পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বভারতী 8२> ছেলেদের মনে তাদের স্বাধীন কর্মশক্তি ও মননশক্তিকে উদবুদ্ধ করতে। কোনোদিনই খওভাবে আমি শিক্ষা দিতে চাই নি। ক্লাসের বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থায় তাদের শিক্ষার সমগ্রতাকে আমি কখনো বিপর্যস্ত করি নি । সেদিনের সে আয়োজন অন্ধ-অনুষ্ঠানের দ্বারা স্নান ছিল না, অপমানিত ছিল না অভ্যাসের ক্লাস্তিতে। এমন কোনো কাজ ছিল না যার সঙ্গে নিবিড় যোগ ছিল না আশ্রমের কেন্দ্রস্থলবর্তী শ্রদ্ধার একটি মূল উৎসের সঙ্গে স্বানপান-আহারে সেদিনের সমগ্র জীবনকে অভিষিক্ত করেছিল এই উৎস। শাস্তিনিকেতনের আকাশবাতাস পূর্ণ ছিল এরই চেতনায় । সেদিন কেউ একে অবজ্ঞা করে অন্তমনস্ক হতে পারত না । ية আজ বার্ধক্যের ভাটার টানে তোমাদের জীবন থেকে দূরে পড়ে গেছি। প্রথম যে আদর্শ বহন করে এখানে এসেছিলুম, আমার জীর্ণ শক্তির অপটুতা থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে নিজের হাতে বহন করবার আনন্দিত উদ্যম কোথাও দেখতে পাচ্ছি নে। মনে হয়, এ যেন বর্তমান কালেরই বৈশিষ্ট্য। সবকিছুকে সন্দেহ করা, অপমান করা, এতেই যেন তার স্পর্ধা । তারই তো বীভৎস লক্ষণ মারীবিস্তার করে ফুটে উঠেছে দেশে বিদেশে আজকের দিনের রাষ্ট্রে সমাজে, বিদ্রুপ করছে তাকে যা মানব-সভ্যতার চিরদিনের সাধনার সামগ্ৰী । চল্লিশ বৎসর পূর্বে যখন এখানে প্রথম আসি তখন আশ্রমের আকাশ ছিল নির্মল । কেবল তাই নয়, তখন বিষবাষ্প ব্যাপ্ত হয় নি মানবসমাজের দিগ দিগন্তে । আজ আবার আসছি তোমাদের সামনে যেন বহুদূরের থেকে। আর-একবার মনে পড়ছে এই আশ্রমে প্রথম প্রবেশ করবার দীর্ঘ বন্ধুর পথ। বিরুদ্ধ ভাগ্যের নির্মমতা ভেদ করে সেই-ষে পথযাত্রা চলেছিল সম্মুখের দিকে তার দুঃসহ দুঃখের ইতিহাস কেউ জানবে না । আজ এসেছি সেই দুঃখস্থতির ভিতর দিয়ে। উৎকষ্ঠিত মনে তোমাদের মধ্যে খুঁজতে এলাম তার সার্থকতা । আধুনিক যুগের শ্রদ্ধাহীন স্পর্ধা-দ্বারা এই তপস্তাকে মন থেকে প্রত্যাখ্যান কোরো না— একে স্বীকার করে নাও । ইতিহাসে বিপর্যয় বহু ঘটেছে, সভ্যতার বহু কীতিমন্দির যুগে যুগে বিধ্বস্ত হয়েছে, তৰু মানুষের শক্তি আজও সম্পূর্ণ লোপ পায় নি। সেই ভরসার পরে ভর করে মজমান তরী -উদ্ধারচেষ্টা করতে হবে, নতুন হাওয়ার পালে সে আবার যাত্রা শুরু করবে। কালের স্রোত বর্তমান যুগের নবীন কর্ণধারদেরকেও ভিতরে ভিতরে ষে এগিয়ে নিয়ে চলেছে তা সব সময় তাদের অনুভূতিতে পৌছয় না। একদিন যখন প্ৰগলভ তর্কের এবং বিদ্ৰুপমুখর অট্টহাস্তের ভিতর দিয়ে তাদেরও বয়সের অন্ধ বেড়ে Հ ՊիՀԵ