পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

obr রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী না; যাহারা আমূল-সংস্কার-প্রিয় তাহারাও উন্নতিশীল নহেন, যাহারা রক্ষণ-সংস্কার-প্রিয় তাহারাই প্রকৃত উন্নতিশীল। কিন্তু ইহাদের কাহাকেও সমাজ হইতে বাদ দেওয়া যাইতে পারে না। আমূলরক্ষণ-প্রিয় মনে করিতেছেন, আমূল-উন্নতি-প্রিয় সমাজকে অবনতির দিকে আকর্ষণ করিতেছেন, আবার আমূল-উন্নতি-প্রিয় মনে করিতেছেন যে, আমূল-রক্ষণ-প্রিয় সমাজকে অবনতির গহবর হইতে উদ্ধার করিতে বাধা দিতেছেন, আবার রক্ষণ-সংস্কারশীল মনে করিতেছেন যে, আমূলরক্ষণ-প্রিয় ও আমূল-সংস্কার-প্রিয় উভয়ে মিলিয়া সমাজের দারুণ অনিষ্ট সাধন করিতেছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইহারা কেহই সমাজের উন্নতিপথের কণ্টক নহেন। তবে আমূল-সংস্কার ও আমূল-উন্নতি -প্রিয় উভয়ে ভ্ৰান্ত পথ আশ্রয় করিয়া সমাজের উন্নতির সাহায্য করিতেছেন ও রক্ষণ-সংস্কর-প্রিয় প্রকৃত পথ আশ্রয় করিয়া সমাজের উন্নতি সাধন করিতেছেন। যখন যুবকেরা নূতন বিশ্ববিদ্যালয় হইতে বহির্গত হন, যখন তাহদের উন্নতির ইচ্ছা আছে কিন্তু অভিজ্ঞতা নাই, যখন তাহারা উন্নতির কতকগুলি মূল সূত্র শিখিয়াছেন, কিন্তু দেশ-কাল-পাত্রে প্রয়োগ করিতে শিখেন নাই, যখন তাহারা মনে করেন যে বলিষ্ঠ ব্যক্তির খাদ্য ও রোগীর পথ্য একই, যখন তাহারা মনে করেন যে, ইংলন্ডের বোঝা বাংলার স্কন্ধের উপযোগী, তখন তাহারা বঙ্গদেশকে একেবারে ইংলন্ড করিতে চান, ভাগীরথীকে টেমস করিতে চান, বাঙালিকে ফিরাঙ্গি করিতে চান। কিন্তু যখন তাহারা সংসারে প্রবিষ্ট হন, তখন ক্রমশ শান্ত ও শীতল হইয়া আসেন ও রক্ষণশীলতার প্রতি একটু একটু করিয়া কুঁকিতে থাকেন। আবার তখনকার নব্য বংশ সমাজের আগাগোড়া ভাঙিবার জন্য গদা উদ্যত করেন। এইরূপে রক্ষণশীল ও সংস্কারশীল চিরকালই সমাজে জাগ্ৰত থাকে, না থাকিলে সমাজের দারুণ অনিষ্ট হয়। যখন ভারতবর্ষে উন্নতির . মধ্যাহ্নকাল, তখন ধীরে ধীরে কতকগুলি নূতন দর্শন ও নূতন দল নির্মিত হইতে লাগিল এবং তাহদের প্রভাবে বৌদ্ধধর্ম উখিত হইয়া সমাজে একটি ঘোরতর বিপ্লব বাধাইয়া দিল। পৌরাণিক ঋষিরা ভুল বুঝিলেন, তাহারা মনে করিলেন এরূপ বিপ্লব অনিষ্টজনক। আমনি পুরাণে, সংহিতায় ও অন্যান্য নানাপ্রকারে সমাজের হস্তপদ অষ্টপৃষ্ঠে বন্ধন করিয়া ফেলিলেন এবং ভবিষ্যতে এরূপ বিপ্লব না বাধে তাহার নানা উপায় করিয়া রাখিলেন। সমাজের স্বাস্থ্য নষ্ট হইল এবং সমাজ ক্রমশই অবনতির অন্ধকারে আচ্ছন্ন হইয়া পড়িল। সংস্কারশীলতার অভাবে ও রক্ষণশীলতার বঙ্গদেশের এই সামাজিক বিপ্লব আমাদের তো শুভ লক্ষণ বলিয়া মনে হয়; যে উপায়েই হউক, এই যে বহুকাল-ব্যাপী নিরুদ্যমের ঘুম ভাঙিয়াছে এবং শিক্ষিত লোকেরা নবউদ্যমে কার্য করিবার ক্ষেত্র অন্বেষণ করিতেছেন। ইহা তো মঙ্গলেরই চিহ্ন। যেমন যুদ্ধ-বিপ্লবের অনুষ্ঠানে জাতির শারীরিক বল বধিত হয়, সেইরাপ মানসিক বিপ্লবে মনের বল বাড়িবার কথা। আর অধিক দিন নিশ্চেষ্ট হইয়া থাকিলে সমস্ত বাঙালি জাতি নিজীবী হইয়া পড়িত। এখন যেরূপ ভাঙাগড়া ও চারি দিক হইতে উপাদান সংগ্ৰহ আরম্ভ হইয়াছে, ইহাতে বোধ হয়, অজ-দিনের মধ্যে এই বাংলার সমাজ নূতন দৃঢ়তর ভিত্তিতে স্থাপিত হইবে। छद्री are y Stre এই মহাকল্লোলময় মহানগরের এক প্রান্তে একখানি পর্ণফুটিরে আমার বাস। আমি সংসারী নহি, বন্ধু নাই, স্নেহ কিনিবার বিভব নাই, যত্ন লাভের সামৰ্থ নাই ; ছিন্ন তৃণবৎ আমি সংসার-সাগরলোতে একলাই ভাসিতেছি, একলাই উঠিতেছি, একলাই পড়িতেছি। ভিক্ষা ভিন্ন আমার আর |