পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२० রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বাক্ট আমি যাবার পূর্বে দেশকে সঁপে দিতে পারি। শ্রদ্ধয়া দেয়ম্ যেমন, তেমনি শ্রদ্ধয়া আদেয়ম্। যেমন শ্রদ্ধায় দিতে চাই, তেমনি শ্রদ্ধায় একে গ্রহণ করতে হবে। এই দেওয়া-নেওয়া যেদিন পূর্ণ হবে সেদিন আমার সারা জীবনের কর্মসাধনার এই ক্ষেত্র পূর্ণতার রূপ লাভ করবে। ৮ পৌষ ১৩৪৫ মাঘ ১৩৪৫ )ని অনেক দিন পরে আজ আমি তোমাদের সম্মুখে এই মন্দিরে উপস্থিত হয়েছি । অত্যন্ত সংকোচের সঙ্গেই আজ এসেছি। এ কথা জানি যে, দীর্ঘকালের অনুপস্থিতির ব্যবধানে আমার বহুকালের অনেক সংকল্পের গ্রন্থি শিথিল হয়ে এসেছে। যে কারণেই হোক, তোমাদের মন এখন আর প্রস্তুত নেই আশ্রমের সকল অনুষ্ঠানের সকল কর্তব্যকর্মের অন্তরের উদ্দেগুটি গ্রহণ করতে, এ কথা অস্বীকার করে লাভ নেই । এর জন্তে শুধু তোমরা নও, আমরা সকলেই দায়ী। আজ মনে পড়ছে চল্লিশ বৎসর পূর্বের একটি দিনের কথা। বাংলার নিভৃত এক প্রাস্তে আমি তখন ছিলাম পদ্মানদীর নির্জন তীরে । মন যখন সে দিকে তাকায়, দেখতে পায় যেন এক দূর যুগের প্রত্যুষের আভা । কখন এক উদবোধনের মন্ত্র হঠাৎ এল আমার প্রাণে । তখন কেবলমাত্র কবিতা লিখে দিন কাটিয়েছি ; অধ্যয়ন ও সাহিত্যালোচনার মধ্যে ডুবেছিলাম, তারই সঙ্গে ছিল বিষয়কর্মের বিপুল বোঝা । কেন সেই শাস্তিময় পল্পৗত্রর স্নিগ্ধ আবেষ্টন থেকে টেনে নিয়ে এল আমাকে এই রৌদ্রদগ্ধ মরুপ্রাস্তরে তা বলতে পারি না । এখানে তখন বাইরে ছিল সব দিকেই বিরলতা ও বিজনতা, কিন্তু সব সময়েই মনের মধ্যে ছিল একটি পরিপূর্ণতার আশ্বাস। একাগ্রচিত্তে সর্বদা আকাঙ্ক্ষা করেছি, বর্তমান কালের তুচ্ছতা ইতরতা প্ৰগলভত সমস্ত দূর করতে হবে। যাদের শিক্ষাদানের তার গ্রহণ করেছি, ভারতের যুগান্তরব্যাপী সাধনার অমৃত উৎসে তাদের পৌঁছে দিতে পারব, এই আশাই ছিল অস্তরের গভীরে । কতদিন এই মন্দিরের সামনের চাতালে ফুটি-একটি মাত্র উপাসক নিয়ে সমবেত হয়েছি— অবিরত চেষ্টা ছিল স্থপ্ত প্রাণকে জাগাবার। তারই সঙ্গে আরো চেষ্টা ছিল