পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শারদোৎসব \99) উপনদ। ছোটাে বলে আমার বাপ মারা গেলে আমি অন্ত দেশ থেকে এই নগরে আশ্রয়ের জন্তে এসেছিলেম। সেদিন শ্রাবণমাসের সকালবেলায় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ছিল, আমি লোকনাথের মন্দিরের এক কোণে দাড়াৰ বলে প্রবেশ করছিলেম। পুরোহিত আমাকে বোধ হয় নীচ জাত মনে করে তাড়িয়ে দিলেন । সেদিন সকালে সেইখানে বসে আমার প্রভু বীণা বাজাচ্ছিলেন। তিনি তখনই মন্দির ছেড়ে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরলেন ; বললেন, এসো বাবা, আমার ঘরে এসো। সেই দিন থেকে ছেলের মতো তিনি আমাকে কাছে রেখে মানুষ করেছেন ; লোকে তাকে কত কথা বলেছে, তিনি কান দেন নি। আমি তাকে বলেছিলেম, প্রভু, আমাকে বীণা বাজাতে শেখান, আমি তা হলে কিছু কিছু উপার্জন ক’রে আপনার হাতে দিতে পারব। তিনি বললেন, বাবা, এ বিদ্যা পেট ভরাবার নয় ; আমার আর-এক বিদ্যা জানা আছে, তাই তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি। এই বলে আমাকে রঙ দিয়ে চিত্র করে পুথি লিখতে শিখিয়েছেন । যখন অত্যন্ত অচল হয়ে উঠত তখন তিনি মাঝে মাঝে বিদেশে গিয়ে বীণা বাজিয়ে টাকা নিয়ে আসতেন । এখানে তাকে সকলে পাগল বলেই জানত . সন্ন্যাসী । সুরসেনের বীণা শুনতে পেলেম না, কিন্তু বাবা উপনন্দ, তোমার কল্যাণে র্তার আর-এক বীণা শুনে নিলুম, এর কুর কোনোদিন ভুলব না – বাবা, লেখো, লেখে । g ... " - , . ছেলেরা। ওই রে, ওই আসছে ! ওই রে লখা, ওই রে লক্ষ্মীপেঁচা দৌড় লক্ষেশ্বর। আ সর্বনাশ ! যেখানটিতে আমি কোঁটাে পুতে রেখেছিলুম ঠিক সেই জায়গাটিতেই যে উপনন্দ বসে গেছে! আমি ভেবেছিলেম ছোড়াটা বোকা বুঝি, তাই পরের ঋণ শুধতে এসেছে ! তা তো নয় দেখছি। পরের ঘাড় ভাঙাই ওর ব্যাবসা । আমার গজমোতির খবর পেয়েছে। একটা সন্ন্যাসীকেও কোথা থেকে জুটিয়ে এনেছে দেখছি। সন্ন্যাসী হাত চেলে জায়গাটা বের করে দেবে - উপনন্দ । উপনন্দ। কী ? # # লক্ষেশ্বর । ওঠ, ওঠ, ওই জায়গা থেকে ! এখানে কী করতে এসেছিস ? উপনন্দ । অমন করে চোখ রাঙাও কেন ? এ কি তোমার জায়গা নাকি ? লক্ষেশ্বর। এটা আমার জায়গা কি না সে খোজে তোমার দরকার কী হে বাপু ? ভারী সেয়ানা দেখছি! তুমি বড়ো ভালোমাহুষটি সেজে আমার কাছে এসেছিলে । আমি বলি সত্যিই বুঝি প্রভুর ঋণশোধ করবার জন্যেই ছোড়াটা আমার কাছে এসেছে- কেননা, সেটা রাজার আইনেও আছে— । উপনন্দ । আমি তো সেইজন্যেই এখানে পুথি লিখতে এসেছি।