পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাময়িক সারসংগ্ৰহ Se ইহাতে মহিলাদের প্রতি রাঢ়তা প্রকাশ হইয়াছিল সন্দেহ নাই, কিন্তু প্রাচ্য রাজপুত্রের মনে যে, সভ্যতার আদর্শ বিরাজ করিতেছে তাহাকে উপেক্ষা করাও তাহার কর্তব্য হইত না। ’ मादन Ro Seos নূতন সংস্করণ নব্য হিন্দুদের বিশেষ সমস্যা উপস্থিত হইয়াছে। তাহারা উনবিংশ শতাব্দীর নূতন জ্ঞান উপার্জন করিয়া, পুরাতনের প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা হারান নাই বটে, কিন্তু রুচির পরিবর্তন হওয়াতে তাহারা উহাকে অধুনাতনের সঞ্চিত মলিন আবরণ শুদ্ধ গ্ৰহণ করিতে বড়োই কুষ্ঠিত। । মনুষ্যজীবনকে আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে কবিত্বময় কল্পনার দ্বারা আচ্ছাদিত করিয়া উহাকে সংসারের দৈনিক বৈষয়িক ভাবনার কালুষ্য হইতে রক্ষা করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, তাহার সৌন্দর্য ও আবশ্যকতা বুঝিয়াও, সেগুলিকে তাহদের আধুনিক অর্থশূন্য কবিত্বহীন অসুন্দর আকারে অবলম্বন করিতে তাহারা কিছুতেই প্ৰস্তুত নহেন। সম্প্রতি বোম্বাই অঞ্চলের একদল নব্য হিন্দু। এই সমস্যা মীমাংসার যেরূপ উপায় স্থির আদিম সৌন্দর্যকে তাহার হীন ও মলিন বেশ হইতে মুক্ত করিয়া তাহার মধ্যে নূতন প্ৰাণ সরকািরয়া দিতে চাহেন। দুই-একটি দৃষ্টান্ত দিলে উহাদের উদ্দেশ্য ও উপায় স্পষ্ট বুল রাম-নবমীর দিনে রামকে দেবতারূপে পূজা করায়, দেবাধিদেব পরমেশ্বরের মহিমা ও ভারতের শ্রেষ্ঠ মহাকাব্যের সাহিত্য-মর্যাদা যুগপৎ খর্ব হওয়াতে তাহারা বিশেষ ব্যথিত হইয়াছেন, কিন্তু রাম-নবমীর দিন উৎসবে যোগ না দিয়া প্রচলিত কুসংস্কারে গালি দিয়া তাহারা কোনো সাত্মনা অনুভব করেন না। সুতরাং ত্যাহারা স্থির করিয়াছেন যে, উক্ত শুভদিবস উপলক্ষে উৎসবক্ষেত্ৰে সকলে উপস্থিত হইয়া, ভোজনাদি আমোদপ্রমোদরাপ উৎসবের বাহ্য অঙ্গের পরে, কথকতা কীর্তন প্রভৃতির দ্বারা রামায়ণের কবিত্ব-রসাস্বাদন করিবেন এবং প্রবন্ধপাঠ ও আলোচনাদির দ্বারা উহার সাহিত্যনৈপুণ্য ও নীতি-মহত্ত্ব উপলব্ধি করিবেন। শ্রাবণ মাসের দিনবিশেষে ব্রাহ্মণদের পুরাতন উপবীত পরিত্যাগ করিয়া নূতন উপবীত গ্ৰহণ করিবার রীতি আছে। কিন্তু আধুনিক শিক্ষা প্রভাবে, এইরূপ সূত্রগুচ্ছ পরিবর্তন এবং তাহার সহিত মন্ত্র উচ্চারণ ও পুরোহিতকে কিঞ্চিৎ অর্থ দান করিলেও তাহারা কোনো প্রকার আমোদ বা তৃপ্তি অনুভব করেন না। সুতরাং ত্যাহারা এই দিবসকে মহৎ সংকল্প স্থির করিবার ও ব্রত গ্ৰহণ করিবার কার্যে উৎসর্গ করিতে চাহেন; একত্র মিলিত হইয়া স্মরণ করিতে চাহেন যে গলায় উপবীতধারণ করিয়া নিজেকে সর্বোচ্চ জাতির মধ্যে গণ্য হইবার উপযুক্ত বিবেচনা করা কী দারুণ দাম্ভিকতার কাজ; এবং বৎসরের মধ্যে অন্তত এই একবার অনুভব করিতে চাহেন যে, যে পবিত্র উপবীত পূর্ব মহৰ্ষিরা করিয়াছেন তাহার উপযুক্ত হইতে গেলে, অতি বিনীতভাবে নিজ হীনতা স্বীকার করিয়া, ব্রাহ্মণ জন্মের সুমহৎ দায়িত্ব বুঝিয়া জীবনের প্রত্যেক মুহুর্তে সত্যের ও মহত্ত্বের” প্ৰতি কায়মনোবাক্যে অগ্রসর হইতে হইবে। বােম্বাইয়ের নব্য হিন্দু সম্প্রদায় এইরূপে প্রত্যেক উৎসব ও পবিত্ৰ দিবসকে উপযুক্ত অনুষ্ঠানের দ্বারা সজীব করিয়া তুলিবার চেষ্টা করিয়াছেন এবং তঁহাদের ক্ষুদ্র দলের মধ্যে অনেকটা কৃতকাৰ্যও হইয়াছেন। উল্লিখিত সমস্যার এইরূপ সুন্দর মীমাংসা আমাদের দেশে