পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रै ● ० রবীন্দ্র-রচনাবলী এ কথা বলিতে কুষ্ঠিত হই নাই— তোমার মৃত্তিকা-সনে আমারে মিশায়ে লয়ে অনন্ত গগনে অশ্রান্তচরণে করিয়াছ প্রদক্ষিণ সবিতৃমণ্ডল, অসংখ্য রজনীদিন যুগযুগান্তর ধরি ; আমার মাঝারে উঠিয়াছে তৃণ তব, পুষ্প ভারে ভারে ফুটিয়াছে, বর্ষণ করেছে তরুরাজি পত্র ফুল ফল গন্ধরেণু । আমার স্বাতন্ত্র্যগর্ব নাই– বিশ্বের সহিত আমি আমার কোনো বিচ্ছেদ স্বীকার করি না । মানব-আত্মার দম্ভ আর নাহি মোর চেয়ে তোর স্নিগ্ধস্তাম মাতৃমুখ-পানে ; ভালোবাসিয়াছি আমি ধূলিমাটি তোর। আশা করি, পাঠকের ইহা হইতে এ কথা বুঝিবেন, আমি আত্মাকে বিশ্বপ্রকৃতিকে বিশ্বেশ্বরকে স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র কোঠায় খণ্ড খণ্ড করিয়া রাখিয়া আমার ভক্তিকে বিভক্ত করি নাই । আমি, কি আত্মার মধ্যে কি বিশ্বের মধ্যে, বিস্ময়ের অস্ত দেখি না। আমি জড় নাম দিয়া, সসীম নাম দিয়া, কোনো জিনিসকে এক পাশে ঠেলিয়া রাখিতে পারি নাই। এই সীমার মধ্যেই, এই প্রত্যক্ষের মধ্যেই, অনস্তের যে প্রকাশ তাহাই আমার কাছে অসীম বিস্ময়াবহ । আমি এই জলস্থল তরুলত পশুপক্ষী চন্দ্রস্থর্য দিনরাত্রির মাঝখান দিয়া চোখ মেলিয়া চলিয়াছি, ইহা আশ্চর্য। এই জগৎ তাহার অণুতে পরমাণুতে, তাহার প্রত্যেক ধূলিকণায় আশ্চর্য। আমাদের পিতামহগণ যে অগ্নিবায়ুস্বৰ্ষচন্দ্র-মেঘবিদ্যুৎকে দিব্যদৃষ্টি দ্বারা দেখিয়াছিলেন, তাহারা যে সমস্তজীবন এই অচিন্তনীয় বিশ্বমহিমার মধ্য দিয়া সজীব ভক্তি ও বিস্ময় লইয়া চলিয়া গিয়াছিলেন, বিশ্বের সমস্ত স্পৰ্শই তাহদের অন্তরীণায় নব নব স্তবসংগীত ঝংকৃত করিয়া তুলিয়াছিল—ইহা আমার অস্তঃকরণকে স্পর্শ করে। স্থৰ্যকে যাহার। অগ্নিপিগু বলিয়া উড়াইয়া দিতে চায় তাহারা যেন জানে যে, অগ্নি কাহাকে বলে ! পৃথিবীকে যাহারা 'জলরেখাবলয়িত মাটির গোলা বলিয়া স্থির করিয়াছে তাহারা যেন মনে করে যে, জলকে জল বলিলেই সমস্ত জল বোঝা গেল এবং মাটিকে মাটি বলিলেই সে মাটি হইয়া যায় !