পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

दिवेिक्ष tàG কিন্তু থাকিতে পারিলাম কই-অশান্ত হৃদয় বারণ মানিল কই- একদিন প্ৰত্যুষে উঠিলাম। দেখিলাম আমার বাগানের মালী তোড়া হাতে করিয়া লইয়া আসিতেছে। কৌতুহল সংবরণ করিতে পারিলাম না। কম্পিত হৃদয়ে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম- ‘ওরে জগা, তুই এ তোড়া কোথায় পাইলি রে!” সে তৎক্ষণাৎ কহিল, ‘বাগান হইতে তৈয়ার করিয়া আনিলাম।” আমি কাতর কণ্ঠে কহিলাম, ‘প্ৰবঞ্চনা করিস না রে জগা, সত্য করিয়া বল- এ তোড়া তোকে কে দিলে!” সে কহিল, ‘প্ৰভু, এ আমি নিজে বানাইয়াছি!” আমি পুনশ্চ ব্যাকুল অনুনয়ের সহিত কহিলাম- “আমার মাথা খাইস জিগা, আমার কাছে কিছু গোপন করিস না, যে এ তোড়া তোকে দিয়াছে তাহার নামটি আমাকে বল!” মালাকর অনেকক্ষণ অবাকভাবে আমার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল— প্রভুর আজ্ঞা পালন করিবে, না রমণীর বিশ্বাস রক্ষা করিবে, বোধ করি এই দুই কর্তব্যের মধ্যে তাহার চিত্ত দোদূল্যমান হইতেছিল। অবশেষে করজোড়ে একান্ত কাতরতা সহকারে সে উৎকল উচ্চারণমিশ্রিত গ্রাম্য ভাষায় কহিল- ‘প্ৰভো, এ কুসুমগুচ্ছ আমারি স্বহস্তে রচনা।” বুঝিলাম সে কিছুতেই সেই অজ্ঞাতনামীর নাম প্রকাশ করিবে না। আমি যেন চক্ষের সম্মুখে দেখিতে পাইলাম, আমার সেই অপরিচিত অনামিকা— আমার অশ্রুগদগদ কাতর কণ্ঠে কহিতেছেন- ‘এই তোড়াটি গোপনে তঁহার ঘরে রাখিয়া আয় জগা, . কিন্তু আমার মাথা খাস, আমার মৃত্যুমুখ দর্শন করিস জিগা, আমার নাম তীহাকে শুনাইস না, আমার কথা তাহাকে বলিস না, আমার পরিচয় তাহাকে দিস না, আমার হৃদয়ের বেদন হািদয়েই জগা তো চলিয়া গেল। কিন্তু আমি আর অশ্রু সংবরণ করিতে পারিলাম না। তোড়াটি হৃদয়ে চাপিয়া ধরিলাম, দুটি-একটি কণ্টক বক্ষে বিধিল- বুকের রক্তের সহিত ফুলের শিশির এবং ফুলের শিশিরের সঙ্গে আমার চােখের জল মিশিলা।। হরি হরি, সেই অবধি আমার এ কী হইল। কী যেন-আমাকে কী করিল! কে যেন আমাকে কী বলিয়া গেল! কোথায় যেন আমার কাহার সহিত দেখা হইয়াছিল! কখন যেন তাহাকে হারাইয়াছি। কেবল যেন এই তোড়াটি- এই কয়েকটি ক্রোটনের পাতা, এই শ্বেত গোলাপ এবং এই গুটিকতক দোপাটি- আমার কাছে চিরজীবনের মতো কী-যেন-কী হইয়া রহিল এবং এখন হইতে যখনই জগা মালীকে দেখি তাহার মুখে যেন কী-যৌন-কী দেখিতে পাই এবং সেও আমার ভাবগতিক দেখিয়া অবাক হইয়া আমারও মুখে যেন কী-যেন-কী দেখিতে পায়! জগতের লোকে সকলে জানে যে, আমার জগা মালী আমাকে বাগান হইতে ফুল তুলিয়া তোড়া বঁধিয়া দেয়, কেবল আমার অন্তর জানে, আমাকে কে যেন গোপনে তোড়া পঠাইয়া দেয়। ভারতী ও বালক আশ্বিন ১২৯৯ [লেখক-জন্ম] পূৰ্ব্বজন্মে অবশ্য একটা মহাপাপ করিয়াছিলাম নতুবা লেখক হইয়া জন্মিলাম কেন? মনের ভাবগুলো যখন বাহিরে আনিয়া ফেলিয়াছি তখন বাহিরের লোক উচিত অনুচিত যে কথাই বলে না শুনিয়া উপায় নাই। সুধাকর চন্দ্ৰ, তুমি যদি ক্ষীরোদ সমুদ্রের মধ্যেই আরামে শয়ান থাকিতে তাহা হইলে কবিদের কবিত্ব করিবার কিঞ্চিৎ ব্যাঘাত হইত বটে কিন্তু নিশীথের শৃগাল তোমার