পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8 ● রবীন্দ্র-রচনাবলী তখন ভোরবেলায় অম্পষ্টের মধ্যে স্পষ্ট ফুটে উঠতে চাচ্ছিল, সেইদিনের কথা মনে পড়ে। সেই অন্ধকারের সঙ্গে আলোর প্রথম শুভদৃষ্টি ; প্রভাতের বাণীবন্ত সেদিন আমার মনে তার প্রথম বাধ ভেঙেছিল, দোল লেগেছিল চিত্তসরোবরে । ভালো করে বুঝি বা না বুঝি, বলতে পারি বা না পারি, সেই বাণীর আঘাতে বাণীই জেগেছে। বিশ্বে বিচিত্রের লীলায় নানা স্বরে চঞ্চল হয়ে উঠছে নিখিলের চিত্ত, তারই তরঙ্গে বালকের চিত্ত চঞ্চল হয়েছিল, আজও তার বিরাম নেই। সত্তর বৎসর পূর্ণ হল, আজও এ চপলতার জন্য বন্ধুরা অম্বুযোগ করেন, গাম্ভীর্যের ক্রটি ঘটে। কিন্তু বিশ্বকৰ্মার ফর্মাশের যে অস্ত নেই । তিনি যে চপল, তিনি যে বসন্তের অশাস্ত সমীরণে অরণ্যে অরণ্যে চিরচঞ্চল। গাম্ভীর্ষে নিজেকে গড়খাই করে আমি তো দিন খোওয়াতে পারি নে । এই সত্তর বৎসর নানা পথ আমি পরীক্ষা করে দেখেছি, আজ আমার আর সংশয় নেই, আমি চঞ্চলের লীলাসহচর। আমি কী করেছি, কী রেখে যেতে পারৰ সে কথা জানি নে । স্থায়িত্বের আবদার করব না । খেলেন তিনি কিন্তু আসক্তি রাখেন না—যে খেলাঘর নিজে গড়েন তা আবার নিজেই ঘুচিয়ে দেন । কাল সন্ধ্যাবেলায় এই আম্রকাননে যে আল্পনা দেওয়া হয়েছিল চঞ্চল তা এক রাত্রের ঝড়ে ধুয়ে মুছে দিয়েছেন, আবার তা নতুন করে আঁকতে হল । তার খেলাঘরের যদি কিছু খেলনা জুগিয়ে দিয়ে থাকি তা মহাকাল সংগ্রহ করে রাখবেন এমন আশা করি নে। ভাঙা খেলনা আবর্জনার ভূপে যাবে। যতদিন বেঁচে আছি সেই সময়টুকুর মতোই মাটির ভাড়ে যদি কিছু আনন্দরস জুগিয়ে থাকি সেই যথেষ্ট । তার পরের দিন রসও ফুরোবে, ভাড়ও ভাঙবে, কিন্তু তাই বলে ভোজ তো দেউলে হবে না। সত্তর বৎসর পূর্ণ হবার দিন, আজ আমি রসময়ের দোহাই দিয়ে সবাইকে বলি যে, আমি কারো চেয়ে বড়ো কি ছোটে৷ সেই ব্যর্থ বিচারে খেলার রস নষ্ট হয় ; পরিমাপকের দল মাপকাঠি নিয়ে কলরব করছে, তাদেরকে ভোলা চাই। লোকালয়ে খ্যাতির যে হরির লুঠ ধুলোয় ধুলোয় লোটায় তা নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে চাই নে । মজুরির হিসেব নিয়ে চড়া গলায় তর্ক করবার বুদ্ধি যেন আমার না ঘটে। এই আশ্রমের কর্মের মধ্যেও যেটুকু প্রকাশের দিক তাই আমার, এর ৰে যন্ত্রের দিক যন্ত্রীরা তা চালনা করছেন। মানুষের আত্মপ্রকাশের ইচ্ছাকে জামি ৰূপ দিতে চেয়েছিলাম। সেইজন্যেই তার রূপভূমিকার উদ্দেশে একটি তপোবন पूंtजहि । নগরের ইটকাঠের মধ্যে নয়, এই নীলাকাশ উদয়াস্তের প্রাঙ্গণে ७हे शङ्कवांच्च बांजकবালিকাদের লীলাসহচর হতে চেয়েছিলাম। এই আশ্রমে প্রাণসম্মিলনের ৰে কল্যাণময় স্বঙ্গর রূপ জেগে উঠছে সেটিকে প্রকাশ করাই আমার কাজ। এর বাইরের