পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

848 রবীন্দ্র-রচনাবলী । সময় বহিয়া যায়। তার পরে জাকাবাক সীমানায় হাল বারবার ঘুরাইয়া লইতে গোরুর অনেক পরিশ্রম মিছা নষ্ট হয়। যদি প্রত্যেক চাষ। কেবল নিজের ছোটে জমিটুকুকে অন্য জমি হইতে সম্পূর্ণ আলাদা করিয়া না দেখিত, যদি সকলের জমি এক করিয়া সকলে একযোগে মিলিয়া চাষ করিত, তবে অনেক হাল কম লাগিত, অনেক বাজে মেহন্নত বাচিয়া যাইত। ফসল কাট৷ হইলে সেই ফসল প্রত্যেক চাষার ঘরে ঘরে গোলায় তুলিবার জন্য স্বতন্ত্র গাড়ির ব্যবস্থা ও স্বতন্ত্র মজুরি আছে ; প্রত্যেক গৃহস্থের স্বতন্ত্র গোলাম্বর রাখিতে হয় এবং স্বতন্ত্রভাবে বেচিবার বন্দোবস্ত করিতে হয় । যদি অনেক চাষী মিলিয়া এক গোলায় ধান তুলিতে পারিত ও এক জায়গা হইতে বেচিবার ব্যবস্থা করিত তাহ হইলে অনেক বাজে খরচ ও বাজে পরিশ্রম বাচিয়া যাইত। বার বড়ো মূলধন আছে তার এই সুবিধা থাকাতেই সে বেশি মুনফা করিতে পারে, খুচরো খুচরো কাজের যে-সমস্ত অপব্যয় এবং অসুবিধা তাহা তার বাচিয়া যায়। যত অল্প সময়ে যে যত বেশি কাজ করিতে পারে তারই জিত। এইজন্তই মাস্থ্য হাতিয়ার দিয়া কাজ করে। হাতিয়ার মানুষের একটা হাতকে পাচ-দশটা হাঁতের সমান করিয়া তোলে। যে অসভ্য শুধু হাত দিয়া মাটি আঁচড়াইয়া চাষ করে তাহাকে হলধারীর কাছে হার মানিতেই হইবে । চাষবাস, কাপড়-বোনা, বোঝা-বহা, চলাফের, তেল বাহির করা, চিনি তৈরি করা প্রভৃতি সকল কাজেই মাস্থ্য গায়ের জোরে জেতে নাই, কল-কৌশলেই জিতিয়াছে। লাঙল, তাত, গোরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, ঘানি প্রভৃতি সমস্তই মানুষের সময়ের পরিমাণ কমাইয়া কাজের পরিমাণ বাড়াইয়াছে। ইহাতেই মানুষের এত উন্নতি হইয়াছে, নহিলে মানুষের সঙ্গে বনমানুষের বেশি তফাত থাকিত না । এইরূপে হাতের সঙ্গে হাতিয়ারে মিলিয়া আমাদের কাজ চলিতেছিল। এমন সময় বাষ্প ও বিদ্যুতের যোগে এখনকার কালের কল-কারখানার স্মৃষ্টি হইল। তাহার ফল হইয়াছে এই যে, যেমন একদিন হাতিয়ারের কাছে শুধু হাতকে হার মানিতে হইয়াছে তেমনি কলের কাছে আজ শুধু-হাতিয়ারকে হার মানিতে হইল। ইহা লইয়া তই কান্নাকাটি করি, কপাল চাপড়াইয়া মরি, ইহার আর উপায় নাই । এ কথা আজ আমাদের চাষীদেরও ভাবিবার দিন আসিয়াছে। নহিলে তাহারা বাচিবে না। কিন্তু এসব কথা পরের কারখানাঘরের দরজার বাহিয়ে দাড়াইয়া ভাব ৰায় না। নিজে হাতে-কলমে ব্যবহার করিলে তবে স্পষ্ট বোঝা যায়। রোপজামেরিকার সকল চাষীই এই পথেই হুহু করিয়া চলিয়াছে। তাহার কলে জাবাদ করে, কলে ফসল কাটে, কলে জাট বাধে, কলে গোল বোঝাই করে। ইহার