পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२४°8 রবীন্দ্র-রচনাবলী করেছিলুম তখন আমার অন্তরাত্মা আপন আনন্মে সেই-সকল সুখদু:খের বিচিত্র আভাস অন্তঃকরণের মধ্যে সংগ্রহ করে মাসের পর মাস বাংলার যে পলীচিত্র রচনা করেছিল, তার পূর্বে আর কেউ তা করে নি। কারণ, স্বষ্টিকর্তা তার রচনাশালায় একলা কাজ করেন। সে বিশ্বকৰ্মারই মতন আপনাকে দিয়ে রচনা করে। সেদিন কবি যে পলীচিত্র দেখেছিল নিঃসন্দেহ তার মধ্যে রাষ্ট্রক ইতিহাসের আঘাত-প্রতিঘাত ছিল। কিন্তু তার স্বষ্টিতে মানবজীবনের সেই স্বথদুঃখের ইতিহাস বা সকল ইতিহাসকে অতিক্রম করে বরাবর চলে এসেছে কৃষিক্ষেত্রে, পঙ্গীপার্বণে, আপন প্রাত্যহিক স্থখছুঃখ নিয়ে— কখনো-বা মোগলরাজত্বে কখনো-বা ইংরেজরাজত্বে তার অতি সরল মানবত্বপ্রকাশ নিত্য চলেছে— সেইটেই প্রতিবিম্বিত হয়েছিল ‘গল্পগুচ্ছে’, কোনো সামস্তুতন্ত্র নয়, কোনো রাষ্ট্রতন্ত্র নয়। এখনকার সমালোচকেরা যে বিস্তীর্ণ ইতিহাসের মধ্যে অবাধে সঞ্চরণ করেন তার মধ্যে অন্তত বারো-আনা পরিমাণ আমি জানিই নে। বোধ করি, সেইজন্যই আমার বিশেষ করে রাগ হয়। আমার মন বলে, ‘দূর হোক গে তোমার ইতিহাস । হাল ধরে আছে আমার স্বষ্টির তরীতে সেই আত্মা স্বার নিজের প্রকাশের জন্য পুত্রের স্নেহ প্রয়োজন, জগতের নানা দৃপ্ত নানা মুখদুঃখকে যে আত্মসাৎ করে বিচিত্র রচনার মধ্যে আনন্দ পায় ও আনন্দ বিতরণ করে। জীবনের ইতিহাসের সব কথা তো বলা হল না, কিন্তু সে ইতিহাস গৌণ। কেবলমাত্র স্বষ্টিকর্তা মানুষের আত্মপ্রকাশের কামনায় এই দীর্ঘ যুগযুগান্তর তারা প্রবৃত্ত হয়েছে। সেইটেকেই বড়ো করে দেখো যে ইতিহাস স্বষ্টিকর্তা-মানুষের সারধ্যে চলেছে বিরাটের মধ্যে— ইতিহাসের অতীতে সে, মানবের আত্মার কেন্দ্রস্থলে । আমাদের উপনিষদে এ কথা জেনেছিল এবং সেই উপনিষদের কাছ থেকে আমি যে বাণী গ্রহণ করেছি সে আমিই করেছি, তার মধ্যে আমারই কর্তৃত্ব । শান্তিনিকেতন। মে ১৯৪১ জাখিন ১৩৪৮ সত্য ও বাস্তব মাছুয আপনাকে ও আপনার পরিবেষ্টন বাছাই করে নেয় নি। সে তার পড়েপাওয়া ধন। কিন্তু সঙ্গে আছে মামুষের মন ; সে এতে খুশি হয় না। লে চায় মনের মতোকে। মাহ্য আপনাকে পেয়েছে আপনিই, কিন্তু মনের-মতোকে অনেক সাধনায় বানিয়ে নিতে হয়। এই তার মনের-মতোর ধারাকে দেশে দেশে মানুষ মান রূপ দিয়ে বহন করে এসেছে। নিজের স্বভাবত্তে পাওনার চেয়ে এর মূল্য তার কাছে