পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఇపెbr রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রবল করে তোলা। জাতিভেদ, ধর্মবিরোধ, মূঢ় সংস্কারের আবর্তে যত দিন আমরা চালিত হতে থাকব ততদিন কার সাধ্য আমাদের মুক্তি দেয়। কেবল ভোটের সংখ্যা এবং পরস্পরের স্বত্বের চুলচের হিসাব গণনা করে কোনো জাত দুৰ্গতি থেকে উদ্ধার পায় না। যে জাতির সামাজিক ভিত্তি বাধায় বিরোধে শতছিদ্র হয়ে আছে, যার পঞ্জিকায় ঝুড়ি ঝুড়ি আবর্জন বহন করে বেড়ায়, বিচারশক্তিহীন মূঢ় চিত্তে বিশেষ ক্ষণের বিশেষ জলে পুরুষানুক্রমিক পাপক্ষালন করতে ছোটে, যারা আত্মবুদ্ধি-আত্মশক্তির অবমাননাকে আপ্তবাক্যের নাম দিয়ে অাদরে পোষণ করছে, তারা কখনো এমন সাধনাকে স্থায়ী ও গভীর ভাবে বহন করতে পারে না যে সাধনায় অস্তরে বাহিরে পরাসত্বের বন্ধন ছেদন করতে পারে, যার দ্বারা স্বাধীনতার দুরূহ দায়িত্বকে সকল শত্রুর হাত থেকে দৃঢ় শক্তিতে রক্ষা করতে পারে। মনে রাখা চাই, বাহিরের শত্রুর সঙ্গে সংগ্রাম করতে তেমন বীর্ষের দরকার হয় না, আপন অন্তরের শক্রর সঙ্গে যুদ্ধ করাতেই মহন্তত্বের চরম পরীক্ষা। আজ র্যাকে আমরা শ্রদ্ধা করছি এই পরীক্ষায় তিনি জয়ী হয়েছেন ; তার কাছ থেকে সেই দুরূহ সংগ্রামে জয়ী হবার সাধনা যদি দেশ গ্রহণ না করে তবে আজ আমাদের প্রশংসাবাক্য, উৎসবের আয়োজন সম্পূর্ণ ই ব্যর্থ হবে। আমাদের সাধনা আজ আরম্ভ হল মাত্র। দুর্গম পথ আমাদের সামনে পড়ে রয়েছে । শাস্তিনিকেতন অগ্রহায়ণ ১৩৩৮ ১৫ আশ্বিন ১৩৩৮ চৌষ্ঠা আশ্বি স্থধের পূর্ণগ্রাসের লগ্নে অন্ধকার বেমন ক্রমে ক্রমে দিনকে আচ্ছন্ন করে তেমনি আজ মৃত্যুর ছায়া সমস্ত দেশকে আবৃত করছে। এমন সর্বদেশব্যাপী উৎকণ্ঠ ভারতের ইতিহাসে ঘটে নি, পরম শোকে এই আমাদের মহংসাত্ত্বনা । দেশের আপামর সাধারণকে আজকের দিনের বেদন স্পর্শ করেছে। ধিনি স্বদীর্ঘকাল দুঃখের তপস্তার মধ্য দিয়ে সমস্ত দেশকে যথার্থ ভাবে, গভীর ভাবে আপন করে নিয়েছেন, সেই মহাত্মা আজ আমাদের সকলের হয়ে মৃত্যুৰত গ্রহণ করলেন। দেশকে অস্ত্রশস্ত্র সৈন্যসামন্ত নিয়ে বারা বাহুবলে অধিকার করে, স্বত বড়ো হোক-না তাদের প্রতাপ, যেখানে দেশের প্রাণবান সত্তা সেখানে তাদের প্রবেশ অবরুদ্ধ।