পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী বিদীর্ণ-হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি— প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে, সেই আমগাছ, একি ! বসি তার তলে নয়নের জলে শাস্ত হইল ব্যথা, একে একে মনে উদিল স্মরণে বালক-কালের কথা । সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকে ঘুম, অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম। সেই স্বমধুর স্তন্ধ দুপুর, পাঠশালা-পলায়ন— ভাবিলাম হায় আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন ! সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে, দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে। ভাবিলাম মনে বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা, স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকাতু মাথ । হেনকালে হায় যমদূত-প্রায় কোথা হতে এল মালী, ঝুটি-বাধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি । কহিলাম তবে, ‘আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব— দুটি ফল তার করি অধিকার, এত তারি কলরব ? চিনিল না মোরে নিয়ে গেল ধরে কাধে তুলি লাঠিগাছ— বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে ধরিতেছিলেন মাছ। শুনি বিবরণ ক্রোধে তিনি কন, মারিয়া করিব খুন ! বাবু যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ। আমি কহিলাম, শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয় ? বাবু কহে হেসে, বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয় । অামি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে— তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে ! ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০২