পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থসমালোচনা W9S,6 এক তো, আমরা পাঠকদিগকে ভিক্ষণী ও কীেপীনধারী হইতে উপদেশ দিই না, দ্বিতীয়ত, বাংলার নিস্তেজ পয়ার ছন্দে সে উপদেশ শুনিতেও শ্রুতিমধুর হয় না। একস্থানে দেখা গোল “পাণিদ্বয়ং ভোকুমমন্ত্রয়তাঃ” পদটিকে অনুবাদে “আহারের পাত্ররাপ শুধু বাহুদ্বয়” করা হইয়াছেঃ বলা বাহুল্য, এ স্থলে পাণিদ্বয়ের স্থলে বাহুদ্বয় শব্দের প্রয়োগ সমুচিত হয় নাই। : নীতিশতক বা সরল পদ্যানুবাদসহ চাণক্যশ্লোক। শ্ৰীঅবিনাশচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত। মূল্য দুই আনা মাত্র। . চাণক্যশ্লোকের নীতিগুলি যে নূতন তাহা নহে। কিন্তু তাহার প্রয়োগনৈপুণ্য ও সংক্ষিপ্ততাগুণে তাহা আমাদের দেশে সাধারণের মধ্যে প্রচলিত হইয়াছে। যে-সকল উপদেশ জীবনযাত্রায় সর্বদা ব্যবহার্য তাহাকে সরল লঘু এবং সুডৌল করিয়া গড়িতে হয়; তাহাকে মুখে মুখে বহনযোগ্য এবং হাতে হাতে চালনযোগ্য করা চাই; চাণক্যশ্লোকের সেই গুণটি আছে, এইজন্য তাহা আমাদের সংসারের কাজে পুরাতন মুদ্রার মতো চলিয়া আসিতেছে। কিন্তু আমরা পূর্বেই ব্যক্ত করিয়াছি বাংলা ছন্দে সংক্ষিপ্ততা ও ত্বরিতগতি না থাকাতে সংস্কৃতের জোড়া কথাকে ভাঙিয়া এবং ছোটাে কথাকে বড়ো করিয়া শুরু কথার গুরুত্ব এবং লঘু কথার লঘুত্ব উভয়ই নষ্ট করা হয়। মহতের আশ্রয়ে থাকিলে সকল সময়ে যদি বা কোনো প্ৰত্যক্ষ উপকার না পাওয়া যায়। তথাপি তাহার অপ্রত্যক্ষ সুফল আছে। এই কথাটিকে চাণক্য সংক্ষেপে সুনিপুণভাবে বলিয়াছেন।- সেবিতব্যে মহাবৃক্ষঃ ফলচ্ছায়াসমন্বিতঃ। যদি দৈবাৎ ফলং নাস্তি ছায়া কেন নিবাৰ্যতে ৷ মনে রাখিবার এবং আবশ্যকমতো প্রয়োগ করিবার পক্ষে এ শ্লোকটি কেমন উপযোগী! ইহার বাংলা অনুবাদে মূলের উজ্জ্বলতা এবং লাঘবতা হ্রাস হইয়া এরূপ শ্লোকের কার্যকারিতা নষ্ট করিয়াছে। ফল আর ছায়া যাতে আছে। এ উভয়, এরূপ তরুর তলে লইবে আশ্রয়। দৈববশে ফল যদি নাহি মিলে তায়, সুশীতল ছায়া তার বলে কে ঘুচায়। দুটিমাত্ৰ ছত্রে ইহার অনুবাদ হওয়া উচিত ছিল। সাধনা ৷ S७०S দেওয়ান গোবিন্দরাম বা দুর্গোৎসব। শ্ৰীযোগেন্দ্রনাথ সাধু-কর্তৃক প্রকাশিত। মূল্য এক টাকা। গ্ৰন্থখানি একটি রীতিমতো উপন্যাস। লেখক আয়োজনের ত্রুটি করেন নাই। ইহাতে ভীষণ অন্ধকার রাত্রি, ঘন অরণ্য, দসু্য পাতালপুরী, ছদ্মবেশিনী সাধবী স্ত্রী, কপটাচারী পাষণ্ড এবং সর্ববিপৎলঙ্ঘনকারী ভাগ্যবান সাহসী সাধু পুরুষ প্রভৃতি পাঠক ভুলাইবার বিচিত্ৰ উপকরণ আছে। গ্ৰন্থখানির উদ্দেশ্যও সাধু, ইহাতে অনেক সদুপদেশ আছে এবং গ্রন্থের পরিণামে পাপের পতন ও পুণ্যের জয় প্রদর্শিত হইয়াছে। কিন্তু প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত এ কথা একবারও ভুলিতে পারি নাই, যে, গ্ৰন্থকার পাঠককে ভুলাইবার চেষ্টা করিতেছেন। দেওয়ানজি হইতে উজ্জ্বলা পর্যন্ত কেহই সত্যকার সজীব মানুষের মতো হয় নাই, তাহারা যে-সকল কথা কয় তাহার মধ্যে সর্বদাই লেখকের প্রম্পটিং শুনা যায় এবং ঘটনাগুলির মধ্যে যদিও সত্বরতা আছে কিন্তু অবশ্যসম্ভাব্যতা নাই। এইখানে স্পষ্ট করিয়া বলিয়া রাখা আবশ্যক, যে, উপন্যাসের সম্ভব অসম্ভব সম্বন্ধে আমাদের কোনোপ্রকার বাধা মত নাই। লেখক আমাদের বিশ্বাস জন্মাইতে পারিলেই ՏԳ || 8օ