পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ8Չ রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী সুন্দরতর দেখি এমন নহে, সুদ্ধ যে আমরা ইহার প্রভাবে সকল-প্রকার বিঘ্ন ব্যবধান অতিক্রম করিয়া মরুভূমিতে থাকিয়াও নন্দনকাননের শোভা সন্দর্শন করি এমন নহে, কিন্তু ইহার প্রভাবে আমরা সকল-প্রকার সুন্দর পদার্থ হইতে তাহাদের সুন্দরতম অংশগুলি গ্রহণ করিয়া অশেষবিধ তিলোত্তম বা প্যান্ডোরা সৃজন করিতে পারি। সত্য বটে যে কল্পনা যেমন সুখের কারণ, আবার কল্পনা তেমনি দুঃখের কারণ, সত্য বটে। যে, কল্পনা-প্রভাবে আমরা বৈজয়ন্তধামকেও শ্মশানের চিতা আকারে রূপান্তরিত করিতে পারি, সত্য বটে যে কল্পনা প্রভাবে আমরা মিলটন-বর্ণিত দেবতুল্য মানবমুখেও বায়রন-বর্ণিত পিশাচের প্রতিকৃতি উপলব্ধি করিতে পারি এবং মার্কণ্ডেয় চণ্ডীর দেবী-অংশভূত নারীজাতিকেও হ্যামলেটের মতো অসতীত্বরূপ দুর্বলতার নামান্তর মনে করিতে পারি, কিন্তু তাহা প্রকৃত প্ৰস্তাবে কল্পনার দোষ নহে, তাহা আমাদেরই দোষ। কল্পনাকে সংযত করা, শিক্ষিত করা ও বিবেকবুদ্ধির অধীন করা আমাদের উপরেই নির্ভর করিতেছে। কল্পনাই আমাদের কার্যের প্রবর্তক, ভাবনার কল্পনার তারতম্যে আমাদের সুখেরও তারতম্য ঘটিয়া থাকে। এই যে সমস্ত বিশ্বকাণ্ড আমাদের সম্মুখে প্রসারিত রহিয়াছে, এই যে অনন্ত শোভার ভাণ্ডার আমাদের সম্মুখে মুক্তদ্বার রহিয়াছে— ইহার কি কোনো রসই আমরা অনুভব করিতে পারিতাম, কোনো ভাবই কি গ্ৰহণ করিতে পারিতাম, কোনো শোভাই কি উপভোগ করিতে পারিতাম। যদি কল্পনার দ্বারা আমাদের দিব্য চক্ষু না পরিস্ফুটিত হইত? পৃথিবী তো মুক্তিকাময়, সমুদ্র তো সলিলময়, সূর্য তো অগ্নিময় মাত্র- তবে কেন পৃথিবীর শোভা সন্দর্শনে হৃদয় দ্রবীভূত হয়, সাগরের উচ্ছাসের সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ও উচ্ছসিত হইতে থাকে এবং সূর্যের অভু্যদয়ে হৃদয়ও এক নূতন জীবনে সঞ্জীবিত হইয়া উঠে। কল্পনা বিরহিত হইলে কে আর শেকসপিয়রের মতন বৃক্ষ-পল্লবের অস্ফুট ভাষা বুঝিতে পারিত, প্রবহমান নদীবক্ষে গ্ৰন্থ পাঠ করিতে পারিত, প্রস্তর-খণ্ডে উপদেশ গ্রহণ করিতে পারিত ও সমস্ত ব্ৰহ্মাণ্ডময় মঙ্গলভাব উপলব্ধি করিতে পারিত ? কল্পনায় সকল দ্রব্যকেই হৃদয়ের উপভোগের মতো করিয়া লওয়া যায় The meanest floweret of the vale. The simplest note that swells the gale. The common sun, the air, the skies, To him are sweetest Paradise. उाझईटी यन्न >२br8 কবিতা-পুস্তক শ্ৰীযুক্ত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত সকল পুস্তকের উদ্দেশ্যই হয় জ্ঞান না-হয় আমোদ না-হয় উভয়ের সম্মিশ্র। এখানে আমোদ শব্দটি আমরা অতি প্রশস্তভাবে ব্যবহার করিতেছি। ডিকুইন্সি বলেন যে উচ্চ অঙ্গের কাব্য বা নাটক পড়িয়া আমরা আমোদ পাই- এ কথা বলিতে গেলে সে-সকল কাব্য বা নাটকের অবমাননা করা হয়; তিনি বলেন আমাদের হৃদয়ের নিভৃত বিজনে অনেক মহান ভাব এমন সুষুপ্ত ভাবে অবস্থান করে যে প্রাত্যহিক জীবনের কোনো ঘটনাই তাহাদিগকে জাগাইয়া দিতে পারে না— কিন্তু প্ৰকৃত কবিদের কাব্য পাঠ করিতে করিতে সেই সকল ভাব জাগরিত হইয়া উঠে এবং আমরা এই দীন হীন ক্ষুদ্র জীব হইতে যে প্রকৃত পক্ষে কত দূর উচ্চপদবীগত তাহার প্রতি তখন আমাদের চেতন হয়। এ স্থলে সেই সকল কাব্যগুলিকে আমোদ বা জ্ঞানপ্ৰদ বলা