ইতিহাস 8ヶ。 বন্দার মৃত্যুর পর মোগলেরা শিখদের প্রতি নিদারুণ অত্যাচার করিতে আরম্ভ করিল। প্রত্যেক শিখের মাথার জন্য পুরস্কার-স্বরাপ মূল্য ঘোষণা করা হইল। - শিখেরা জঙ্গলে ও দুৰ্গম স্থানে আশ্রয় লইল। প্রতি ছয় মাস অস্তুর তাহারা একবার করিয়া অমৃতসরে সমবেত হইত। পথের মধ্যে যে-সকল জমিদার ছিল তাহারা ইহাদিগকে পথের বিপদ হইতে রক্ষা করিত। এই ষান্মাসিক মিলনের পর আবার তাহারা জঙ্গলে ছড়াইয়া পড়িত। পঞ্জাব জঙ্গলে আবৃত হইয়া উঠিল। নাদিরশা। আফগানিস্থান হইতে ভারতবর্ষে আসিবার সময় পঞ্জাব দিয়া আসিতেছিলেন। নাদিরশ জিজ্ঞাসা করিলেন, শিখদের বাসস্থান কোথায় ? পঞ্জাবের শাসনকর্তা উত্তর করিলেন, ঘোড়ার পৃষ্ঠের জিনই শিখদের বাসস্থান। নাদিরশাহের ভারত-আক্রমণকালে শিখেরা ছোটাে ছোটাে দল বাধিয়া তাহার পশ্চাদবর্তী হইয়া শিখেরা পুনশ্চ দুঃসাহসিক হইয়া উঠিল। এখন তাহারা প্রকাশ্যভাবে শিখন্তীৰ্থ অমৃতসরে যাতায়াত করিতে লাগিল। একজন মুসলমান লেখক বলেন- প্রায়ই দেখা যায়, অশ্বারোহী শিখ পূর্ণবেগে ঘোড়া ছুটাইয়া তাহাদের তীর্থ উপলক্ষে চলিয়াছে। কখনো কখনাে কেহ বা ধূতও হইত, কেহ বা হতও হইত, কিন্তু কখনো এমন হয় নাই যে, একজন শিখ ভয়ে তাহার স্বধৰ্ম ত্যাগ করিয়াছে। অবশেষে শিখেরা উত্তরোত্তর নিভীক হইয়া ইরাবতীর তীরে এক ক্ষুদ্র দুর্গ স্থাপন করিল। ইহাতেও মুসলমানেরা বড়ো একটা মনোযোগ দিল না। কিন্তু তাহারা যখন বৃহৎ দল বধিয়া আমিনাবাদের চতুস্পার্শ্ববর্তী স্থানে কর আদায় করিতে সমবেত হইল, তখন মুসলমান সৈন্য তাঁহাদের আক্রমণ করিল। কিন্তু মুসলমানেরা পরাজিত হইল ও তাঁহাদের সেনাপতি বিনষ্ট হইল। মুসলমানেরা অধিকসংখ্যক সৈন্য লইয়া দ্বিতীয়বার আক্রমণ করিল ও শিখদিগকে পরাভূত করিল। লাহোরে এই উপলক্ষে বিস্তর শিখবন্দী নিহত হয়। যেখানে এই বধকাৰ্য সমাধা হয় লাহােরের সেই স্থান সুহিন্দগঞ্জ নামে অভিহিত। এখনও সেখানে ভাই তরুসিংহের কবরস্থান আছে। কথিত আছে, তরুসিংহকে তাহার দীর্ঘ কেশ ছেদন করিয়া শিখধর্ম ত্যাগ করিতে বলা হয়। কিন্তু গুরু গোবিন্দের এই বৃদ্ধ অনুচর। তাহার ধর্ম ত্যাগ করিতে অসম্মত হইলেন এবং শিখদের শাস্ত্রানুমোদিত জাতীয় চিহ্নস্বরূপ দীর্ঘ কেশ ছেদন করিতে রাজি হইলেন না। তিনি বলিলেন, "চুলের সঙ্গে খুলির সঙ্গে এবং খুলির সঙ্গে মার্থার সঙ্গে যোগ আছে। চুলে কাজ কী, আমি মাথাটা দিতেছি।” এইরূপে ক্রমাগত জয়পরাজয়ের মধ্যে সমস্ত শিখ জাতি আন্দোলিত হইতে লাগিল, কিন্তু কিছুতেই তাহারা নিরুদ্যম হইল না। এক সময়ে যখন তাহারা সিহিন্দের শাসনকর্তা জেইন খার উপরে ব্যাঘের ন্যায় লম্ফ দিবার উদযোগ করিতেছিল। এমন সময়ে দুর্দস্তুপরাক্রম পাঠান আমোদশা তাহার বৃহৎ সৈন্যদলসমেত তাহাদের উপর আসিয়া পড়িলেন। এই যুদ্ধে শিখদের সম্পূর্ণ পরাজয় হয়, তাহাদের বিস্তর লোক মারা যায়। আমোদশা অমৃতসরের শিখ-মন্দির ভাঙিয়া দিলেন। গোরক্ত ঢলিয়া অমৃতসরের সরোবর অপবিত্র করিয়া দিলেন। শিখদের ছিন্ন শির স্তুপাকার করিয়া সজ্জিত করিলেন। এবং কাফের শক্ৰদের রক্তে মসজিদের ভিত্তি ধৌত করিয়া দিলেন। কিন্তু ইহাতেও শিখেরা নিরুদ্যম হইল না। প্রতিদিন তাঁহাদের দল বাড়িতে লাগিল। প্ৰতিহিংসা-প্রবৃত্তি সমস্ত জাতির হৃদয়ে প্ৰজ্বলিত হইয়া উঠিল। প্রথমে তাহারা কসুর-নামক পাঠানদের উপনিবেশ আক্রমণ, লুণ্ঠন ও গ্রহণ করিল। তাহার পরে তাহারা সিহিন্দে অগ্রসর হইল। সেখানকার শাসনকর্তা জেইন খাঁর সহিত যুদ্ধ বাধিল। যুদ্ধে পাঠান পরাজিত ও নিহত হইল। শতদ্রু হইতে যমুনা পর্যন্ত সিহিন্দ প্রদেশ শিখদের করতলস্থ হইল। লাহােরের শাসনকর্তা কাবুলি-মলকে শিখেরা দূর করিয়া দিল। ঝিলম হইতে শতদ্রু পর্যন্ত সমস্ত পঞ্জাব শিখদের হাতে
