পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6.98 झी-फनांक्षी যথার্থ দোসর হে তারকা, ছুটিতেছে আলোকের পাখা ধরে, তোমারে শুধাই আমি, বলো গো বলে গো মোরে, তুমি তারা রজনীর কোন গুহা মাঝে যাবে? আলোকের ডানাগুলি মুদিয়া রাখিতে পাবে? স্নান মুখ হে শশাঙ্ক, ভ্ৰমিছ সমস্ত রাত্রি, আশ্ৰয় আলয়-হীন আকাশ-পথের যাত্রী, দিবসের, নিশীথের কোন ছায়াময় দেশে বিশ্রাম লভিতে তুমি পাইবে গো অবশেষে ? পরিশ্রান্ত সমীরণ, বলে গো খুজিছ কারে? আতিথ্য না পেয়ে ভ্ৰম” জগতের দ্বারে দ্বারে, গোপন আলয় তব আছে কি মলয় বায়, তরঙ্গ-শয়নে কিংবা নিভূত নিকুঞ্জ-ছায় ? -Shelley আধুনিক ইংরাজি কবিতার মধ্যে আশ্রয়-প্ৰয়াসী হৃদয়ের বিলাপ-সংগীত প্ৰায় শুনা যায়। আধুনিক ইংরাজ কবিরা অসন্তোষ ও অতৃপ্তির রাগিণীতেই অধিকাংশ গান গাহিয়া থাকেন। যাহা ছিল ও হারাইয়া গিয়াছে তাহার জন্য যে কেহ বিলাপ করিবেন তাহাতে আশ্চর্য নাই, কিন্তু যাহা ছিল না, যাহা পাইতেছি না, অথচ যাহা জানি না, তাহার জন্যই সম্প্রতি একটা বিলাপ-ধ্বনি উঠিয়াছে। কিছুতেই একটা আশ্ৰয় মিলিতেছে না, এই একটা ভাব; যেন একটা আশ্রয় আছে, আমি জানি, তাহার ঠিক রাস্তাটা খুঁজিয়া পাইতেছি না বলিয়া মিলিতেছে না, দিকভ্ৰম ঘুচিলেই মিলিবে, এইরূপ একটা বিশ্বাস। মনে হইতেছে জানি, অথচ জানি না, কী চাহি তাহা যেন ভাবিলেই মনে আসিবে, অথচ মনে আসে না। এক-এক সময়ে একজনকে ডাকিয়া, যেমন কী জন্য ডাকিলাম ভুলিয়া যাই, তখন যেমন অধীরতা উপস্থিত হয়, ইহাও সেইরাপ অধীর ভাব। এখনকার কবিরা দেখিতেছেন, প্রেমে তৃপ্তি নাই, সে অতৃপ্তি নিরাশার অতৃপ্তি নহে, অভাবের অতৃপ্তি। তাহারা কাহাকে ভালোবাসিবেন খুঁজিয়া পান না, অথচ হৃদয়ে ভালোবাসার অভাব নাই। প্রেমের অগ্নি, আলেয়ার আলোকও বিদ্যুতের শিখার ন্যায় আপনি জ্বলিতেছে। অথচ তাহার ইন্ধন নাই। ভালোবাসিবার জন্য তাহাদিগকে কাল্পনিক প্রতিমা প্ৰতিষ্ঠা করিতে হয়। এমনতর প্ৰেম পূর্বকার কবিদিগের ছিল না, এমনতর প্রেম সাধারণ লোকেরা বুঝে না। পূর্বকার কবিদিগের প্রেম ব্যক্তিগত ছিল, হাত, পা, নাক, মুখ, চোখ অবলম্বন না করিয়া যে ভালোবাসা থাকিতে পারে, ইহা তাহদের কল্পনার অতীত ছিল। তাহারা ব্যক্তিবিশেষকে লইয়া মাতিয়া উঠিতেন, এইজন্য তাহদের প্রেমের ধর্মে পৌত্তলিকতার উন্মত্ততা ছিল। তাহারা মিলনে একেবারে উচ্ছসিত হইয়া উঠিতেন, বিরহে একেবারে মুমূর্ষ হইয়া পড়িতেন। অতৃপ্তির নীচু সুরের নিশ্বাস তাহারা ফেলিতেন না, আর্তনাদের উচু সুরে তাহারা বিরহের গান গাহিতেন। সভ্যতা বৃদ্ধি সহকারে হৃদয়ের বৃক্তিসকল যে ক্রমশ মার্জিত ও সূক্ষ্ম হইয়া আসিয়াছে ইহাই তাহার একটি প্রমাণ। এমন এক সময় ছিল যখন প্ৰেম ইন্দ্রিয়গত ছিল, যখন বড়ো বড়ো চোখের কটাক্ষে কবিদিগের হৃদয়ে ভূমিকম্প উপস্থিত হইত, তিলফুল নাসা কুঞ্চিত দেখিলে তাহরী জগৎ অন্ধকার দেখিতেন। ফণিনী-গঞ্জিত বেশী তাহদের হৃদয়কে সাতপাকে বধিয়া রাখিত। তখন বিরাহিণী গান করিত, ‘আসার আশা রবে, কিন্তু নবযৌবন রবে না।” ক্রমে প্রেমের