পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

68 S রবীন্দ্র-রচনাবলী হইলে কিছু অপ্ৰস্তুত হইতে হয়। সংবাদপত্র ও মাসিকপত্রের সমালোচনা ও বিজ্ঞাপন যাহারা পাঠ করেন তাহারা ট্যাকের পয়সা খরচ করিয়া সহসা আবিষ্কার করেন, যে, গোলাম-চোর হইয়াছেন। সত্য কথা বলিতে কী, অনেক পাঠক তাসের কাগজ চেনেন না, তাহারা অনেক সময়ে জানিতেই পারেন না যে, তাহারা গোলাম টানিয়াছেন। রঙচঙে দেখিয়া তাহারা ভারি খুশি হন, কিন্তু যাহারা তাসের কাগজ চেনেন, তাহারা গোলাম-চোরকে দেখিয়া মনে মনে হাসেন। যাহা হউক, পাঠকেরা একবার ভাবিয়া দেখুন, কতবার গোলাম-চোর হইয়াছেন, কত রঙের গোলাম তাহার হাতে আছে। প্রকাশ করিবার আবশ্যক নাই, কথাটা চাপিয়া রাখুন, কিন্তু প্রতিবেশী গোলাম-চোর হইলে তাহা লইয়া অতিরিক্ত হাস্য-পরিহাস না করেন। ভারতী TAR SSvv চৰ্য, চোষ্য, লেহ্য, পেয় জঠর-তত্ত্ববিৎ বুধগণ উদর-সেবাকে চারি ভাগে বিভক্ত করিয়াছেন। চর্বণ করা, শোষণ করা, লেহন করা ও পান করা। আহারের অনুষঙ্গিক ও অতি নিকট সম্পৰ্কীয় একটি পদার্থ আছে, পুরাতন নস্য-সেবকেরা তাহাকে অনাদর করিয়াছেন যথা, ধূমায়ন অর্থাৎ ধোঁয়ান। যাহা হউক, ‘ভিক্ষণ ও ভক্ষণায়ন” সভার সভ্যগণ তাহদের শাস্ত্রের পাঁচটা পরিচ্ছেদ নির্মাণ করিয়াছেন, প্রথম চৰ্য; দ্বিতীয় চোষ্য; তৃতীয় লেহ্য; চতুর্থ পেয় ও পঞ্চম ধৌম্য। এই শেষ পরিচ্ছেদটাকে অনেকে রীতিমতো পরিচ্ছেদ বলিয়া গণনা করেন না, তাহারা ইহাকে পরিশিষ্ট স্বরাপে দেখেন। আমাদের বুদ্ধির খোরাককেও এইরূপ পাঁচ ভাগে বিভক্ত করা যায়। শ্ৰীযুক্ত লালা আহারবিহারী উদরাম্বুধি মহাশয় দেখিবেন, তাহাদের ভোজের সহিত বুদ্ধির ভোজের যথেষ্ট সীেসাদৃশ্য আছে। চৰ্য। কাচা, আভাঙা সত্য। ইহা একেবারে উদরে যাইবার উপযোগী নহে। গলা দিয়া নামে না, পেটে গিয়া হজম হয় না। ইহা অতিশয় নিরেট পদার্থ। ইংরাজি বুদ্ধিজীবী, ঔদরিকগণ ইহাকে facts বলেন। যদি ইহাকে দাঁত দিয়া ভাঙিয়া ভাঙিয়া, বিশ্লেষণ করিয়া, রহিয়া বসিয়া না খাও, যেমন পাও তেমনি গিলিতে আরম্ভ কর। তবে তাহাতে বুদ্ধিগত শরীরের পুষ্টি সাধন হয় না। এইটি না জানার দরুন অনেক হানি হয়। স্কুলে ছেলেদের ইতিহাসের পাতে যে আহার দেওয়া হয় তাহা আদ্যোপাত চৰ্য। বেচারিদের ভাঙিবার দাঁত নাই, কাজেই ক্ৰমিক গিলে। কোন রাজার পর কোন রাজা আসিয়াছে; কোন রাজা কোন সালে সিংহাসন প্রাপ্ত হইয়াছে ও কোন সালে পঞ্চােত্ব প্রাপ্ত হইয়াছে, এই সকল শক্ত শক্ত ফলের আঁঠিগুলি তাঁহাদের গিলিতে হয়। মাস্টারবর্গ মনে করেন, ছাত্রদের মনের ক্ষেত্রে এই যে-সকল বীজ রোপণ করিতেছেন, ভবিষ্যতে ইহা হইতে বড়ো বড়ো গাছ উৎপন্ন হইবে। কথাটা যে চাষার মতো হইল; কারণ, এ যে ক্ষেত্র নয়, এ পাকযন্ত্র। এখানে গাছ হয় না, রক্ত হয়। আজকাল যুরোপে এই সত্যটি আবিষ্কৃত হইয়াছে ও পাঠ্য ইতিহাস লিখিবার ধারাও পরিবর্তিত হইয়াছে। এখনকার ইতিহাস কতকগুলা ঘটনার সংবাদপত্র ও রাজাদিগের নামাবলী নহে। অবশ্য চৰ্য পদার্থের কঠিন্যের কমবেশ পরিমাণ আছে। কোনোট বা চিবাইতে কষ্ট বোধ হয় না মুখে দিলেই মিলাইয়া যায়, কোনোটা চিবাইতে বিষম কষ্ট হয়। যাঁহাদের বুদ্ধি দাঁত-ওয়ালা, চৰ্য তঁহাদের স্বাভাবিক খাদ্য। তাঁহারা কঠিন কঠিন চৰ্যগুলিকে লইয়া বিশ্লেষণ দাঁত দিয়া ভাঙিয়া, মুখের মধ্যে আনুমানিক ও প্রমাণিক যুক্তির রসে রসালেী করিয়া লইয়া এমনি আকারে তাহাকে পরিণত করেন যে, তাহার চর্ঘ্য অবস্থা ঘুচিয়া যায় ও সে পরিপাকের উপযোগী ও রক্ত-নির্মাণক্ষম হইয়া উঠে। ইহা একটি শারীর-তত্ত্বের নিয়ম যে, খাদ্য যতক্ষণ চৰ্য্য অবস্থায় থাকে, অর্থাৎ facts যখন কেবলমাত্র facts রূপেই থাকে, ততক্ষণ তাহা