পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যঙ্গকৌতুক \ტვ° আর এও দেখেছি ব্রাহ্মণের ওই পুষ্করিণীটির প্রতি আমার অনেক দিন থেকে লোভ পড়েছিল ; থেকে থেকে আমার কেবলই মনে হত, ও পুকুরটা কোনোমতে ঘিরে না নিতে পারলে মেয়েছেলেদের ভারী অসুবিধে হচ্ছে । একেবারে সাফ মনেই ছিল না যে, আমি ভগীরথ, আর মা গঙ্গা এখনো আমাকে ভুলতে পারেন নি। উঃ, সে জন্মে যে তপিস্তেটা করেছিলুম এ জন্মেকার মিথ্যে মকদ্দমাগুলো তার কাছে লাগে কোথায় ! ( ভক্তমণ্ডলীর প্রতি ঈষৎ সহাস্তে ) ত কি আর আমি জানতেম না । কিন্তু তোমাদের কাছে কিছু ফাস করি নি, কী জানি পাছে বিশ্বাস না কর । কলিকালে দেবতা-ব্রাহ্মণের প্রতি তো কারো ভক্তি নেই। তা ভয় নেই, আমি তোমাদের সব অপরাধ মাপ করলুম – কে গো তুমি ? পায়ের ধুলো ? তা, এই নাও (পদপ্রসারণ)। তুমি কী চাও গা ? পাদোদক ? এসো, এসো। নিয়ে এসো তোমার বাটি— এই নাও— খেয়ে ফেলো । ভোরবেলা থেকে পাদোদক দিতে দিতে আমার সর্দি হয়ে মাথা ভার হয়ে এল – বাছ, তোমরা সব এসো, কিছু ভয় নেই। এতদিন আমাকে চিনতে পার নি সে তো আর তোমাদের দোষ নয়। আমি মনে করেছিলুম কথাটা তোমাদের কাছে প্রকাশ করব না, যেমন চলছে এমনিই চলবে— তোমরা আমাকে তোমাদের মাধব বক্শির ছেলে রুদদুর বক্শি বলেই জানবে। ( ঈষৎ হাস্য ) কিন্তু মা গঙ্গা যখন স্বয়ং ফাস করে দিলেন তখন আর কোতে পারলুম না। কথাটা সর্বত্রই রাষ্ট্র হয়ে গেছে । ও আর কিছুতে ঢাকা রইল না । এই দেখে-না হিন্দুপ্রকাশে কী লিখেছে। ওরে তিনকড়ে, চট করে সেই কাগজখানা নিয়ে আয় তো। এই দেখো— ‘কলিযুগের ভগীরথ এবং ফজুগঞ্জের ভাগীরথী— লোকটার রচনাশক্তি দিব্য আছে। আর সেই পরশুদিনকার বঙ্গতোষিণী-থানা আন দেখি, তাতেও বড়ো বড়ো দুখানা চিঠি বেরিয়েছে। কী? খুজে পাচ্ছিস নে ? হারিয়েছিস বুঝি ? হারায় যদি তো তোর দুখানা হাড় আস্ত রাখব না, তা জানিস ! সেদিন যে তোর হাতে দিয়ে বলে দিলুম আন্মারির ভিতর তুলে রেখে দিস ! পাজি বেটা নচ্ছার বেটা ! হারামজাদা বেটা ! কোথায় আমার কাগজ হারালি বের করে দে ! দে বের করে ! যেখান থেকে পাস নিয়ে আয়, নইলে তোকে পুতে ফেলব বেটা – ও, তাই বটে, আমার ক্যাশবাক্সের ভিতরে তুলে রেখেছিলুম। ওহে হরিভূষণ, পড়ে শুনিয়ে দাও তো, আমার আবার বাংলা পড়াটা ভালো অভ্যেস নেই – কে গা ? মতি গয়লানী বুঝি ? ত, এসো এসো, আমি পায়ের ধুলো দিচ্ছি– দুধের দাম নিতে এসেছ? এখনো শোন নি বুঝি ? নন্দ মুখুঙ্গেকে মা গঙ্গা কি স্বপন দিয়েছেন সে-সব খবর রাখ না ?