পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহা আর কী বলিব। সিজারের মৃত্যুর পূর্ব আভাসম্বরপ তাহার মহিষী যখন নানা প্রকার দুঃস্বপ্ন, লাগিলেন তখন সিজর এই বলিয়া উত্তর দিলেন- “ভীরুরাই প্রকৃত মৃত্যুর পূর্বে শত সহস্রাবার মরিয়া থাকে- কিন্তু বীরপুরুষ একবার ব্যতীত আর মৃত্যু আস্বাদন করে না।” সে যা হউক, সংযুক্ত হিন্দুমহিলা হইয়া কেমন করিয়া ইন্দ্র’ ও ‘বাসব’ ভিন্ন ভিন্ন দেবতা বলিয়া সিদ্ধান্ত করিলেন? কিন্তু সংযুক্তার এই শিক্ষার দোষ মার্জনীয় হইলেও তার এরাপ স্থলে ঘন ঘন করতালি দেওয়া মার্জনীয় হইতে পারে না- তাহার ঘোর করতালি “দেখিয়া হাসিল ভারতপতি’- তিনি তো স্বচক্ষে রানীর ওরূপ উন্মাদ অবস্থা দেখিয়া হাসিবেনই- আমরা কল্পনার চক্ষে দেখিয়াই হাসি সংবরণ করিতে পারিতেছি না- ওরাপ করতালির উপর করতালি অল্পবয়স্ক বালকবালিকারই সাজে- রাজরানীর তো কথাই নাই- কোনো ভদ্র কুলনারী সহসা ওরাপ করিলে তাহাকে লোকে উন্মাদ মনে করিবে না তো আর কী করবে। দ্বিতীয় কবিতাটি আকাঙ্ক্ষা’- অর্থাৎ রাধিকা-সুন্দরী শ্ৰীকৃষ্ণকে কী কী হইতে অভিলাষ করিতেছেন এবং শ্যামসুন্দর তাহার কী কী উত্তর দিতেছেন তাহার একটা তালিকা। আমাদের মতে উত্তর-প্রত্যুত্তর-কবিতাতে প্রায়ই বড়ো একটা প্রকৃত কবিতা থাকিতে পারে না; কারণ উত্তরগুলি প্রায়ই হৃদয় অপেক্ষা বুদ্ধি-সাপেক্ষ- এরূপ স্থলে কেমন করিয়া খুব জবাব দিব। ইহাই কবির উদ্দেশ্য হয়। প্রাচীন হরু ঠাকুর বা রাম বসু প্রভৃতি প্ৰকৃত কবিরা প্রশ্ন কবিতায় যতখানি কবিত্ব দেখাইয়াছেন, উত্তর কবিতায় তাহার শতাংশের একাংশও দেখাইতে পারেন নাই। স্বীকার করি। যে তাহদের উত্তরে কতকটা কারিগুরি, বাক্যবিন্যাসের কারিগুরি, দেখিতে পাওয়া যায়, কিন্তু তাহা ব্যতীত প্রকৃত কবিতার আভাস মাত্রও কোথাও দেখিতে পাওয়া যায় না। বঙ্কিমবাবুর “সুন্দর সুন্দরী’ দেখিয়া শুকশারীর পুরাতন কবিতাটি আমাদের মনে পড়িল শুক বলে আমার কৃষ্ণ কদমতলায় থানা, শারী বলে আমার রাধা করে আনাগনা, নইলে কিসের থানা, শুক বলে আমার কৃষ্ণ গিরি ধরেছিল, শারী বলে আমার রাধা শক্তি সঞ্চারিলি, নইলে পারবে কেন ? কিন্তু ‘শুক শারীর’ কবিতার সহিত “সুন্দর সুন্দরীর কবিতার এই প্ৰভেদ যে- প্রথমটি বস্তু হইতে অভিলাষ করিতেছেন, সুন্দরও তাঁহাই হইতে উত্তরে অভিলাষ করিতেছেন- কিন্তু সুন্দরী, রমণী-প্রকৃতি-সুলভ লজ্জায় সকল কথা খুলিয়া বলিতে পারিতেছেন না, সুন্দর সুরসিক পুরুষের মতো কেবল সুন্দরীর অভিলাষের উপর মাত্রা চড়াইতেছেন। কেন না হইলে তুমি চাদের কিরণ, ওহে হৃষীকেশ!! বাতায়নে বিষাদিনী, বসিত যবে গোপিনী, বাতায়ন পথে তুমি লভিতে প্ৰবেশ। আমার প্রাণেশ। কেন না হইনু আমি চন্দ্ৰকরলেখা, রাধার শরীরে থেকে, রাধারে ঢাকিয়ে রেখে,