পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ጓ©bዖ রবীন্দ্র-রচনাবলী নব্যভারত। আশ্বিন ও কার্তিক। [১২৯৮] “চৈতন্যচরিত ও চৈতন্যধর্ম’; বহুকাল হইতে এই প্ৰবন্ধ নব্যভারতে প্ৰকাশিত হইতেছে। চৈতন্যের জীবনচরিত ও ধর্ম সম্বন্ধে লেখক একটি কথাও বাকি রাখিতেছেন না। কিন্তু ইহার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিক বিচার দ্বারা সত্য মিথ্যা নির্বাচন করিয়া গেলে ভালো হইত। যাহা হীেক, লেখকের পরিশ্রম এবং বিপুল সংগ্রহের জন্য তীহাকে ধন্যবাদ দিতে হয় এবং সেইসঙ্গে সম্পাদককে বলিতে হয় এরাপ বিস্তারিত গ্ৰন্থ সাময়িক পত্রে প্রকাশের যোগ্য নহে। “সঁওতালের বিবাহ প্ৰণালী” প্ৰবন্ধটি বিশেষ কৌতুকজনক। ‘মহা তীর্থযাত্ৰা” লেখকের নরোয়ে ভ্ৰমণ বৃত্তান্ত। বর্ণনাংশ বড়ো বেশি সংক্ষিপ্ত এবং লেখকের হৃদয়াবেগ অতিরিক্ত মাত্রায় প্রবল। শ্ৰীযুক্ত সখারাম গণেশ দেউস্কর মহাশয় “শিকাৰদ’ প্ৰবন্ধে শকাব্দ প্রবর্তনের ইতিহাস সমালোচনা করিয়াছেন। সাধারণের বিশ্বাস, এই অব্দ বিক্ৰমাদিত্য-কর্তৃক প্রচলিত। লেখক প্রমাণ করিতেছেন যে, এক সময়ে মধ্য এশিয়াবাসী শক জাতি (ইংরাজিতে যাহাদিগকে সাঁইথিয়ানস বলে) ভারতে রাজ্য স্থাপন করিয়া এই অব্দ প্রচলিত করে। লেখক প্রাচীন গ্ৰন্থ হইতে অনেকগুলি প্রমাণ আবিষ্কার করিয়াছেন। রচনাটি অতিশয় প্রাঞ্জল হইয়াছে। সাধারণত বাংলা সাময়িক পত্রে পুরাতত্ত্ব প্ৰবন্ধগুলি অসংখ্য তর্কজালে জড়িত হইয়া পাঠকসাধারণের পক্ষে যেরাপ একান্ত দুৰ্গম ও ভীতিজনক হইয়া উঠে। এ লেখাটিকে সে অপবাদ দেওয়া যায় না- আশ্চর্য এই যে প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত সুসংলগ্ন সংক্ষিপ্ত এবং বোধগম্য। “আত্মসন্ত্ৰম” প্ৰবন্ধ হইতে আমরা দুই-এক জায়গা উদধূত করি। বিলাতি পণ্যদ্রব্য ব্যবহার সম্বন্ধে লেখক লিখিতেছেন, “তুমি যাহার কাপড় পরিয়া আরাম পাও, যাহার হার্মেনিয়ম বাজাইয়া পুলকিত হও, যাহার রেলগাড়ি ও টেলিগ্রাফ দেখিয়া চমকিয়া যাও, যাহার পমেটাম ল্যাভেন্ডার মাথায় দিয়া কৃতাৰ্থ মনে কর, যাহার ফেটিঙে চড়িয়া । স্বৰ্গসুখ লাভ কর, যাহার জাহাজ কামান তোমার দেবকীর্তি বোধ হয় তাহার সহিত তোমার কোনো সম্বন্ধ থাকুক বা না থাকুক, তাহার গোলাম তোমাকে হইতেই হইবে।. ইংরাজের শিল্প সম্বন্ধে আমার এ বিশ্বাস অটল যে, তাহার এ দেশের অর্ধেক আধিপত্য রেল ও সিন্টমার হইতে হইয়াছে; কারণ, সাধারণে এইগুলি সর্বদা দেখিয়া থাকে ও বিস্ময়জনক মনে করে, সুতরাং ইহাতেই নিজের নিজের বল, সাহস ও অভিমান হারায়।” সাহিত্য। দ্বিতীয় ভাগ। আশ্বিন। [১২৯৮] এই সংখ্যায় ফুলদানী’ নামক একটি ছোটাে উপন্যাস ফরাসীস হইতে অনুবাদিত হইয়াছে। প্ৰসিদ্ধ লেখক প্ৰস্পর মেরিমে -প্ৰণীত এই গল্পটি যদিও সুন্দর। কিন্তু ইহা বাংলা অনুবাদের যোগ্য নহে। বর্ণিত ঘটনা এবং পাত্ৰগণ বড়ো বেশি যুরোপীয়-ইহাতে বাঙালি পাঠকদের রসাস্বাদনের বড়োই ব্যাঘাত করিবে। এমন-কি, সামাজিক প্রথার পার্থক্যহেতু মূল ঘটনাটি আমাদের কাছে সম্পূর্ণ মন্দই বোধ হইতে পারে। বিশেষত মূল গ্রন্থের ভাষা-মাধুর্য অনুবাদে কখনোই রক্ষিত হইতে পারে না, সুতরাং রচনার আক্রটুকু চলিয়া যায়। ‘শিক্ষিতা নারী” প্রবন্ধে শ্ৰীমতী কৃষ্ণভাবিনী বিস্তর গবেষণা প্রকাশ করিয়াছেন। কিন্তু আমাদের বিবেচনায় নারীদের অর্থে পার্জনশক্তির দৃষ্টান্তস্বরূপে মার্কিন স্ত্রী-ডাক্তার স্ত্রী-অ্যাটনি এবং ইংরাজ স্ত্রী-গ্ৰন্থকারদিকের আয়ের আলোচনা করা নিম্মল। বড়ো বড়ো ধনের অঙ্ক দেখাইয়া আমাদিগকে মিথ্যা প্রলোভিত। করা হয় মাত্র। জর্জ এলিয়ট তাহার প্রথম গ্ৰন্থ বিক্রয় করিয়া লক্ষ টাকা মূল্য পাইয়াছিলেন। যদি নাও পাইতেন তাহাতে তাহার গৌরবের হানি হইত না। এমন দৃষ্টান্ত শুনা গিয়াছে অনেক পুরুষ গ্রন্থকার তাঁহাদের জগদবিখ্যাত গ্রন্থ নিতান্ত যৎসামান্য মূল্যে বিক্রয় করিয়াছেন। দ্বিতীয় কথা এই পুরুষের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করিয়া অর্থে পার্জন স্ত্রীলোকের কার্য নহে। যদি দুর্ভাগ্যক্রমে কোনো স্ত্রীলোককে বাধ্য হইয়া স্বয়ং উপার্জনে প্ৰবৃত্ত হইতে হয় তবে তাহাকে দোষ দেওয়া বা বাধা দেওয়া উচিত হয় না। স্বীকার করি।- "কিন্তু সংসার রক্ষা করিতে হইলে সাধারণ স্ত্রীলোককে