পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

gf ee গ্ৰহগণ জীবের আবাসভূমি । কোনো মেঘ-বিনির্মুক্তা তারকাসমুজ্জ্বলা রজনীতে গৃহের বাহির হইয়া গগনমণ্ডলের প্রতি একবার Y DDBDBDDBS DuDBBD DBDBDDSB DBDuuDu DB BB BDBDBS S সকল অগণ্য জ্যোতিষ্কমণ্ডল দ্বারা নভস্তল বিভূষিত হইয়া রহিয়াছে, তাহারা কি শূন্য না আমাদের ন্যায় জ্ঞান-ধর্ম-প্রেম-বিশিষ্ট উন্নত জীবদ্বারা পূর্ণ? প্রাণস্বরূপ পরমেশ্বরের বিচিত্র অনন্ত রাজ্যের মধ্যে এমনকি কোনো স্থান থাকিতে পারে যেখানে প্রাণের চিহ্ন নাই? এই সকল বিষয় সম্বন্ধে যাহাদের জ্ঞানের গভীরতা নাই, তাহারা হয়তো মনে করিবে, যে, দূরবীক্ষণের সাহায্য অবলম্বন করিলেই এই সকল প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যাইতে পারে। কিন্তু তাহা ভ্ৰম মাত্র। এই যন্ত্রের প্রবল শক্তি সত্ত্বেও, সাক্ষাৎ সম্বন্ধে এই প্রকার প্রশ্ন-সকলের উত্তর দেওয়া এখনও উহার সাধ্যাতীত। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের এখনও এতদূর উন্নতি হয় নাই, যে ইহার সাহায্যে আমরা অতি দূরস্থ লোকের অতি ক্ষুদ্রতম পদার্থ পর্যন্ত জাজ্বল্যরূপে নিরীক্ষণ করিতে সমর্থ হই। দূরবীক্ষণের এক্ষণে এই পর্যন্ত ক্ষমতা হইয়াছে, যে অতি দূরের বস্তুকে অপেক্ষাকৃত নিকটে আনিয়া দিতে পারে। মনে করো তুমি সহস্ৰমাত্ৰ-শক্তি-সম্পন্ন একটি দূরবীক্ষণ দ্বারা চন্দ্ৰলোক পর্যবেক্ষণ করিতেছ। চন্দ্র সৌরজগতের মধ্যস্থিত সমস্ত গ্রহমণ্ডলী অপেক্ষা পৃথিবীর নিকটস্থ। পৃথিবী হইতে চন্দ্ৰ প্ৰায় ১২০,০০০ ক্রোশ দূরে অবস্থিত- এক্ষণে, এই দূরবীক্ষণের সাহায্যে, ১২০,০০০ ক্রোশ- ১২০ ক্ৰোশে পরিণত হইতে পারে এই মাত্র। তথাপি এই ১২০ ক্রোশ দূর হইতে চন্দ্ৰলোকের মনুষ্য ঘোটক, হন্তী অথবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক পদাৰ্থ আমাদের কি দৃষ্টিগোচর হইতে পারে? কখনোই না। এই পৃথিবীর ন্যায় অন্যান্য গ্ৰহগণ জীবের আবাসভূমি কি না। যদিও বিজ্ঞানশাস্ত্র এ পর্যন্ত এই প্রশ্নের উত্তরে কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ দিতে পারেন নাই। তথাপি আনুমানিক প্রমাণ এতৎসম্বন্ধে এত রাশিরাশিসংগ্ৰহ করিয়াছেন, যাহা প্রত্যক্ষের ন্যায় সমানবিশ্বাসযোগ্য, তদপেক্ষা কিছুমাত্রানুন নহে। যে-সকল গ্রহ পৃথিবীর সহিত সাদৃশ্য থাকা প্ৰযুক্ত পার্থিব গ্ৰহ বলিয়া উক্ত হয়, আমরা প্রথমে সেই সকল গ্রহ সম্বন্ধে এই প্রশ্নটি বিচার করিতে প্ৰবৃত্ত হইতেছি। এই পার্থিব গ্রহ তিনটি : বুধ, শুক্র এবং মঙ্গল। ইহারা সৌরজগতের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য গ্ৰহগণ অপেক্ষা সূর্য হইতে কম দূরে অবস্থিত হইয়া, তাহার চতুর্দিকে পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গে পরিভ্রমণ করে। সৌরজগতের অন্যান্য দূরবতী গ্ৰহগণের বিষয়ে আমরা পরে আলোচনা করিব। কীরূপে আমাদের এই পৃথিবী মনুষ্য এবং অন্যান্য ইত্যর প্রাণীর বাসযোগ্য হইয়াছে, তাহা আলোচনা করিতে প্ৰবৃত্ত হইলে প্রথমে দেখিতে পাওয়া যায়, যে পরম কারুণিক পরমেশ্বর পৃথিবীকে আমাদের বাসযোগ্য করিবার জন্য বিবিধ প্রকার পরস্পর-উপযোগী ব্যবস্থা-সকল পূর্ব হইতে নিরাপিত করিয়া দিয়াছেন, সেই ব্যবস্থাগুলি এমন কোনো সাধারণ যান্ত্রিক নিয়ম হইতে উৎপন্ন হইতে পারে না, যাহা দ্বারা সাধারণত জড় জগতের গতিবিধি পরিবর্তন নিয়মিত হইতেছে। জড় জগতে কেবলই গতি ও পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, যন্ত্রের ন্যায় চক্র-সকল কেবলই ঘূর্ণিত হইতেছে। কিন্তু যে নিয়মের বশবতী হইয়া এই পরস্পর-বিরোধী অসংখ্য চক্রসকল পরস্পর উপযোগী হইয়া প্ৰণিপুঞ্জের সুখ সৌকর্য বিধান করিতেছে, সেই নিয়মটি স্রষ্টার মঙ্গল সংকল্পের যত স্পষ্ট পরিচয় দেয়, এমন আর কিছুই নহে। মনে করো, এক্ষণকার ন্যায় তোমার নৈসর্গিক অভাব এবং তদবিষয়ক জ্ঞান রহিয়াছে— মনের প্রবৃত্তিসকল সমান রহিয়াছে- সুখ-দুঃখবোধ জাগরকে রহিয়াছে- অর্থাৎ এক্ষণকার ন্যায় সর্বাবয়ব সম্পন্ন মনুষ্যই রহিয়াছে- আর হঠাৎ তুমি এই শোভাপূর্ণ পৃথিবীতে পদার্পণ করিলে। তুমি দেখিবে সুখস্পর্শ সুমীরণ প্রবাহিত হইতেছে- স্বচ্ছ নির্মল জলরাশি প্রসারিত রহিয়াছে- প্ৰাণী ও উদ্ভিদ জগৎ . জীবনসৌন্দর্যে পূর্ণ রহিয়াছে- পৃথিবীর এতটুকু আকৰ্ষণিক শক্তি তোমার শরীরের উপর