পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্ৰন্থসমালোচনা Wese প্ৰকাশিত হইয়াছে। ইহার চিত্রগুলিও অতি কদৰ্য, কতকগুলো অনাবশ্যক চিত্ৰ দিয়া ব্যয়বাহুল্য ও স্থানীসংক্ষেপ করিবার আবশ্যক ছিল না, যেগুলি না দিলে নয়। সেইগুলি মাত্ৰ থাকিলেই ভালো ছিল। যাহা হউক, পাঠকেরা, বিশেষত গৃহিণীরা, এ গ্রন্থ পাঠ করিয়া উপকার প্রাপ্ত হইবেন। ঝংকার। গীতিকাব্য। শ্ৰীসুরেন্দ্রকৃষ্ণ গুপ্ত প্ৰণীত। মূল্য ।০ আনা। এরপ বিশৃঙ্খল কল্পনার কাব্যগ্রহ সচরাচর দেখা যায় না। স্থানে স্থানে এক-একটি ছাত্র জ্বলজ্বল করিতেছে, কিন্তু কাহার সহিত কাহার যোগ, কোথায় আগা কোথায় গোড়া কিছুই ঠিকানা পাওয়া যায় না। সমস্ত গ্ৰন্থখানির মধ্যে কেবল বরাবণ নামক কবিতাটিতে উন্মাদ উচ্ছঙ্খলতা দেখা যায় R | . উচ্ছসি। শ্ৰীযুক্ত বিপিনবিহারী মিত্র কর্তৃক প্রকাশিত। মূল্য তিন আনা মাত্র। লেখক কবিতা লিখিতে নূতন আরম্ভ করিয়াছেন বোধ হয়, কারণ তাহার ভাষা পরিপাক হইয়া উঠে নাই। বিশেষত গ্রন্থের আরম্ভ ভাগের ভাষা ও ভাববিন্যাস পরিষ্কার হয় নাই। কিন্তু গ্রন্থের শেষ ভাগে উল্লাস শীর্ষক কবিতায় কবিত্বের আভাস দেখা যায়। ইহাতে প্ৰাণের উদারতা, কল্পনার উচ্ছাস ও হৃদয়ের বিকাশ প্রকাশ পাইয়াছে। এবং ইহাতে ভাষার জড়তাও দূর হইয়াছে। ভারতী at S Sao সংগীত সংগ্ৰহ। (বাউলের গাথা)। দ্বিতীয় খণ্ড । এই গ্রহের প্রথম খণ্ড সমালোচনাকালে গ্রন্থের মধ্যে আধুনিক শিক্ষিত লোকের রচিত কতকগুলি সংগীত দেখিয়া আমরা ক্ষোভ প্রকাশ করিয়াছিলাম। তদুপলক্ষে সংগ্ৰহকার বলিতেছেন, “যখন আধুনিক অশিক্ষিত বাউলের ও বৈষ্ণবের গান সংগ্ৰহ করিব- কারণ আধুনিক ও প্রাচীন গান প্ৰভেদ করিবার বড়ো কোনো উপায় নাই- তখন সুশিক্ষিত সুভাবুক লোকের সুন্দর সুন্দর স্বভাবপূর্ণ সংগীত কেন সংগ্ৰহ করিব না। আমি বুঝিতে পারি না। এই সংগ্রহের লক্ষ্য ও ভাবের বিরোধী না হইলেই আমি যথেষ্ট মনে করি।” এ সম্বন্ধে আমাদের যাহা বক্তব্য আছে নিবেদন করি। প্রথমত গ্রন্থের নাম হইতে গ্রন্থের উদ্দেশ্য বুঝা যায়। এ গ্রন্থের নাম শুনিয়া মনে হয়, বাউল সম্প্রদায় -রচিত গান অথবা বাউল দিগের অনুকরণে রচিত গান-সংগ্ৰহই ইহার লক্ষ্য। তবে কেন ইহাতে শঙ্করাচার্য রচিত ‘মূঢ় জহীহি ধনাগমাতৃষ্ণাং” ইত্যাদি সংস্কৃত গান নিবিষ্ট হইল ? মুলী জালালউদ্দিন-রচিত “আহে বন্দে খোদা, যুরা দুচা কারো” ইত্যাদি দুর্বোিধ উর্দুগান ইহার মধ্যে দেখা যায় কেন! গ্রন্থের উদ্দেশ্যবহির্ভূত গান আরও অনেক এই গ্রহে দেখা যায়। একটা তো নিয়ম রক্ষা, একটা তো গণ্ডি থাকা আবশ্যক। নহিলে, বিশ্বে যত গান আছে সকলেই তো এই গ্রহের মধ্যে স্থান পাইবার জন্য নালিশ উপস্থিত করিতে পারে। দ্বিতীয় কথা- আমরা কেন যে - প্রাচীন ও অশিক্ষিত লোকের রচিত সংগীত বিশেষ মনোযোগ সহকারে দেখিতে চাই তাহার কারণ আছে। আধুনিক শিক্ষিত লোকদিগের অবস্থা পরস্পরের সহিত প্ৰায় সমান। আমরা সকলেই একত্রে শিক্ষা লাভ করি, আমাদের সকলেরই হৃদয় প্রায় এক হাঁচে ঢালাই করা। এই চমৎকৃত হই না। কিন্তু, প্রাচীন সাহিত্যের মধ্যে যদি আমরা আমাদের প্রাণের গানের একটা মিল যুঁজিয়া পাই, তবে আমাদের কী বিস্ময়, কী আনন্দ। আনন্দ কেন হয়? তৎক্ষণাৎ সহসা মুহুর্তের জন্য বিদ্যুতালোকে আমাদের হৃদয়ের অতি বিপুল স্থায়ী প্রতিষ্ঠাভূমি আমরা দেখিতে পাই বলিয়া। আমরা দেখিতে পাই, মগ্নতয়ী হতভাগ্যের ন্যায় আমাদের এই হৃদয় ক্ষণস্থায়ী । যুগবিশেষের অভ্যাস ও শিক্ষা নামক খরস্রোতে ভাসমান বিচ্ছিন্ন কাষ্ঠখণ্ড আশ্ৰয় করিয়া ভাসিয়া