পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

›ግ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী সে-সব কথা লিখিলে পাঠকেরা তাহার গাম্ভীর্ধ বুঝিতে পরিবেন না, হয়তো হালিবেন, হয়তো মনে করিবেন এ-সব কোনো কাজেরই কথা নয়। কিন্তু সে বালিকার যে-সকল কথা লইয়া অতি গুপ্তভাবে অতি সাবধানে আন্দোলন করিয়াছে তাহাই লইয়া ৰে সকলে হাসিবে, সকল কথা তুচ্ছভাবে উড়াইয়া দিবে তাহা মনে করিলে কষ্ট হয়। কিন্তু করুণার সঙ্গে রজনী পারিয়া উঠে না— সে এক কথা সাতবার করিয়া বলিয়া, সব কথা একেবারে বলিতে চেষ্টা করিয়া, কোনো কথাই ভালো করিয়া বুঝাইতে না পারিয়া রজনীর এক প্রকার মুখ বন্ধ করিয়া রাখিয়াছিল। তাহারই কথা ফুরায় নাই তো কেমন করে সে রজনীর কথা শুনিবে ! তাহার কি একটা-আধটা কথা । তাহার পাখির কথা, তাহার ভবির কথা, তাহার কাঠবিড়ালির গল্প— সে কবে কী স্বপ্ন দেখিয়াছিল— তাহার পিতার নিকট দুই রাজার কী গল্প শুনিয়াছিল— এ-সমস্ত কথা তাহার বলা আবশ্যক। আবার বলিতে বলিতে যখন হাসি পাইত তখন তাহাই বা থামায় কে। আর, কেন যে হাসি পাইল তাহাই বা বুঝে কাহার সাধ্য। রজনীবেচারির বড়ো বেশি কথা বলিবার ছিল না, কিন্তু বেশি কথা নীরবে শুনিবার এমন আর উপযুক্ত পাত্র নাই। রজনী কিছুতেই বিরক্ত হইত না, তবে এক এক সময়ে অস্তমনস্ক হুইত বটে— তা, তাহাতে করুণার কী ক্ষতি। করুণার বলা লইয়া বিষয় । করুণাকে লইয়া মহেন্দ্রের মাতা বড়ো ভাবিত আছেন। তাহার বয়স বড়ো কম নহে, পঞ্চান্ন বৎসর– এই পঞ্চান্ন বৎসরের অভিজ্ঞতায় তিনি ভদ্রলোকের ঘরে এমন বেহায়া মেয়ে কখনো দেখেন নাই, আবার তাহার প্রতিবেশিনীর। তাহাজের বাপের বয়সেও এমন মেয়ে কখনো দেখে নাই বলিয়া স্পষ্ট স্বীকার করিয়া গেল। মহেঞ্জের পিতা তামাকু খাইতে থাইতে কহিতেন যে, ছেলেমেয়েরা সবাই খৃস্টান হইয়া উঠিল। মহেক্সের মাত কহিতেন সে কথা মিছা নয়, মহেঞ্জের মাতা মাঝে মাঝে রজনীকে সম্বোধন করিয়া করুণার দিকে কটাক্ষপাত করিয়া কহিতেন, ‘আজ বাগানে বড়ো গলা বাহির করা হইতেছিল ! লঙ্গ করে না ? কিন্তু তাহাতে করুণা কিছুই সাবধান হয় নাই। কিন্তু এ তো করুণার শাস্ত অবস্থা, করুণা যখন মনের স্বখে তাহার পিতৃভবনে থাকিত তখন যদি এই পঞ্চান্ন বংসরের অভিজ্ঞ গৃহিণী তাহাকে দেখিতেন তবে কী করিতেন বলিতে পারি না। আবার এক-একবার যখন বিধ ভাব করুণার মনে জাসিত তখন তাহার যুড়ি সম্পূর্ণ বিপরীত। আর তাহার কথা নাই, হালি নাই, গন্ন নাই, সে এক জায়গায় চুপ করিয়া বসিয়া থাকিবে- রজনী পাশে বসিয়া লক্ষ্মী দিদি আমার বলিয়া কত সাধাসাধি করিলে উত্তর নাই। করুণা প্রায় মাঝে মাঝে এমনি বিষঃ হইত, কতক্ষণ ধরিয়া কারিয়া