পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৩২ রবীন্দ্র-রচনাবলী সমবায়ে বিস্তার আয়তন প্রশস্ত হয়ে ওঠে। শহরে, যেখানে সমাজের চাপ অতিদ্বনিষ্ঠ নয়, সেখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্ৰ স্থযোগ পায়, মানসশক্তি একটা সাধারণ অাদর্শের অস্থচ সমতলত ছাড়িয়ে উঠতে থাকে। এই কারণেই বুদ্ধির জড়তা ও সংকীর্ণতা সকল দেশেই সকল কালেই গ্রাম্যতার নামান্তর হয়ে আছে। শহরে মানুষ আপন কর্মোঙ্কমকে কেন্দ্রীভূত করে ; তার প্রয়োজন আছে। আমাদের দেহে প্রাণশক্তি যেমন এক দিকে ব্যাপ্ত, তেমনি আবার এক এক জায়গায় তা বিশেষ ও বিচিত্ৰ -ভাবে সংহত। নিয়শ্রেণীর জীবদেহে এই মর্মস্থানগুলি সংহত হয়ে ওঠে নি। দেহবিকাশের উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্ক ফুসফুস হৃৎপিও পাকযন্ত্র বিশেষ বিশেষ জেহুক্রিয়ার স্ব স্ত্র যন্ত্র হয়ে উঠল। এইগুলিকে শহরের সঙ্গে তুলনা করা যায়। শহরগুলি লোকালয়ের বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনসাধনের কেন্দ্র, মামুষের উদ্যম এক এক স্থানে বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে সংহত হয়ে তাদের স্বষ্টি করেছে। পূর্বকালে ধনস্তষ্টি প্রভৃতির প্রয়োজন-সাধনে যন্থের হাত ছিল অতি সামান্তই। তখনকার যন্ত্রগুলির সঙ্গে মানুষের শরীর-মনের যোগ সর্বক্ষণ অব্যবহিত ছিল। সেইজন্তে তার থেকে যা উৎপন্ন হতে পারত তা ছিল পরিমিত, আর তার মুনফা বিকট প্রকাও ছিল না। সুতরাং তখন পণ্যরচনায় কর্মশক্তির আনন্দটা ছিল প্রধান, কর্মফলের লোভটা তার চেয়ে খুব বড়ো হয়ে ওঠে নি। তাই তখনকার নগরগুলি মানুষের কীর্তির আনন্দরূপ গ্রহণ করতে পারত । অন্যান্য সকল রিপুর মতোই লোভট। সমাজবিরোধী প্রবৃত্তি। এইজন্তেই মাস্থ্য তাকে রিপু বলেছে। বাইরে থেকে ডাকাত ৰেমন লোকালয়ের রিপু, ভিতর থেকে লোভটা তেমনি । যতক্ষণ এই রিপু পরিমিত থাকে ততক্ষণ এতে করে ব্যক্তিস্বাতস্থ্যের কর্মোস্তম বাড়িয়ে তোলে, অথচ সমাজনীতিকে সেটা ছাপিয়ে যায় না। কিন্তু লোভের কারণটা দি অত্যন্ত প্রবল ও তার চরিতার্থতার উপায় অত্যন্ত বিপুল শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তবে সমাজনীতি আর তাকে সহজে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। আধুনিক কালে ধন্ত্রের সহযোগে কর্মের শক্তি যেমন বহুগুণিত, তেমনি তার লাভ বন্ধ অঙ্কের, আর সেই সঙ্গে সঙ্গে তার লেtভ । এতে করেই ব্যক্তিস্বার্থের সঙ্গে সমাজস্বার্থের সামগ্ৰত টলমল করে উঠছে। দেখতে দেখতে চারি দিকে কেবল লড়াই ব্যাপ্ত হয়ে চলেছে। এইরকম অবস্থায় গ্রামের সঙ্গে শহরের একান্নবর্তিত চলে যায়, শহর গ্রামকে কেবল শোষণ করে, কিছু ফিরিয়ে দেয় না। জাজ গ্রামের আলো নিবল। শহরে কৃত্রিম জালে৷ জলঙ্গ— সে জালোয় স্থৰ্ব চন্দ্র নক্ষত্রের সংগীত নেই। প্রতি পূর্যোদয়ে ৰে প্ৰণতি ছিল, সূর্যান্তে ৰে জান্নতির প্রীপ