পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Veebr রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী প্রাচীন বৈষ্ণব কাব্যের পরিচয় দিয়াছেন। শ্ৰীযুক্তবাবু শশধর রায় ‘বর্ণ” প্রবন্ধে মনুষ্য-ত্বকের বর্গোৎপত্তির কারণ আলোচনা করিয়াছেন। পাঠকদের বোধ হয়, এবং লেখকও স্বীকার করিয়াছেন, প্ৰবন্ধ-বৃত মত পরীক্ষা ও প্রমাণের অপেক্ষা রাখে। ‘ভৌতিক নেট” গল্পটি সুনিপুণ। ছোটো কথা, আকারে অতি ছোটো এবং উপদেশে অত্যন্ত বড়ো বটে। কিন্তু বিষয়ে অতিশয় পুরাতন এইজন্য রচনার বিশেষরাপ নৈপুণ্য না থাকায় তাহা নিরর্থক। উকিল কলঙ্ক’-নামক ক্ষুদ্র প্রবন্ধে লেখক ব্যঙ্গচ্ছলে ওকালতি করিয়াছেন; সব শেষে তাহাতে এই কথাটা বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছেন যে, নীতি-উপদেষ্টাগণ নিজের হাতে ধর্মনীতির যে সোজা সোজা চক-কাটা ঘর বানাইয়াছেন, বিচিত্ৰ মনুষ্য-চরিত্র তাহার মধ্যে সঞ্চারণ করিতে পারে না এবং জোর করিয়া চালনা করিতে গেলে হিতে বিপরীত হইয়া উঠে। खाड़ी 部 জ্যেষ্ঠ ১৩০৫ নব্যভারত। বৈশাখ (১৩০৫] “কি চাই কি পাই?” প্ৰবন্ধটি পাঠ করিয়া আমরা সম্পাদকের জন্য চিন্তিত হইয়া উঠিয়াছি। দোষদুর্বলতা আমাদের সকলেরই আছে এবং এই মাটির পৃথিবীতে দোষগুণে জড়িত আত্মীয়বন্ধুবান্ধবদিগকে লইয়া আমরা কোনোপ্রকারে সন্তোষ অবলম্বন করিয়া আছি। কিন্তু নব্যভারতের ষোড়শবার্ষিক জন্মদিনে সম্পাদক মহাশয় বলিতেছেন। ‘পঞ্চদশ বর্ষ আমি কেবল আদর্শ খুজিতেছি?” মূঢ়সাধারণে ভুল করিত তিনি কেবল তাহার মাসিক পত্রের জন্য গ্রাহক ও লেখক খুজিতেছেন। কিন্তু লেখক বলেন “সাহিত্যের সেবা। আমার কেবল কথার কথা, উপলক্ষ মাত্র; এমন লোক সম্মুখে পড়ে নাই, যিনি পরের সেবা করিতে করিতে আপনার স্বাৰ্থ ভুলিয়াছেন, যিনি অমান চিত্তে দেশের জন্যে সর্বস্ব বিসর্জন দিতে পারিয়াছেন- যিনি চরিত্রে অটল, পুণ্য পবিত্রতায় উজ্জ্বল, যিনি দ্বেষহিংসা পরশ্ৰীকাতরতাহীন, যিনি পূর্ণাদর্শ।’ এইরূপে অনাহূত পরকে যাচাই করিয়া বেড়াইবার অনাবশ্যক কাৰ্যভার নিজের স্কন্ধে গ্রহণ করিয়া পরীক্ষক মহাশয় এতই কষ্ট পাইতেছেন যে, আপনি নাট্যমঞ্চের উপর চড়িয়া বসিয়া সকলকে বলিতেছেন “কাতরে পা ধরিয়া প্রার্থনা করিতেছি ঘূণা লজ্জা পরিত্যাগ করিয়া আমার সম্মুখে আদর্শ রূপে দাঁড়াও ” তাহার কাতরতা দেখিয়া বিচলিত হইতে হয়। কিন্তু ঘূণালজ’ ত্যাগ করা সহজ নহে। এমনকি, তিনিও তাহা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করিতে পারেন নাই। বর্তমান প্রবন্ধে আদর্শরূপে দাঁড়াইতে গিয়া তিনিও স্থানে স্থানে পরমসাধুতাসম্মত বিনয়ের আবরণ রাখিয়াছেন; তিনিও বলিয়াছেন “আমি পতিত, মলিন, পাপে জর্জরিত— আমি অসারের অসারে মণ্ডিত- ঘূণিত, মলিন। পরিত্যক্ত, নির্থিত, লাঞ্ছিত হওয়াই আমার পক্ষে সাজে৷ ভালো।” বিনয়ের সাধারণ অত্যুক্তিগুলিকে কেহ কখনো সত্য বলিয়া গ্ৰহণ করে না- সম্পাদক মহাশয়ও সেরাপ আশঙ্কা করেন নি। যদিবা আশঙ্কা থাকে লেখক তাহার প্রচুর প্রতিকার করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন “স্বাৰ্থ ভুলিয়া পরার্থ নীচত্ব ভুলিয়া মহত্ত্ব, পশুত্ব ভুলিয়া চিন্ময়ত্ব, রিপুর উত্তেজনা ভুলিয়া সংযম পাইব আশায়, তোমার আহবানে, আমি কাঙাল, স্বেচ্ছায় দারিদ্র্যের মুকুট মস্তকে বহিয়া, আত্মীয়দিগের মায়ামমতায় ছাই ঢালিয়া দুটিয়া আসিয়াছিলাম।” ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত আর দুটি-চারটি আছে মাত্র এবং সেই ক্ষণজন্ম আদর্শ পুরুষদের ন্যায় আমাদের সম্পাদক মহাশয়ও কাঙাল, এবং তিনিও মায়ামমতায় ছাই ঢালিয়া ছুটিয়া আসেন। কিন্তু এ কথাটিও ভুলিতে পারেন নাই যে, যে দারিদ্র্য তিনি মন্তকে বহিয়াছেন তাহা মুকুট"- এবং সেই মুকুট নাড়া দিয়া তিনি অদ্য আমাদের লজা ততই ঘুচিয়াছে- সকলকে ধিক্কার দিয়া বলিয়াছেন সোধে কি আমি নৈরাশ্যের আগুন