পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্লীপ্রকৃতি &br● কথাই আমি বলেছিলুম; যখন মনে হয়েছিল যে, সময় এসেছে। সময় এসেছিল, সে শুভ সময় চলে গিয়েছে। তখন আমার যৌবন ছিল ; সব বিরুদ্ধতার সামনে দাড়িয়েই আমি এ কথা বলেছিলুম, কেউ গ্রহণ করলে বা না-করলে তা ভ্ৰক্ষেপ না করে । i আবার দিন এসেছে— দেশের লোকের চিত্তে জাগরণের লক্ষণ দেখা দিয়েছে, অনুকূল অবসর এসেছে— এমন সময়ে বয়সের ভগ্নাবশেষের অন্তরালে কী করে চুপ করে বসে থাকি। আবার স্মরণ করিয়ে দেবার সময় এসেছে যে, যদি মনের মধ্যে যথার্থই আনন্দ উপলব্ধি করে থাকো তবে কেবলমাত্র বাক্যবিন্যাসের দ্বারা ভাবরসসম্ভোগে তা অপব্যয় কোরো না। ৰে অনুকূল সময় এসেছে তাকে ফিরিয়ে দিয়ে না তোমার দ্বার থেকে, সকলে মিলে স্মৃষ্টির কাজে প্রবৃত্ত হও। সম্মিলিত দেশের স্বাক্টর মধ্যেই দেশের আত্মা তার গৌরবের স্থান লাভ করেন । বিশ্ববিধাতা বিশ্বকর্ম। আপনার মহিমায় প্রতিষ্ঠিত কোথায়। র্তার বিশ্বস্বষ্টির মধ্যে । তেমনি দেশের আত্মার স্থানও দেশের যত সৃষ্টির কাজের মধ্যে, ভাবসম্ভোগে নয়। সেই বিচিত্র স্বষ্টির শক্তি কি জেগেছে আজ আমাদের মধ্যে— ষে শক্তিতে দেশের অন্নদৈন্ত, স্বাস্থ্যের দৈন্য, জ্ঞানের দৈন্য, সব ঘুচে যাবে? বসন্তকালের অরণ্যে যেমন তরুলতা সব ঐশ্বর্ষে পূর্ণ হয়ে ওঠে, তেমনি কর্মের বিকাশে সমস্ত দেশে একটি বিচিত্র রূপ ব্যাপ্ত হয়ে যায়। সেই লক্ষণ কি দেখতে পাই আমরা। আমি তো সায় পাই নে অস্তরে। ভাবাবেগ আছে, কিন্তু তার মধ্যে কর্মের প্রবর্তন অতি অল্প। কিছু কাজ যে হয় নি তা বলছি নে, কিন্তু সে বড়ো অল্প। আবার সেজন্যে পুরোনো কথা স্মরণ করিয়ে দেবার সময় এসেছে। কিন্তু আমার সময় গিয়েছে, স্বাস্থ্য ভগ্ন হয়েছে, আর অধিক দিন বাকি নেই আমার। তথাপি আমি বেরিয়েছি— পুরস্কারের জন্তে নয়, বরমাল্য নেবার জন্যে নয়, করতালিলাভের জন্যে নয়, সম্মানের ট্যাক্স আদায় করবার জন্তে নয়— দেশকে আপনার জানতে চাচ্ছেন কর্ম-দ্বারা, এইটুকু দেখে যাব আমি। জীবনের অবসানকালে আমি দেখে যেতে চাই যে, সর্বত্র কর্মশক্তি উষ্ঠত হয়েছে। তা যদি না দেখতে পাই তবে জানব যে, আমাদের যে ভাবাবেগ তা সত্য নয়। যেখানে চিত্তের সত্য-উদবোধন হয় সেখানে সত্যকর্ম আপনি প্রকাশ পায়। দেশের মধ্যে কর্ম না দেখে আমাদের চিত্ত বিষন্ন হয়েছে। মরুভূমির মধ্যে আমরা কী দেখতে পাই। খর্বাকৃতি কাটাগাছ, মনসাগাছ দূরে দূরে ছড়ানো রয়েছে ; তাদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই, অাছে বিরুদ্ধ রূপ আর চিত্তের দৈন্য। মরুভূমিতে প্রাণশক্তি কর্মচেষ্টাকে বড়ো করে তুলতে পারে নি, সমস্ত উদ্ভিদ সেখানে দৈন্তে কণ্টকিত। এখনো কি তাই দেখব আমাদের মধ্যে