পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8tr8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আইন গড়িতে পারেন। কিন্তু আইন ভাঙিতে পারেন না। কৃষকের সেই জাতকিল আজ পর্যন্ত গুজরাটের রানীর সম্বন্ধে এইরূপ আর-একটি গল্প প্রচলিত আছে। বহু পূর্বের কথা। তখন গুজরাট সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল। রানীর নাম মীনল দেবী। তাহার রাজত্বকালে ধোলকা গ্রামে তিনি “মীনলতলাও” নামে একটি পুষ্করিণী খনন করাইতেছিলেন। ওই পুষ্করিণীর পূর্ব দিকে একটি দুশ্চরিত্রা রমণীর বাসগৃহ ছিল। সেই গৃহ থাকতে পুষ্করিণীর আয়তনসামঞ্জস্যের ব্যাঘাত । হইতেছিল। রানী অনেক অর্থ দিয়া সেই ঘর ক্রয় করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। কিন্তু গৃহকত্রী মনে করিল, পুষ্করিণী খনন করাইয়া রানী যেরূপ কীর্তিলাভ করিবেন, পুষ্করিণী খননের ব্যাঘাত করিয়া আমারও তেমনি একটা নাম থাকিয়া যাইবে। এই বলিয়া সে গৃহ বিক্রয় করিতে অসম্মত হইল। রানী কিছুমাত্র বলপ্রয়োগ করিলেন না। গৃহ সেইখানেই রহিল। আজিও মীনলতলাওয়ের পূর্বদিকের সীমা অসমান রহিয়াছে। সেই অবধি উক্ত প্রদেশে একটি প্রবাদ প্রচলিত হইয়াছে যে, “ন্যায় ধর্ম দেখিতে চাও তো মীনলতলাও যাও।” Ke » R S বীর গুরু বনের একটা গাছে আগুন লাগিলে অন্যান্য যে-সকল গাছে উত্তাপ প্রচ্ছন্ন ছিল সেগুলাও যেমন আগুন হইয়া উঠে, তেমনি যে জাতির মধ্যে একজন বড়োলোক উঠে, সে জাতির মধ্যে দেখিতে দেখিতে মহত্ত্বের শিখা ব্যাপ্ত হইয়া পড়ে, তাহার গতি আর কেহই রোধ করিতে পারে না। নানক যে মহত্ত্ব লইয়া জন্মিয়াছিলেন সে তাহার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই নিবিয়া গেল না। তিনি যে ধর্মের সংগীত, যে আনন্দ ও আশার গান গাহিলেন, তাহ ধবনিত হইতে লাগিল। কত নুতন নূতন শুরু জাগিয়া উঠিয়া শিখদিগকে মহত্ত্বের পথে অগ্রসর করিতে লাগিলেন। তখনকার যথেচ্ছাচারী মুসলমান রাজারা অনেক অত্যাচার করিলেন, কিন্তু নবধর্মোৎসাহে দীপ্ত শিখ জাতির উন্নতির পথে বাধা দিতে পারিলেন না। বাধা ও অত্যাচার পাইয়া শিখেরা কেমন করিয়া বীর জাতি হইয়া উঠিল। তাহার গল্প বলি শুন। নানকের পর পাঞ্জাবে আট জন শুরু জন্মিয়াছেন, আট জন গুরু, মরিয়াছেন, নবম গুরুর নাম তেগবাহাদুর। আমরা যে সময়কার কথা বলিতেছি তখন নিষ্ঠুর আরঞ্জীব দিল্পীর সম্রাট ছিলেন। রামরায় বলিয়া তেগবাহাদুরের একজন শত্ৰু সম্রাটের সভায় বাস করিত। তাঁহারই কথা শুনিয়া সম্রাট তেগবাহাদুরের উপরে ক্রুদ্ধ হইয়াছেন, তাহাকে ডাকিতে পাঠাইয়াছেন। আরঞ্জাবের লোক যখন তেগবাহাদুরকে ডাকিতে আসিল তখন তিনি বুঝিলেন যে তঁহার আর রক্ষা নাই। যাইবার সময়ে তিনি তাহার ছেলেকে কাছে ডাকিলেন। ছেলের নাম গোবিন্দ, তাহার বয়স চােদ্দ বৎসর। পূর্বপুরুষের তলোয়ার গোবিন্দের কোমরে বঁধিয়া দিয়া তাহাকে বলিলেন, “তুমিই শিখেদের গুরু হইলে। সম্রাটের আদেশে ঘাতক আমাকে যদি বধ করে তো আমার শরীরটা যেন শেয়াল-কুকুরে না খায়! আর এই অন্যায় অত্যাচারের বিচার তুমি করিয়ো, ইহার প্রতিশোধ তুমি লইয়ো।’ বলিয়া তিনি দিল্লী চলিয়া গেলেন। রাজসভায় তাহাকে তাহার গোপনীয় কথা সম্বন্ধে অনেক প্রশ্ন করা হইল। কেহ বা বলিল, “আচ্ছা, তুমি যে মন্ত লোক তাহার প্রমাণস্বরূপ একটা অলৌকিক কারখানা দেখাও দেখি! তেগবাহাদুর বলিলেন, “সে তো আমার কাজ নহে। মানুষের কর্তব্য ঈশ্বরের শরণাপন্ন হইয়া থাকা। তবে তোমাদের অনুরোধে আমি একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখাইতে পারি। একটা কাগজে