পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

विविथ qꬃዓ সঙ্গে আমার সমস্ত মানব জন্মের বিসর্জন হইবে না। আমি নিম্বল হইলাম” বলিয়া যে দুঃখ সে অপরিতৃপ্ত অহংকারের দুঃখ নহে। ইহা নিজের হাতে নিজের একমাত্র আশা একমাত্র আদর্শকে বিসর্জন দিয়া প্ৰাণাধিকের বিনাশের জন্য শোক! 9 Ve কারণ, আমার হৃদয়ের মধ্যস্থিত আদর্শ আমার চেয়ে বড়ো। তাহা আমার মনুষ্যত্ব। আমি আমার ধৰ্মজ্ঞানের হতে একটি যন্ত্রমাত্র। সে আমাকে দিয়া তাহার কাজ করাইয়া লইতে চায়। আমার একমাত্র দুঃখ এই যে আমি তাহার উপযোগী নহি- আমার দ্বারা তাহার কাজ সম্পন্ন হয় না। আমি দুর্বল। তাহার কাজ করিতে গিয়া আমি ভাঙিয়া যাই। কিন্তু সেই ভাঙিয়া যাওয়াতে আনন্দ আছে। মনে এই সাত্বনা থাকে যে, তাহারই কাজে আমি ভাঙিলাম। আমি নিম্বল হইলাম বলিতে বুঝায়, আমার প্রভুর কাজ হইল না। মনুষ্যত্ব আমাকে আশ্রয় করিয়া মগ্ন হইল। স্বামিন, তোমার আদেশ পালন হইল না! S. সাধারণের কাছা হইতে যে ব্যক্তি খ্যাতি উপহার পায় তাহার রক্ষা নাই। এ বিষকন্যার হাতে যদি মৃত্যু না হয় তো বন্দী হইতে হইবে। এই খ্যাতি তাপসের তপস্যা ভঙ্গ করিতে সাধকের সাধনায় ব্যাঘাত করিতে আসে। যে ব্যক্তি সাধারণের প্রিয় সাধারণ তাহার জন্য আফিম বরাদ । করিয়া দেয়, সাধারণের দাঁড়ে বসিয়া সে বিমাইতে থাকে, সে আগেকার মতো তাহার ডানাদুটি লইয়া মেঘের দিকে তেমন করিয়া আর উড়িতে পারে না। তার পরে এক দিন যখন খামখেয়ালি সাধারণ তাহার সাথের পাখির বরাদ্ধ বন্ধ করিয়া দিবে, তখন পাখির গান বন্ধ তাহার প্রাণ 陶希 of Y888 বসে ভাবুন। ভরা পুকুর, আমবাগান, ভিজে কাক ও আষাঢ়ে গল্প মনে করুন। আর যদি গঙ্গার তীর মনে পড়ে, তবে সেই স্রোতের উপর মেঘের ছায়া, জলের উপর জলবিন্দুর নৃত্য, ওপারের বনের শিয়রে মেঘের উপর মেঘের ঘটী, মেঘের তলে অশব্থগাছের মধ্যে শিবের দ্বাদশ মন্দির স্মরণ করুন। মনে করুন পিছল ঘাটে ভিজে ঘোমটায় বধু জল তুলছে; বঁাশঝাড়ের তলা দিয়ে, পাঠশাল ও গয়লাবাড়ির সামনে দিয়ে সংকীর্ণ পথে ভিজতে ভিজতে জলের কলস নিয়ে তারা ঘরে ফিরে যাচ্ছে; খুঁটিতে বাঁধা গোরু গোয়ালে যাবার জন্যে হাম্বারবে চিৎকার করছে; } আর মনে করুন, বিস্তীর্ণ মাঠে তরঙ্গায়িত শস্যের উপর পা ফেলে ফেলে বৃষ্টিধারা দূর থেকে কেমন ধীরে ধীরে চলে আসছে; প্রথমে মাঠের সীমান্তস্থিত মেঘের মতো আমবাগান, তার পরে এক-একটি করে বঁাশঝাড়, এক-একটি করে কুটির, এক-একটি করে গ্রাম বর্ষার শুভ্ৰ আঁচলের আড়ালে ঝাপসা হয়ে মিলিয়ে আসছে, কুটিরের দুয়ারে বসে ছোটাে ছোটাে মেয়েরা হাততাটি দিয়ে ডাকছে ‘আয় বৃষ্টি হেনে, ছাগল দেব মেনৌ-অবশেষে বর্ষ আপনার জালের মধ্যে সমস্ত মাঠ, সমস্ত বন, সমস্ত গ্রাম ঘিরে ফেলেছে; কেবল অবিশ্ৰান্ত বৃষ্টি- বঁাশঝাড়ে, আমবাগানে, কুঁড়ে ঘরে, নদীর জলে, নীেকোর হালের নিকটে আসীন গুটিসুটি জড়োসড়ো কম্বলমোড়া মাঝির