পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

も8b" রবীন্দ্র-রচনাবলী বেট, তুই আমার পুকুরের জল দুধের সঙ্গে মিশিয়ে আমাকে বিক্রি করেছিল, সে জলের মাহাত্ম্য জানিস ? কেমন, সবার কাছে কথাটা শুনলি তো ? এখন হিসেবট রেখে পায়ের ধুলো নিয়ে আমার খিড়কির ঘাটে চট করে একটা ডুব দিয়ে আয় গে যা। এই এখনি যাচ্ছি। বেলা হয়েছে সে কি আর জানি নে ? ভাত ঠাগু হয়ে গেল ? তা, কী করব বলে। লোকজন সব অনেক দূর থেকে একটু পায়ের ধুলোর প্রত্যাশায় এসেছে, এরা কি সব নিরাশ হয়ে যাবে ! আচ্ছা, উঠি । ওরে তিনকড়ে, তুই এখানে হাজির থাকিস— যারা আমাকে দেখতে আসবে সব বসিয়ে রাখিস, আমি এলুম বলে। খবরদার ! দেখিস যেন কেউ দর্শন না পেয়ে ফিরে না যায়। বলিস ভগীরথ ঠাকুরের ভোগ হচ্ছে। বুঝলি ? আমি দুটো ভাত মুখে দিয়েই এলুম ব’লে । রেধে, তুই যে একেবারে সিধে খাড়া হয়ে দাড়িয়ে রইলি ! তোর কি মাথা নোয় না নাকি ? তোর তো ভারী অহংকার দেখছি। বেটা, তোর ভক্তির লেশমাত্র নেই। পাজি বেটা, তোকে জুতো মেরে বিদায় করে দেব তা জানিস ? সবাই আমাকে ভক্তি করছে, আর তুই বেটা এতবড়ো খ্ৰীস্টান হয়েছিল যে, আমাকে দেখে প্রণাম করিস নে! তোর পরকালের ভয় নেই ? বেরো আমার বাড়ি থেকে। । ছি বাবা উমেশ, তোমার এত বয়স হল, তবু কার সঙ্গে কিরকম ব্যবহার করতে হয় শিখলে না ? যে ভগীরথ মর্তে গঙ্গা এনেছিলেন র্তার গল্প মহাভারতে পড়েছ তে ? ভুল করছ— ঐরাবত নয়, সে ভগীরথ । আমাকে সেই ভগীরথ বলে জেনে । বুঝেছ ? মনে থাকবে তো? ভগীরথ, ঐরাবত নয়। সেই জায়গাট মাস্টারের কাছে পড়ে নিয়ে। এসে বাবা, তোমার মাথায় পায়ের ধুলো দিয়ে দিই। কই ? ভাত কই ? আমি আর সবুর করতে পারছি নে— দেশ দেশাস্তর থেকে সব লোক আসছে। কী গো গিন্নি, এত রাগ কিসের ? হয়েছে কী ? খিড়কির পুকুরে লোকজনের ভিড় হয়েছে ? নাওয়া, কাপড় কাচা, বাসন মাজা, জল তোলা, সমস্ত বন্ধ হয়েছে ? কী করব বলে । আমি স্বয়ং ভগীরথ হয়ে গঙ্গা থেকে তো কাউকে বঞ্চিত করতে পারি নে। তা হলে আমি এত তপিস্তে করে এত কষ্ট করে গঙ্গা আনলুম কেন ? তোমাদের ময়লা কাপড় কাচবার জন্তে— বটে ; যখন ব্রাহ্মণের সঙ্গে মকদ্দমা করছিলুম তখন তোমরা সেই আশায় বসেছিলে, আসল কথাটা কেবল আমি জানতুম আর মা গঙ্গাই জানতেন — কী ! এতবড়ো আস্পর্ধা— তুই বিশ্বাস করিস নে ! জানিস, তোকে বিয়ে করে তোর চোদপুরুষকে উদ্ধার করেছি। বাপের বাড়ি যাবে ? যাও-না ! মরবার সময় আমার এই গঙ্গায় আসতে দেব না। সেটা