পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WeSbr রবীন্দ্র-রচনাবলী এইজন্য কালীপ্রসন্নবাবুর মতামত ও সুমহৎ উপদেশ বাক্যাবলি হইতে পৃথক করিয়া আমরা স্বরূপত তাঁহাকেই দেখিতে ইচ্ছা করি। যাহারা বড়োলোকের জীবনী লিখিতে প্ৰবৃত্ত হইয়াছেন তাহদের সসম্রাম বিনয়ের সহিত আপনাকে অন্তরালে রাখা নিতান্ত আবশ্যক। অন্যত্র তাহদের নিজের কথার প্রতি সাধারণের মনোযোগ আকর্ষণ করিবার চেষ্টা করিলে বিরক্তিভাজন হইতে হয় । অগ্রহায়ণ ১২৯৯ অশোকচারিত। শ্ৰীকৃষ্ণবিহারী সেন প্রণীত। এই গ্ৰন্থখানি সকলেরই পাঠ করা উচিত। এইরূপ গ্ৰন্থ বঙ্গভাষায় দুর্লভ। শুধু বঙ্গভাষায় কেন, কোনো বিদেশীয় গ্রন্থে অশোকের চরিত এত বিস্তুতরাপে বৰ্ণিত হয় নাই। প্রসঙ্গক্রমে ইহাতে যেসকল জ্ঞাতব্য বিষয় সন্নিবিষ্ট হইয়াছে, তাহা সমস্ত জানিতে হইলে অনেকগুলি গ্রন্থ পাঠ করিতে হয়। তাহা সকলের সাধ্যায়ত্ত নহে। গ্রন্থকার তাহার অসাধারণ পাণ্ডিত্যের ফল একাধারে সন্নিবিষ্ট করিয়া, সাধারণ পাঠকবর্গের মহৎ উপকার করিয়াছেন। এই অশোকচারিত পাঠ করিলে তৎকালীন ভারতবর্ষের ইতিহাস, অবস্থা, ভাষা, সভ্যতার উন্নতি প্রভৃতি অনেক বিষয়ের আভাস প্রাপ্ত হওয়া যায়। এই গ্রন্থের আর-একটি গুণ এই যে, ইহা অতি সহজ প্ৰাঞ্জল ভাষায় লিখিত। গ্রন্থের উপসংহারে, অশোকচারিত সম্বন্ধীয় একটি ক্ষুদ্র নাটিকা সংযোজিত হইয়াছে। ইহাকে একটি ফাউ” স্বরূপ গণ্য করা যাইতে পারে। ফাউ’টিও ফেলার সামগ্ৰী নহে- উহাতেও একটু বেশ রস আছে। পঞ্চামৃত। শ্ৰীতারাকুমার কবিরত্ন প্রণীত। এই গ্রন্থে আমাদের দেশের পূর্বতন ভগবদভক্ত মহাত্মাদিগের যে-সকল কল্যাণপ্ৰদ বচন উদধূত হইয়াছে তাহা বাছা বাছা রত্ন। এই গ্ৰন্থখানি কবিরত্ন মহাশয় অনাথ কুণ্ঠরোগীদিগের উপকারার্থ উৎসর্গ করিয়াছেন। ইহার জন্য তিনি তো সকলের কৃতজ্ঞতাভাজন হইবেনই; কিন্তু জনসমাজে একজন যদি শারীরিক ব্যাধিতে প্ৰপীড়িত হয়, তবে তাহার তুলনায় শতসহস্ৰ ব্যক্তি মানসিক ব্যাধিতে প্ৰপীড়িত। শেষোক্ত ব্যাধির ঔষধ যদি কিছু থাকে, তবে তাহা শুভানুধ্যায়ী দয়াদ্রাচিত্ত সাধু ব্যক্তিদিগের অমৃতময় আশ্বাসবাণী এবং উপদেশ। বর্তমান গ্রন্থের প্রত্যেক পৃষ্ঠায় শেষোক্তরূপ মহৌষধ স্তরে স্তরে সাজানো রহিয়াছে। এইজন্য কবিরত্ন মহাশয়ের বিরচিত গ্ৰন্থ জয়যুক্ত হউক, ইহা আমাদিগের আন্তরিক প্রার্থনা। ter পৌষ ১২৯৯ কঙ্কাবতী । ত্ৰৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। এই উপন্যাসটি মোটের উপর যে আমাদের বিশেষ ভালো লাগিয়াছে তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। লেখাটি পাকা এবং পরিষ্কার। লেখক অতি সহজে সরল ভাষায় আমাদের কৌতুক এবং করুণা উদ্রেক করিয়াছেন এবং বিনা আড়ম্বরে আপনার কল্পনাশক্তির পরিচয় দিয়াছেন। গল্পটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে প্রকৃত ঘটনা এবং দ্বিতীয় ভাগে অসম্ভব অমূলক অদ্ভুত রসের কথা। এইরূপ অদ্ভুত রূপকথা ভালো করিয়া লেখা বিশেষ ক্ষমতার কাজ। অসম্ভবের রাজ্যে যেখানে কোনো বাঁধা নিয়ম, কোনো চিহ্নিত রাজপথ নাই, সেখানে স্বেচ্ছবিহারিণী কল্পনাকে একটি নিগুঢ় নিয়মপথে পরিচালনা করিতে গুণাপনা চাই। কারণ রচনার