se রবীন্দ্র-রচনাবলী শিখ-স্বাধীনতা । শুরু গোবিন্দই শিখদের শেষ গুরু। তিনি মরিবার সময় বন্দা-নামক এক বৈরাগীর উপরে শিখদের কর্তৃত্বভার দিয়া যান। তিনি যে সংকল্প অসম্পূর্ণ রাখিয়া যান। সেই সংকল্প পূর্ণ করিবার |ার কুন্দার উপরে পড়ল। অত্যাচারী বিদেশীদের হাত হইতে স্বজ্ঞাতিকে পরিত্রণ করা গােবিন্দের এক ব্রত ছিল, সেই ব্ৰত বন্দা গ্ৰহণ করিলেন। বন্দর চতুর্দিকে শিখেরা সমবেত হইতে লাগিল। বন্দার প্রতাপে সমস্ত পঞ্জাব কম্পিত হইয়া উঠিল। বন্দা সিহিন্দ হইতে মোগলদের তাড়াইয়া দিলেন। সেখানকার শাসনকর্তাকে বধ করিলেন। সিরমুরে তিনি এক দুর্গ স্থাপন করিলেন। শতদ্রু এবং যমুনার মধ্যবতী প্রদেশ অধিকার করিয়া লইলেন, এবং জিলা সাহারানপুর মরুভূমি করিয়া দিলেন। মুসলমানদের সঙ্গে মাঝে মাঝে যুদ্ধ চলিতে লাগিল। লাহােরের উত্তরে জন্তু পর্বতের উপরে বন্দা নিবাস স্থাপন করিলেন, পাঞ্জাবের অধিকাংশই তাহার আয়ত্ত হইল। এই সময়ে দিল্লির সম্রাট বাহাদুরশা'র মৃত্যু হইল। তাহার সিংহাসন লইয়া তাহার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে গোলযোগ চলিতে লাগিল। এই সুযোগে শিখেরা সমবেত হইয়া বিপাশা ও ইরাবতীর মধ্যে শুরুদাসপুর নামক এক বৃহৎ দুর্গ স্থাপন করিল। লাহােরের শাসনকর্তা বন্দার বিরুদ্ধে যাত্ৰা করিলেন। উভয় পক্ষে ঘোরতর যুদ্ধ হইল। এই যুদ্ধে মুসলমানদের জয় হইল। এই জয়ের পর সিহিন্দে একদল শিখসৈন্য পুনর্বার প্রেরিত হইল। সেখানকার শাসনকর্তা বয়াজিদ খাঁ শিখদিগকে আক্রমণ করিলেন। একজন শিখ গোপনে বয়াজিদের তাম্বুর মধ্যে প্ৰবেশ করিয়া তাহাকে নিহত করিল; দিল্লির সম্রাট কাশ্মীরের শাসনকর্তা করিলেন। দিল্লি হইতে তাহার সাহায্যার্থে এক দল বাছা বাছ সৈন্য প্রেরিত হইল। সম্মদ খাও সহস্ৰ সহস্ৰ স্বজাতীয় তুরানি সৈন্য লইয়া যাত্ৰা করিলেন। লাহাের হইতে কামান-শ্রেণী সংগ্ৰহ করিয়া তিনি শিখদিগের উপরে গিয়া পড়িলেন। শিখেরা প্ৰাণপণে যুদ্ধ করিল। আক্রমণকারীদের বিস্তর সৈন্য নষ্ট হইল। কিন্তু অবশেষে পরাজিত হইয়া বন্দা গুরুদাসপুরের দুর্গে আশ্রয় গ্ৰহণ করিলেন। শত্রুসৈন্য তঁহার দুর্গ সম্পূর্ণ বেষ্টন করিয়া ফেলিল। দুর্গে খাদ্য-যাতায়াত বন্ধ হইল। সমস্ত খাদ্য এবং অখাদ্য পর্যন্ত যখন নিঃশেষ হইয়া গেল তখন বন্দা শক্রিহস্তে আত্মসমপণ করিতে বাধ্য হইলেন। ৭৪০ জন শিখ বন্দী হইল। কথিত আছে, যখন বন্দীগণ লাহােরের পথ দিয়া যাইতেছিল তখন বয়াজিদ খাঁর বৃদ্ধ মাতা তাহার পুত্রের হত্যাকারীর মস্তকে পাথর ফেলিয়া দিয়া বধ করিয়াছিল। বন্দ যখন দিল্লিতে নীত হইলেন তখন শত্রুরা শিখদের ছিন্নশির বর্শাফলকে করিয়া তাহান আগে আগে বহন করিয়া লইয়া যাইতেছিল। প্রতিদিন একশত করিয়া শিখ বন্দী বধ করা হইত। একজন মুসলমান ঐতিহাসিক লিখিয়াছিলেন যে, “শিখেরা মরিবার সময় কিছুমাত্র চাঞ্চল্য প্ৰকাশ করে নাই; কিন্তু অধিকতর আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আগে মরিবার জন্য তাহারা আপনা-আপনির মধ্যে বিবাদ ও তর্ক করিত। এমন-কি, এইজন্য তাহারা ঘাতকের সঙ্গে ভাব করিবার চেষ্টা করিত।” অষ্টম দিনে বন্দা বিচারকের সমক্ষে আনীত হইলেন। একজন মুসলমান আমীর তীহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘এমন বুদ্ধিমান ও শাস্ত্ৰজ্ঞ হইয়াও এত পাপাচরণে তোমার মতি হইল কী করিয়া?” বন্দা বলিলেন, ‘পাপীর শাস্তি-বিধানের জন্য ঈশ্বর আমাকে নিযুক্ত শাস্তি হইতেছে।” বিচারকের আদেশে তাহার ছেলেকে তাহার কোলে বসাইয়া দেওয়া হইল! তাহার হাতে ছুরি দিয়া স্বহস্তে নিজের ছেলেকে কাটিতে হুকুম হইল। অবিচলিত ভাবে নীরবে তেঁাতার ক্রোডস্থ ছেলেকে বন্দ বধ করিলেন। অবশেষে দগ্ধ লৌহের সাড়াশি দিয়া তাহার মাংস
