পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা V93Գ সৌন্দৰ্যও প্ৰেমপরিপূর্ণ ধৈর্যের সহিত প্ৰতীক্ষা করিতে জানে; অন্ধবল তাহার সম্মুখে দন্ত প্ৰকাশ করে বলিয়া বলের প্রতি তাহার কোনো ঈর্ষা নাই; সে সেই খেদে বলিষ্ঠ হইয়া বলকে অতিক্রম করিতে চায় না, সুন্দর হইয়া অতি ধীরে ধীরে জয়লাভ করে। যিশু খৃস্ট যেরূপ মৃত্যুর দ্বারা অমর হইয়াছেন সৌন্দৰ্য সেইরাপ উৎপীড়িত হইয়াই জয়ী হয়। অধৈৰ্য হইবার আবশ্যক নাই; নারীর আদর কালক্ৰমে আপনি বাড়িবে, সেজন্য নারীদিগকে কোমর বাঁধিতে হইবে না; বরঞ্চ আরও অধিক সুন্দর হইতে হইবে। রাবণের ঘরে সীতা অপমানিতা; সেখানে কেবল পশুবল, সেখানে সীতা বন্দিনী। রামের ঘরে সীতা সম্মানিতা; সেখানে বলের সহিত ধর্মের মিলন, সেখানে সীতা স্বাধীনা। ধৈর্যকঠিন প্রেমকোমল সৌন্দর্যের অলক্ষ্য প্রভাবে মনুষ্যত্ব বিকশিত হইতে থাকিবে এবং সেই মনুষ্যত্ব বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে যথার্থ পৌরুষ যখন পরিণত হইয়া উঠিবে, তখন এই উদারহাদয় পৌরুষই অনাদরের হাত হইতে সৌন্দর্যকে উদ্ধার করিবে; এজন্য নারীদিগকে লড়াই করিতে হইবে না। ... - |- সমালোচ্য প্রবন্ধের দুই-একটা বাংলা কথা আমাদের কানে নিরতিশয় বিলাতি রকম ঠেকিয়াছে এখানে তাহার উল্লেখ না করিয়া থাকিতে পারিলাম না, মাননীয়া লেখিকা মার্জনা করিবেন। ‘কৰ্ষিত বিচারশক্তি” “মানসিক কৰ্ষণ’ শব্দগুলা বাংলা নহে। একস্থানে আছে ‘সংসারে যে গুরুতর কর্তব্য তাহার উপর অপিত হয়, তজন্য, সমভাবময় হৃদয়ের ন্যায়, কর্ষিত মস্তকেরও একান্ত আবশ্যক।” সমভাবময় হৃদয়’ কোন ইংরাজি শব্দের তর্জমা ঠাহর করিতে পারিলাম না। সুতরাং উহার অর্থ নিৰ্ণয় করিতে অক্ষম হইলাম; কৰ্ষিত মস্তক কথাটার ইংরাজি মনে পড়িতেছে কিন্তু বাংলাভাষার পক্ষে এ শব্দটা একেবারে গুরুপাক । “সোম’ নামক প্রবন্ধে বৈদিক সোমরস যে সুরা অর্থেই ব্যবহৃত হইত না লেখক তাহাই প্রমাণ করিতে প্ৰস্তুত হইয়াছেন। ‘সোম” বলিতে কী বুঝাইত ভবিষ্যৎসংখ্যক সাহিত্যে তাহার আলোচনা হইবে লেখক আশ্বাস দিয়াছেন। আমরা ঔৎসুক্যের সহিত প্ৰতীক্ষা করিয়া রহিলাম। ‘রায় মহাশয়’ গল্পে বাংলার জমিদারি শাসনের নিষ্ঠুর চিত্র বাহির হইতেছে। ক্ষমতাশালী লেখকের রচনা পড়িয়া সমস্তটা অত্যন্ত সত্যাবৎ প্রতীয়মান হয়; আশা করি, ইহার মধ্যে কিছু কিছু অত্যুক্তি আছে। शॉन ७२३z नवाडावट । भांच [S २०v] আলোক কি অন্ধকার?” সম্পূর্ণ অন্ধকার। এবং এরূপ লেখায় সে অন্ধকার দূর হইবার কোনো সম্ভাবনা নাই। কী করিলে ভারতবর্ষে জাতীয় জীবন সংঘটন হইতে পরিবে লেখক তাহারই আলোচনা করিয়াছেন। অবশেষে সিদ্ধান্ত করিয়াছেন “হিন্দুধর্মের ন্যায়। আর ধর্ম নাই, এমন কল্পবৃক্ষ আর জন্মিবে না- যাহার যে প্রকার ধ্যান-ধারণার শক্তি তিনি সেই প্রকারেই সাধনা করিতে পারেন; এমন ধর্ম আর কোথায়? ছিন্নভিন্ন ভারতকে আবার যদি কেহ এক করিতে সে সনাতন হিন্দুধর্ম।” লেখক মনে করিতেছেন কথাটা সমস্ত পরিষ্কার হইয়া গেল এবং আজ থাকিবে, কিন্তু তাহ ঠিক নহে। হিন্দুধর্ম কী? তাহা কবে ভারতবর্ষে ছিল না? তাহা কবেই বা ভারতবর্ষ হইতে চলিয়া গেল? তাহাকে আবার কোথা হইতে আনিতে হইবে এবং কোন অবতার” আনিবেন? যাঁহার যেরূপ শক্তি তিনি তদনুসারেই সাধনা করিতে পরিবেন এমন বছর।াপী ধর্মের মধ্যে ঐক্যবন্ধন কোনখানে ? এবং এই হিন্দুধর্মের প্রভাবে আদিম বৈদিক সময়ের পরে কোন কালে ভারতবর্ষে জাতীয় ঐক্য ছিল?