইয়া গেছে, এখন তোমাদের পালা। আমরা সকলেই সকল বিষয়ের জন্য যোগ্য, এখন তোমরা যোগ্যের সহিত যোগ্যকে যোজনা করে। আমি নিজের কথা আলোচনা করিয়া এবং আমার অভিজ্ঞতার প্রতি নির্ভর করিয়া বলিতে পারি, আমাদের মধ্যে অতি অল্প লোকই আছেন যাহারা আমাদের রাজ্যশাসনতন্ত্র এবং Representative Government-এর মূল নিয়ম এবং আমাদের দেশে বর্তমানকালে তাহার উপযোগিতা ও সম্ভাবনা সম্বন্ধে বিশেষ কিছু অবগত আছেন অথবা প্ৰকৃত পরিশ্রম স্বীকার করিয়া তদবিষয়ে কিছু জানিতে অভিলাষী আছেন। কিন্তু আমরা সকলেই জানি রাজ্যশাসনের আমরা যোগী, Representative Government লাভে আমরা অধিকারী। কথাগুলা উচ্চারণ করিতে পরিলেই যে প্রকৃত বস্তুতে অধিকার জন্মে তাহা নহে। অন্য দেশের লোকেরা যাহা প্রাণপণ চেষ্টায়, স্বাভাবিক মহত্ত্ব ও প্রবল বীরত্বের প্রভাবে আবিষ্কার ও উপার্জন করিয়াছে, আমরা তাহা কাণে