পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাময়িক সারসংগ্ৰহ AYA ইংরাজের লোকপ্ৰিয়তা কিন্তু পৃথিবীসুন্ধ লোকের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ইংরাজ এক দৃঢ় বিশ্বাস মনে পোষণ করিয়া থাকেন, যে, তাহারা বড়ো লোকপ্ৰিয়। যেখানে পদাৰ্পণ করেন। সেখানকার লোকেই তাহাদিগকে মা-বাপ। বলিয়া জানে। তাহারা অনেক দিন হইতে বলিয়া আসিতেছেন যে, ইজিপ্টের প্রজাবৰ্গ তাহাদিগকে পরম সুহৃদ বলিয়া জ্ঞান করে, কিন্তু অদৃষ্টের এমনি পরিহাসপ্রিয়তা, যে, সেই দেশের লোকের হস্ত হইতে আত্মরক্ষা করিবার জন্য তাহারা আইনবন্ধনহীন সরাসরি বিচারের ভার নিজের হস্তে লাইতে উদ্যত। সেখানকার লোকে তাহদের প্রতি যে-সকল গুরুতর উপদ্রব আরম্ভ করিতেছে তঁহাদের বিশ্বাস সেখানকার বিচারক তাহার উপযুক্ত শাসন করে না- তাহদের প্রতি সাধারণের এতই প্ৰবল ভালোবাসা। কর্তৃপক্ষেরা হয়তো ক্ষাপা হইবেন (কারণ, এখানে তাহারা কর্তৃপক্ষ) কিন্তু আমরা যদি ইজিপ্টে তাঁহাদের নিজের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া বলি যে, ইংরাজ-কর্তৃক দেশীয় উৎপীড়নের বিচারভার সম্পূর্ণরূপে দেশীয় লোকের হস্তে না দিলে ইংরাজ জুরির নিকট দেশীয় হতভাগ্যের সুবিচার প্রাপ্তির আশা অত্যন্স তবে সেটা কি অসংগত শুনিতে হয় ? কিন্তু ইংরাজের মনে দৃঢ় বিশ্বাস যে, ইজিপ্টে তিনি লোকপ্রিয় পরমসুহৃদ, এবং ভারতবর্ষে তিনি সম্পূর্ণ অপক্ষপাত সুবিচারক। ইংরাজের স্বদোষ-বাৎসল্য নিজেদের জাতিগত দোষগুলির প্রতি ইংরাজদের এমন একটি মেহদৃষ্টি আছে যে, এক-এক সময় তাহা দেখিলে আঘাতও লাগে এবং হাসিও পায়। ইংলন্ডের ‘স্পেক্টেটর’ পরম খৃস্টান কাগজ। কিন্তু সেই কাগজে “With Wilson in Manabelleland’ নামক গ্রন্থের প্রশংসাপূর্ণ সমালোচনার NCJ at Cat fifts &STC : “We have never seen the delight in killing, which is perhaps a normal trait in healthy human male animals, so frankly expressed as in these pages." অর্থাৎ বাধাস্পপৃহা সুস্থপ্রকৃতি পুরুষজাতীয় মানবপ্রাণীর একটা স্বাভাবিক ধর্ম এ কথা সমালোচক মহাশয় প্রকাশ করিয়াছেন। অবশ্য, ইহাতে বাধস্পৃহার প্রশংসা বুঝাইতেছে না, কিন্তু ওই সুস্থপ্রকৃতি বিশেষণ প্রয়োগ করিয়া এই বিধাস্পপৃহার প্রতি বিশেষ একটু স্নেহ প্ৰকাশ করা হইয়াছে। সম্পাদক স্বজাতিসুলভ দোষের প্রতি মমতানুভব করিবার কালে এ কথা ভুলিয়াছেন যে, তাহার স্বাস্থ্যের আদর্শ অনুসারে যিশু খৃস্টের মতো রোগজীর্ণ প্রকৃতির দৃষ্টান্ত জগতে দুর্লভ। এই স্বজাতিসুলভ দোষগুলির প্রতি ইংরাজের বিশেষ স্নেহ-দৃষ্টি আছে বলিয়াই ভারতবর্ষে এতগুলি ইংরাজ উপযুপরি এতদেশীয়কে হত্যা করিতেছে এবং উপযুপরি নিষ্কৃতিও পাইতেছে। এতগুলি ইংরাজকে যদি দেশীয়রা হত্যা করিত তবে তাহারা যে পরিমাণে রাগ করিতেন ও প্রতিহিংসা ও প্রতিকারের জন্য দৃঢ়প্ৰতিজ্ঞ হইয়া উঠিতেন দেশীয় হত্যায় তাহাদের সে পরিমাণ ক্ৰোধের সঞ্চার হয় না। তাহারা বেশ বুঝিতে পারেন। একজন টমি অ্যাট্‌কিন্স।” সামান্য রাগ হইলেই কেন একজন দেশীয় কালো লোককে হত্যা করিয়া ফেলে। তাহারা সেটাকে অপরাধ বলিয়া স্বীকার করেন। কিন্তু মনের এক কোণে এই কথা উদয় হয় যে ওটা সুস্থপ্রকৃতি টমি অ্যাটুকিলের স্বাভাবিক ধর্ম।