পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Avoo রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী তাহাতে জননায়কদের হন্তেই এই মারীনিবারণের ভার অপিত হইয়াছে। ইহাতে আমাদের একটি বিশেষ সাত্মনার কথা আছে- ইতিপূর্বে মুনিসিপালিটির প্রতি এক অকারণ অভিযোগ আসিয়াছিল যে প্লেগসম্বন্ধীয় প্ৰতিকার বিধান তাহার সাধ্য নহে; এক্ষণে দেখা যাইতেছে লোকনায়কগণেরই সেই কাজ, সরকারি কর্মচারীদের দ্বারাই তাহা দুঃসাধ্য। এই প্রসঙ্গে বলিতে চাহি, প্লেগনিবারণের জন্য আমরা গবর্মেন্টের অপেক্ষা কম উৎসুক নহি কিন্তু প্রমাণহীন নূতন । পরীক্ষার বিষয়ীভূত হইতে আমরা কুষ্ঠিত। উপযুক্ত পণ্ডিতদের যাহা বিধান হয় তাহা আমরা ; বহন করিতে প্ৰস্তুত আছি, এবং সেই বিধান পালনের ভার আমাদের নিজ হস্তে থাকিলে তাহার অনাবশ্যক কঠোরতা অনেক পরিমাণে হ্রাস হইবে। এক্ষণে আলোচ্য এই যে, প্রাদেশিক জনসভার উদ্দেশ্য কী। কনগ্রেসে এবং কনফারেন্সে, ভারতজনসভা ও প্রাদেশিক জনসভায় এই প্ৰভেদ নির্দিষ্ট হইয়াছে যে, একটি সাম্রাজ্যব্যাপারঘটিত এবং আর-একটি কেবল প্রাদেশিক। কিন্তু কনগ্রেসে যে-সকল প্রস্তাব উত্থাপিত হয় কনফারেন্স তাহাতে বিশেষরূপ সাহায্য না করায় কনগ্রেস ক্রমশ একঘেয়ে হইবার উপক্রম হইয়াছে। যদি এমন বন্দোবস্ত হয় যে, কনগ্রেসের আলোচিত প্ৰস্তাবগুলির তদন্তভার কনফারেন্সের বিশেষ বিশেষ বিভাগগত সেক্রেটারিদের হস্তে দেওয়া যায় এবং তাহারা সংবৎসরকাল সেই সকল বিষয়ে স্থানীয় বিবরণ সংগ্ৰহ করিয়া বেসরকারি একটি শাসন-বিবরণী (administration report) প্ৰস্তুত করেন ও তাহা কনফারেন্সে গ্রাহ্য হইলে পর ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশ হইতে কনগ্রেসের সেক্রেটারির নিকট পাঠানো হয় এবং তিনি তাহা হইতে একটি সাধারণ বিবরণী প্রস্তুত করিয়া কনগ্রেসে পাঠ করেন। তবে তাহা বিশেষ ফলদায়ক হইতে পারে। রাজ্যচালনার মূলনীতি সম্বন্ধে আমরা অনেক কথা বুঝিয়াছি কিন্তু দোষের বিষয় এই যে, রাজ্যের সংবাদ আমাদের অল্পই জানা আছে- সেইজন্য আমাদের কথার জোর নাই, এবং অনেক সময় সেই কারণেই বিপক্ষের নিকট আমাদের হার মানিতে হয়। বর্তমান প্রস্তাবে তাহার প্রতিকার अgव ! কনফারেলেও যে-সকল বিশেষ বিষয়ের অবতারণা হয় তৎসম্বন্ধে যদি আমরা এক বৎসর ধরিয়া তথ্য সংগ্ৰহ করি ও যথোচিত প্ৰস্তুত হইয়া আসি তাহা হইলে আমাদের এই কনফারেন্স তিন দিবসব্যাপী একটা ইন্দ্ৰজালের মতো হয় না- সমস্ত বৎসর তাহার কাজ থাকে। কনফারেন্সের আরও একটি উদ্দেশ্য জনসাধারণের রাজনৈতিক শিক্ষাবিস্তার। যদিও আমরা তাহাদের হিতেচ্ছা করি ও তাঁহাদের হিতকার্যে প্ৰবৃত্ত কিন্তু আরও নিকটভাবে প্রত্যক্ষভাবে তাহাদিগকে আমাদের এই অনুষ্ঠানের সহিত সংযুক্ত করিতে না পারিলে যথার্থ উপকার হয় না। এবং বিপক্ষেও বলিবার পথ পায় যে আমরা সাধারণের প্রকৃত . প্রতিনিধি নাহি। এই জনসাধারণকে আকর্ষণ করিবার জন্য গত কনফারেন্সে বাংলা ভাষায় কাৰ্যনির্বাহের অবতারণা হয়। ইহা ছাড়া, সাধারণে, জলকষ্ট প্রভৃতি, যে-সকল বিষয়ে বিশেষরূপে সংশ্লিষ্ট কনফারেন্সে তাহার যথেষ্ট আলোচনা হওয়া আবশ্যক। বৎসরের আলোচনায় দুটি বিষয় বিশেষ করিয়া চক্ষে পড়ে; রাজদ্রোহের ধুয়া এবং সর্বপ্রকারে দমন করিবার চেষ্টা। আমাদের বিশ্বাস, একদল ইংরাজের প্ররোচনায় নিতান্ত বাধ্য হইয়া কর্তৃপুরুষেরা রাজদ্রোহ সম্বন্ধে বিশেষ শাসন প্রচার করিয়াছেন। আসল কথা এই যে, একপক্ষে আমাদের রাজা আমাদিগকে কতকগুলি স্বাধীন অধিকার দিতে প্ৰতিশ্রুত, অপরপক্ষে পারকতা দ্বারা আমাদের দাবিও আমরা সপ্রমাণ করিয়াছি, এক্ষণে রাজদ্রোহের অপরাধ আরোপ না করিলে আমাদিগকে প্রাপ্য অধিকার হইতে বঞ্চিত করিবার কোনো যুক্তিসংগত কারণ পাওয়া যায় না। আমাদের বিপক্ষগণ সেই অন্যায় ধুয়া তুলিয়া আমুদের দাবিকে দুর্বল করিবার চেষ্টায় আছেন।