পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্রমের রূপ ও বিকাশ פ לס নিরলস হতে পারে এবং সেইসঙ্গেই সাধারণের মুখ স্বাস্থ্য স্থবিধ -বিধানের কর্তব্যে ছাত্রেরা যেন আনন্দ পেতে শেখে এই আমার কামনা । আমাদের দেশে ছেলেদের আত্মকর্তৃত্বের বোধকে অস্ববিধাজনক জাপদজনক ও ঔদ্ধত্য মনে করে সর্বদা দমন করা হয়। এতে করে পরনির্ভরতার লজা তাদের চলে স্বায়, পরের প্রতি দাবির আবদার তাদের বেড়ে যায়, ভিক্ষুকতার ক্ষেত্রেও তাদের অভিমান প্রবল হতে থাকে, আর পরের ক্রটি নিয়ে কলহ করেই তারা আত্মপ্রসাদ লাভ করে। এই লজ্জাকর দীনতা চার দিকে সর্বদাই দেখা যাচ্ছে। এর থেকে মুক্তি পাওয়াই চাই। ছাত্রদের স্পষ্ট বোঝা উচিত, যেখানে নালিশ কথায় কথায় মুখর হয়ে ওঠে সেখানে সঞ্চিত আছে নিজেরই লজ্জার কারণ, আত্মসম্মানের বাধা । ক্রটি সংশোধনের দায় নিজে গ্রহণ করার উদ্যম যাদের আছে, খুতখুত করার কাপুরুষতায় তারা ধিক্কার বোধ করে। আমার মনে আছে ছাত্রদের প্রাত্যহিক কাজে যখন আমার যোগ ছিল তখন একদল বয়স্ক ছাত্র আমার কাছে নালিশ করেছিল যে, আল্লভরা বড়ো বড়ো ধাতুপাত্র পরিবেশনের সময় মেঝের উপর দিয়ে টানতে টানতে তার তলা ক্ষয়ে গিয়ে ঘর-ময় নোংরামির স্বষ্টি হয়। আমি বললুম, তোমরা পাচ্ছ দুঃখ, অথচ স্বয়ং এর সংশোধনের চিস্তামাত্র তোমাদের মনে আসে না, তাকিয়ে আছ আমি এর প্রতিবিধান করব। এই সামান্ত কথাটা তোমাদের বুদ্ধিতে আসছে না যে, ঐ পাত্রটার নীচে একটা বিড়ে বেঁধে দিলেই ঘর্ষণ নিবারণ হয় । তার একমাত্র কারণ, তোমরা জান নিক্রিয়ভাবে ভোকৃত্বের অধিকারই তোমাদের আর কর্তৃত্বের অধিকার অন্তের। এইরকম ছেলেই বড়ো হয়ে সকল কর্মেই কেবল খুতখুতের বিস্তার করে নিজের মজ্জাগত অকৰ্মণ্যতার লজ্জাকে দশ দিকে গুঞ্জরিত করে তোলে । এই বিদ্যালয়ের প্রথম থেকেই আমার মনে ছিল আশ্রমের নানা ব্যবস্থার মধ্যে যখাসম্ভব পরিমাণে ছাত্রদের কর্তৃত্বের অবকাশ দিয়ে অক্ষম কলহপ্রিয়তার ঘৃণ্যতা থেকে তাদের চরিত্রকে রক্ষা করব। উপকরণের বিরলতা নিয়ে অসংগত ক্ষোভের সঙ্গে অসন্তোষ-প্রকাশের মধ্যেও চরিত্রদৌর্বল্য প্রকাশ পায়। আয়োজনের কিছু অভাব থাকাই ভালো, অভ্যস্ত হওয়া চাই স্বরে, অনায়াসে প্রয়োজনের জোগান দেওয়ার দ্বারা ছেলেদের মনটাকে আছরে করে তোলা তাদের ক্ষতি করা। সহজেই তারা যে এত কিছু চায় তা নয়, তারা আত্মতৃপ্ত ; আমরাই বয়স্কলোকের চাওয়াটা কেৰলি তাদের উপর চাপিয়ে তাদেরকে বস্তুর নেশী-গ্ৰস্ত করে তুলি। গোড়া থেকেই শিক্ষার প্রয়োজন এই কথা ভেবে যে, কত জয় নিয়ে চলতে পারে। শরীর-মনের শক্তির সম্যকৃরূপে চর্চা সেইখানেই ভালো করে