পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা VGs অর্থাৎ সোম অর্থে ব্ৰহ্মজ্ঞান ও ব্রহ্মানন্দ। লেখক বলিতেছেন, ‘ঋগ্বেদের প্রথমেই মধুচ্ছন্দা নামক এক ঋষির কয়েকটি মন্ত্র আছে সেই মন্ত্রগুলির আদ্যন্ত আলোচনা করিলে, মধুচ্ছন্দার সোমযাগ কীরূপ ছিল, পাঠক তাহা বুঝিতে পরিবেন।” এবারকার সংখ্যায়, মধুচ্ছদা ঋষি কে, তাহারই আলোচনা হইয়াছে। সোমযাগ কী তাহা জানিবার জন্য কৌতুহল রহিল। উপাধি-উৎপাত’ প্ৰবন্ধে লেখক মনের আক্ষেপ তেজের সহিত প্ৰকাশ করিয়াছেন। যাঁহাদের আত্মসম্মান আপনাতেই পর্যাপ্ত, যাহারা রাজসম্মান চাহেন না, এমন-কি, প্রত্যাখ্যান করেন, তাহদের মতো মানী লোক জগতে সর্বত্রই দুর্লভ। কিন্তু সাধারণত যাহারা রাজোপাধি লাভ করিয়া গীেরব অনুভব করেন তাহারা কি এতই তীব্র আক্রমণের যোগ্য! তাহদের মধ্যে কি দেশের অনেক যথার্থ সারবান যোগ্য লোক নাই? উপাধি যদি স্থলবিশেষে অযোগ্য পাত্রে বর্ষিত হয় তবে সে রাজার দোষকিন্তু যাহারা রাজসম্মানের চিহ্নস্বরূপ উপাধি প্ৰাপ্ত হইয়া সন্তোষলাভ করেন তাহাদিগকে দোষ দেওয়া যায় না। কেবল রাজােদর কেন, পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায় জনােদরও অনেক সময় যোগ্য পাত্রকে উপেক্ষা করিয়া অযোগ্য পাত্রে ন্যস্ত হয়, তাই বলিয়া জনােদর যে নিতান্তই অবজ্ঞার সামগ্ৰী তাহা বলিতে পারি না। সম্মান, আদর মনুষ্যের নিকট চিরকাল প্রিয়, মানুষের এ দুর্বলতার জন্য স্থলবিশেষে ঈষৎ হাস্যের উদ্রেক হইতে পারে। কিন্তু এতটা তর্জন কিছু যেন বেশি হইয়াছে বলিয়া মনে হয়। বিশেষত, বঙ্কিমবাবু গবর্মেন্টের হস্ত হইতে রায় বাহাদুর উপাধি গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া লেখক যে আক্ষেপ প্ৰকাশ করিয়াছেন তাহা আমাদের নিকট নিতান্ত অযথা বলিয়া বোধ হয়। কারণ, বঙ্কিমবাবু বঙ্গদেশের দেশমান্য লেখক বলিয়া গবর্মেন্ট তাঁহাকে উপাধি দেন নাইতিনি গবর্মেন্টের পুরাতন কর্মচারী- তাহার যোগ্যতা ও কর্তব্যনিষ্ঠায় সন্তুষ্ট হইয়া গবর্মেন্ট যদি তাহাকে যথোচিত সম্মানচিহ্ন দান করেন তাহ অবজ্ঞা করিলে তাহার পক্ষে অত্যন্ত অশোভন এবং অন্যায় কাৰ্য হইত সন্দেহ নাই। বঙ্কিমবাবু দেশের জন্য যাহা করিয়াছেন দেশের লোক তজন্য তঁহাকে অত্যন্ত উচ্চ আসন দিয়াছে’- তিনি রাজার জন্য যাহা করিয়াছেন সে কাজ স্বতন্ত্র প্রকৃতির, তাহার পুরস্কারও স্বতন্ত্র শ্রেণীর- তাহার সহিত হৃদয়ের বিশেষ যোগ নাই, সে সমস্তই যথানির্দিষ্ট নিয়মানুগত- অতএব তাহা লইয়া ক্ষোভ করিতে বসা মিথ্যা। উপাধি লওয়া সম্বন্ধে কার্লাইল ও টেনিসনের সহিত বঙ্কিমবাবুর তুলনা ঠিক খাটে নাই। যাহা হউক, লেখাটি ভালো হইয়াছে সন্দেহ নাই। বন্ধু গল্পটির মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের নিবন্ধ শ্রাবণ মাস কেশ একটি সংগীতমিশ্ৰিত সৌন্দৰ্য নিক্ষেপ করিয়াছে।- "আদর্শ সমালোচনা”। বোধ করি এমন ভাগ্যবান সমালোচক কখনো জন্মোন নাই যিনি আপন কর্তব্য কাৰ্য সম্পন্ন করিয়া অক্ষত শরীরে পৃথিবী হইতে অপসৃত হইতে পারিয়াছেন। যখন উক্ত অপ্রিয় কর্তব্য স্কন্ধে লইয়াছি তখন আমরাও ষে সহজে অব্যাহতি পাইব এমন দুরাশা আমাদের নাই। অতএব আদর্শ সমালোচনা-লেখক যে গুপ্তভাবে আমাদের প্রতি বিদ্রািপবাণ নিক্ষেপ করিতে চেষ্টা করিয়াছেন। সেজন্য আমরা লেশমাত্র আশ্চর্য বা দুঃখিত হই নাই। দুঃখের বিষয় এই যে, লেখকের নিপুণতার আমরা প্রশংসা করিতে পরিলাম না। আমরা বন্ধুভাবে তাঁহাকে পরামর্শ দিতে পারি যে, তিনি যদি রসিকতা প্রকাশের নিম্ফল চেষ্টা না করিয়া অন্য কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন তো হয়তো কৃতকাৰ্য হইতেও পারেন। কালিদাস ও সেক্ষপিয়র’ লেখার মধ্যে যথেষ্ট চিন্তাশীলতা আছে, আমরা ইহার পরিণামের জন্য অপেক্ষা করিয়া রহিলাম। আমার “স্বরচিত” লয়তত্ত্ব সম্বন্ধে আমাদের যাহা বক্তব্য তাহা সাহিত্যেই লিখিয়া পঠাইয়াছি।’ এখানে কেবল সংক্ষেপে একটি কথা বলিয়া রাখি। অনুরাগ কী করিয়া নিয়নুরাগে লইয়া যাইবে আমরা বুঝিতে পারি না। চন্দ্রনাথবাবু তাহার উত্তরে লিখিয়াছেন, ছোটাে অনুরাগ যখন স্বদেশানুরাগ প্রভৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন বা বিপরীত প্ৰকৃতির বড়ো ». A. Tónss: NY, e. sÞa-8Je