পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>"ゲ r রবীন্দ্র-রচনাবলী দিদিমার গলা শুনিয়া মহেন্দ্র তাড়াতাড়ি সরিবার চেষ্টা দেখিলেন। সরিতে গিয়া একরাশি হাড়ি-কলসির উপর গিয়া পড়িলেন। ছাড়ির উপর কলসি পড়িল, কলসির উপর হাড়ি পড়িল এবং কলসি হাড়ি উভয়ের উপর মহেন্দ্র পড়িল । হাড়িতে কলসিতে, থালায় ঘটতে দারুণ ঝন ঝন শব্দ বাধাইয়া দিল এবং কলসি হইতে ঘড় ঘড় শব্দে জল গড়াইতে লাগিল। বাড়ির ঘরে ঘরে কী হইল কী হইল’ শব্দ উপস্থিত হইল। মা উঠলেন, পিসি উঠলেন, দিদি উঠিলেন, খোকা কাদিয়া উঠিল, দিদিমা বিছানায় পড়িয়া পড়িয়া উচ্চৈঃস্বরে পোড়ারমূখ বিড়ালের মরণ প্রার্থনা করিতে লাগিলেনমোহিনী প্রদীপ হস্তে বাহিরে আসিল । দেখিল মহেন্দ্র ; তাড়াতাড়ি কাছে গিয়া কহিল, ”পালাও ! পালাও ” মহেন্দ্র পলাইবার উদ্যোগ করিল ও মোহিনী তাড়াতাড়ি প্রদীপ নিভাইয়া ফেলিল । দিদিমা চক্ষে কম দেখিতেন বটে, কিন্তু কানে বড়ো ঠিক ছিলেন । মোহিনীর কথা শুনিতে পাইলেন, তাড়াতাড়ি ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিয়া কহিলেন, “কাহাকে পলাইতে বলিতেছিস মোহিনী।” দিদিমা অন্ধকারে কিছুই দেখিতে পাইলেন না, কিন্তু পলায়নের ধুপ ধাপ, শব্দ শুনিতে পাইলেন। দেখিতে দেখিতে বাড়িমৃদ্ধ লোক জমা হইল । মহেন্দ্র তো অন্য পথ দিয়া পলায়ন করিল। এ দিকে গদাধর বাগানে বসিয়া ভিজিতেছিলেন, অনেকক্ষণ বসিয়া বসিয়া একটু তন্দ্র। আসিতেই শুইয়া পড়িলেন। ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া স্বপ্ন দেখিতে লাগিলেন যেন তিনি বকৃত করিতেছেন, আর হাততালির ধ্বনিতে সভা প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিতেছে, সভায় গভর্নর জেনেরাল উপস্থিত ছিলেন, তিনি বক্তৃতা-অন্তে পরম তুষ্ট হইয়া আপনি উঠিয়া শেকৃহ্যান্ড, করিতে যাইতেছেন, এমন সময় তাহার পৃষ্ঠে দারুণ এক লাঠির আঘাত লাগিল। ধড় ফড়িয়া উঠলেন ; একজন তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “এখানে কী করিতেছিল। কে তুই।” গদাধর জড়িত স্বরে কহিলেন, “দেশ ও সমাজ -সংস্কারের জন্য প্রাণ দেওয়া সকল মন্থন্যেরই কর্তব্য। ডাল ও ভাত সঞ্চয় করাই যাহাদের জীবনের উদ্বেগু, তাহার। গলায় দড়ি দিয়া মরিলেও পৃথিবীর কোনো অনিষ্ট হয় না। দেশ-সংস্কারের জন্ত রাজি নাই, দিবা নাই, আপনার বাড়ি নাই, পরের বাড়ি নাই, সকল সময়ে সর্বত্রই কোনো বাধা মানিবে না, কোনো বিঘ্ন মানিবে না— কেবল ঐ উদ্বেগু-সাধনের জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করিবে । ৰে না করে সে পত, সে পণ্ড, সে পশু ! অতএব”— আর অধিক অগ্রসর হইতে হইল না ; প্রহারের চোটে তাহার এমন অবস্থা হুইল ষে, আর অরক্ষণ থাকিলে শরীর-সংস্কারের আবশ্বকতা হইত। অতিশয় বাড়াবানি