পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুচনা একদিন এল যখন আর-একটা ধারা, বস্তার মতো মনের মধ্যে নামল । কিছু দিন ধরে দিল তাকে প্লাবিত করে। ইংরেজি অলংকারশাস্ত্রে এই শ্রেণীর ধারাকে বলে হ্যারেটিভ। অর্থাৎ কাহিনী । এর আনন্দবেগ যেন থামতে চাইল না। আমার কাব্যভূগোলে আর-একটা দ্বীপ তৈরি হয়ে উঠল। মনের সেই অবস্থায় কখনো কখনো কাহিনী বড়ো ধারায় উৎসারিত হয়ে নাট্যরূপ নিল । এ-সব লেখার ভালোমন্দ বিচার করা অনাবশ্যক, চিন্তার বিষয় এর মনস্তত্ব। রচনার প্রবৃত্তি অনেক থাকে নিক্রিয় হয়ে, হঠাৎ কোনো একটা প্রান্তে উদবোধিত হলে যারা ছিল অজ্ঞাতবাসে তারা যথোচিত সূত্রে আত্মপ্রকাশ করতে আরম্ভ করে । ভালো করে ভেবে দেখলে দেখা যাবে কথার কবিতাগুলিকে হ্যারেটিভ শ্রেণীতে গণ্য করলেও তারা চিত্রশালা । তাদের মধ্যে গল্পের শিকল গাথা নেই, তারা এক-একটি খণ্ড খণ্ড দৃশু । ছবির অভিমুখিতা বাইরের দিকে, নিরাবিল দৃষ্টিতে স্পষ্ট রেখায়। সেইজন্তে মনের মধ্যে এই ছবির প্রবর্তন এমন বিষয়বস্তুকে স্বভাবত । বেছে নেয় যার ভিত্তি বাস্তবে । এই সন্ধানে এক সময়ে গিয়ে পড়েছিলুম ইতিহাসের রাজ্যে। সেই সময়ে এই বহির্দৃষ্টির প্রেরণা কাব্যে ও নাট্যে ভিড় করে এসেছিল ইতিহাসের সঞ্চয় নিয়ে । এমনি করে এই সময়ে আমার কাব্যে একটা মহল তৈরি হয়ে উঠেছে যার দৃশু জেগেছে ছবিতে, যার রস নেমেছে কাহিনীতে, যাতে রূপের আভাস দিয়েছে নাটকীয়তায় ।